আট বৎসর বাদে ফের মহাজগতে মানুষ প্রেরণ করিবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। আগামী বৎসর। এই বারের বৈশিষ্ট্য হইল, প্রেরিত হইবে যে যানগুলি, সেগুলি বাণিজ্যিক। এই কর্মে নাসার সহযোগী হইয়াছে দুইটি বেসরকারি সংস্থা। একটি সংস্থা বিমান নির্মাণ করে, অপরটির কাজ মহাকাশ গবেষণা। তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব লইয়াছে নাসা। যে নভশ্চরেরা ইহাতে সওয়ার হইবেন, তাঁহারাও নাসার কর্মী। এই মার্কিন গবেষণা সংস্থাটি এ যাবৎ কাল মহাকাশে যত যান প্রেরণ করিয়াছে, তাহার সব কয়টিই সরকারি ছিল। নয়া যানটির বৈশিষ্ট্য, ইহা শুধু বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজেই লাগিবে না, ইহার বাণিজ্যিক দিকও বর্তমান। নাসা বা অন্য কোনও সরকার-পোষিত মহাকাশ-গবেষণা সংস্থার ক্ষেত্রে এই বাণিজ্যিক যান বস্তুটি নূতন। আগামী বৎসর যখন ‘বোয়িং সিএসটি-১০০ স্টারলাইনার’ এবং ‘স্পেসএক্স ড্রাগনক্যাপসুল্স’ মহাকাশে যাত্রা করিবে, তখন বাণিজ্য-সম্ভাবনার নূতন দিগন্তও খুলিবে।
গবেষণা জরুরি। তবে কেবল গবেষণা করিয়াই মানুষের নিকট শুভ ফল পৌঁছাইয়া দেওয়া সম্ভব কি না, সেই প্রশ্নও আছে। প্রয়োজন বাণিজ্যের। কারণ, গবেষণার জন্যও অর্থের প্রয়োজন। সেই কারণেই চন্দ্রযানের সহিত ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ এবং ভাড়া দিবার বিষয়টিকেও সমগুরুত্বে বিবেচনা করিতেছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরো। গত শতাব্দীর শীতল যুদ্ধের সময় মার্কিন সরকার বেসরকারি সংস্থার হাতে কিছু দায়িত্ব ছাড়িয়াছিল। ইহার পরে, পৃথিবীর কক্ষপথে কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে গড়িয়া উঠে বেতার এবং দূরদর্শনের ন্যায় জনপ্রিয় গণমাধ্যম, যাহা আর সর্বদা সরকারের অধীন রহে নাই। ২০১৮ সালে বাজারে আসিল বিশ্বের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী এবং সম্পূর্ণ বেসরকারি রকেট ‘ফ্যালকন হেভি’। তবে ইহা কিঞ্চিৎ বেদনারও বটে। বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে বাণিজ্য প্রয়োজনীয় হইলেও তাহাকে অবশ্যম্ভাবী না করিয়া তোলাই সমীচীন। গবেষণা ক্ষেত্রে লাভ-ক্ষতির হিসাবটি দৈনন্দিন ব্যবসার নিরিখে হয় না। আয়-ব্যয় ছাপাইয়া জ্ঞােনর প্রসারণের প্রশ্নটিই প্রধান। গবেষণা সংস্থা নিজের অর্থের সংস্থান না করিতে পারিলে বিজ্ঞানচর্চা আটকাইয়া যাইবে, ইহা কাম্য পরিস্থিতি হইতে পারে না। সুতরাং, বিজ্ঞানে পুঁজির প্রশ্নে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা অবাঞ্ছিত নহে, বস্তুত ক্ষেত্রবিশেষে জরুরি।
পরিচিত ক্ষেত্রে সুযোগ সম্পৃক্তির সীমায় ঠেকিলে বাণিজ্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নূতনতর ক্ষেত্র অন্বেষণ করেন ব্যবসায়ীরা। আপন মহাদেশে বাণিজ্য সম্ভাবনা সীমিত হইয়া পড়াতেই নূতন মহাদেশ অন্বেষণে বাহির হইয়াছিলেন ইউরোপীয় বণিকেরা। উপনিবেশগুলির জন্য তাহার ফল অবিমিশ্র নহে, কিন্তু ইতিহাস যে অগ্রসর হইয়াছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। ইদানীং, বহির্বিশ্বে বাণিজ্যক্ষেত্রের অন্বেষণে কৌতুক জাগে। কারণ যেই স্থলকে নির্বাচন করা হইয়াছে, তাহা মহাশূন্য। প্রশ্ন উঠে, বিশ্বে সম্পৃক্তির সঙ্কট কি এতটাই যে ভূমণ্ডল ছাপাইয়া ক্ষেত্রের সন্ধান করিতে হইতেছে? সাধারণ যুক্তিক্রম দ্বিস্তরীয়। এক, বাণিজ্য বৃদ্ধি করিতে গেলে সাম্রাজ্য বৃদ্ধি প্রয়োজন। দুই, ইহাতে আদানপ্রদান বাড়িলে সভ্যতার উন্নতি। তবে পৃথিবীর পরিচিত ক্রম মহাজগতের উপর চাপাইলে মানবসভ্যতার লাভ কতখানি, প্রশ্ন থাকিবে।