Advertisement
E-Paper

জলের ন্যায় কঠিন

দেশের কঠিন সমস্যাগুলির সমাধান লইয়া রাজ্য ও কেন্দ্রের সরকারের শীর্ষ নেতারা আলোচনা করিবেন, ইহাই প্রত্যাশিত। আক্ষেপ, জলের সঙ্কট তীব্র হইবার অন্যতম কারণ সরকার, এমনই মনে করিতেছেন বিশেষজ্ঞরা।

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৯ ০০:৫৫
ছবি এএফপি।

ছবি এএফপি।

দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হইয়া নরেন্দ্র মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন, ২০২৪ সালের মধ্যে সকল গৃহস্থালিতে নলবাহিত জল পৌঁছাইয়া দিবেন। খরাক্রান্ত রাজ্যগুলিতে পানীয় জলের পাত্র লইয়া প্রতীক্ষারত মহিলারা ইহাতে কতটা আশ্বস্ত হইলেন, বলা কঠিন। ভারতের প্রায় অর্ধেকটা জুড়িয়া ভয়ানক খরার প্রকোপ চলিতেছে। মৌসুমি বায়ু বিলম্বিত, প্রাক্-বর্ষা বৃষ্টি হয় নাই বলে ভূগর্ভের জল শুকাইয়াছে, জলাধারে সংগৃহীত জল তলানিতে ঠেকিয়াছে। কর্নাটকে আশি শতাংশ, মহারাষ্ট্রে বাহাত্তর শতাংশ জেলা খরাক্রান্ত। চেন্নাই শহরে জলকষ্টের তীব্রতা পূর্বের সকল অভিজ্ঞতাকে ছাড়াইয়াছে। সংবাদে প্রকাশ, কুয়া হইতে কে জল তুলিতে পারিবে, তাহা লটারি করিয়া স্থির হইতেছে। বহু হোটেল, রেস্তরাঁ, ছাত্রাবাস বন্ধ হইয়াছে, জল বাঁচাইতে চেন্নাই মেট্রো রেল বাতানুকূল যন্ত্র অচল রাখিতেছে। কর্নাটকে স্কুলের ছুটি বর্ধিত হইয়াছে, মহারাষ্ট্রে বহু গ্রামবাসী ঘর ছাড়িয়া শিবিরে বাস করিতেছেন। খরাপীড়িতদের পানীয় জল সরবরাহ করিতে সরকার জলবাহী যান পাঠাইতেছে। অতএব প্রশ্ন, ঘরে ঘরে পৌঁছাইবার জল মিলিবে কোথা হইতে? কেন্দ্র অবশ্য এখনও খরা ঘোষণা করে নাই। সম্ভবত সেই জন্য নবনির্মিত জলশক্তি মন্ত্রকের ভার পাইয়াই মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত দাবি করিয়াছিলেন, দেশের কোথাও খরা নাই। সংবাদমাধ্যম খরার সম্ভাবনাকে বর্ধিত করিয়া দেখাইতেছে। কেন্দ্র অবশ্য তৎপূর্বেই তামিলনাড়ু, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলঙ্গানা রাজ্যকে জলের পরিমিত ব্যবহার করিবার বার্তা পাঠাইয়াছিল। নীতি আয়োগও খরার সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়াছে, তাই তাহার প্রথম বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী খরা মোকাবিলার প্রসঙ্গটি তুলিয়াছেন।

দেশের কঠিন সমস্যাগুলির সমাধান লইয়া রাজ্য ও কেন্দ্রের সরকারের শীর্ষ নেতারা আলোচনা করিবেন, ইহাই প্রত্যাশিত। আক্ষেপ, জলের সঙ্কট তীব্র হইবার অন্যতম কারণ সরকার, এমনই মনে করিতেছেন বিশেষজ্ঞরা। খরা এড়াইতে, সেচ ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করিতে বিপুল ব্যয়ে নানা প্রকল্প নানা সময়ে গৃহীত হইয়াছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে কেবল রাজকোষের টাকাই জলে গিয়াছে, জল মেলে নাই। ক্ষুদ্র ও মাঝারি সেচের পরিকল্পনায় নানা গলদ থাকিবার জন্য প্রাকৃতিক ধারা বাধাপ্রাপ্ত হইয়া নষ্ট হইয়াছে, ভূগর্ভে সঞ্চিত হয় নাই, প্রকল্প-নির্ধারিত পথে বহিয়াও যায় নাই। বৃহৎ সেচ প্রকল্পগুলি সেচের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মিটাইতে পারে নাই, বরং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করিয়াছে, এমন অভিযোগ উঠিয়াছে। অপর পক্ষে, কৃষির উৎপাদন বাড়াইতে গিয়া সরকার যে সকল প্রযুক্তির প্রসার ঘটাইয়াছে, যথা উচ্চফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার, সেগুলি অতিরিক্ত জল দাবি করিতেছে। ভূগর্ভ হইতে অবাধে জল তুলিবার ফলে হেক্টর প্রতি উৎপাদন বাড়িয়াছে, কিন্তু খরাপ্রবণ এলাকাও ক্রমশ বাড়িয়াছে। শহরাঞ্চলগুলিতে দ্রুত নামিতেছে জলস্তর।

নীতি আয়োগের হিসাব, ২০২০ সালে দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দরাবাদ-সহ একুশটি শহরে ভূগর্ভস্থ জলস্তর অত্যন্ত হ্রাস পাইবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের চল্লিশ শতাংশ নাগরিক পানীয় জলের অভাবে কষ্ট পাইবেন। সর্বাপেক্ষা আশঙ্কার কারণ আবহাওয়ার পরিবর্তন। এ বৎসর প্রাক্-বর্ষা বৃষ্টিপাতের পরিমাণ গত পঁয়ষট্টি বৎসরে সর্বনিম্ন। বৃষ্টির জল ধরিবার ব্যবস্থা, ব্যবহৃত জলের পুনর্ব্যবহার, ভূগর্ভস্থ জলের বৃদ্ধি ও তাহার সীমিত ব্যবহার, নদী দূষণে নিয়ন্ত্রণ, সেচে জলের অপচয় রোধ, এমন নানা পদ্ধতি গ্রহণ করিয়াছে সরকার। কিন্তু কাজ হইয়াছে কতটুকু? এক দিকে কৃষকের রোজগার বাড়াইতে সেচ বাড়াইতে হইবে, সকলকে পানীয় জল পৌঁছাইতে হইবে, অপর দিকে জল সংরক্ষণ করিতে হইবে। মোদী সরকারের সম্মুখে কাজটি সহজ নহে।

Drought Water Crisis Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy