Advertisement
E-Paper

নিউটন ‘বনাম’ আইনস্টাইন

দ্বিতীয় বার শনাক্ত হইয়াছে মহাকর্ষ তরঙ্গ। অতএব আবার উঠিয়াছে সেই তুলনা। আইজাক নিউটন বনাম আলবার্ট আইনস্টাইন। মহাকর্ষ তরঙ্গের অস্তিত্ব নিউটন কল্পনা করিতে পারেন নাই, আইনস্টাইন পারিয়াছিলেন। উদাহরণ দিলে দুই পণ্ডিতের চিন্তার পার্থক্য বুঝা যাইবে।

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৬ ০০:০০

দ্বিতীয় বার শনাক্ত হইয়াছে মহাকর্ষ তরঙ্গ। অতএব আবার উঠিয়াছে সেই তুলনা। আইজাক নিউটন বনাম আলবার্ট আইনস্টাইন। মহাকর্ষ তরঙ্গের অস্তিত্ব নিউটন কল্পনা করিতে পারেন নাই, আইনস্টাইন পারিয়াছিলেন। উদাহরণ দিলে দুই পণ্ডিতের চিন্তার পার্থক্য বুঝা যাইবে। ধরা যাউক, সূর্য অকস্মাৎ তাহার আসন হইতে অন্তর্ধান করিল। অন্যান্য গ্রহের সহিত তন্মুহূর্তে পৃথিবীর কী দশা হইবে? সূর্য নাই বলিয়া আকর্ষণবিহীন পৃথিবী কি আপন কক্ষপথ হইতে পলায়ন করিয়া দিগ্বিদিকে ধাইবে? নাকি অন্তত কিছু ক্ষণ আপন কক্ষপথে আবর্তন করিতে থাকিবে? নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব অনুযায়ী, সূর্যের অন্তর্ধানের খবর অন্যান্য গ্রহের সহিত পৃথিবীও অনতিবিলম্বে পাইবে এবং কক্ষপথ হইতে বিচ্যুত হইবে। আইনস্টাইন জেনারেল রিলেটিভিটি থিয়োরিতে নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্বকে শুধরাইতে সমর্থ হন। রিলেটিভিটি অনুযায়ী, সূর্যের অন্তর্ধানের খবর পৃথিবী সঙ্গে সঙ্গে পাইবে না। ওই খবর পৃথিবীর নিকট পৌঁছাইতে যত ক্ষণ সময় লাগিবে, তত ক্ষণ সূর্যের অন্তর্ধানের খবর না-জানিয়া পৃথিবী আপন কক্ষপথেই বিচরণ করিবে। আইনস্টাইনের তত্ত্বে মহাশূন্যের ধুন্ধুমার ঘটনার সংকেত পৌঁছায় তরঙ্গাকারে, ফলে পৌঁছাইতে সময় ব্যয় হয়। ওই তরঙ্গই গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ। উহা শনাক্ত হওয়ায় দিকে দিকে সেই বার্তা রটি গেল ক্রমে: আইনস্টাইন পাশ, নিউটন ফেল।

পরীক্ষার কষ্টিপাথরে তত্ত্ব যাচাই বিজ্ঞানের শিরোধার্য নিয়ম। আর পরীক্ষায় পাশ-ফেল-এর কথাই যদি উঠে, তবে নিউটন প্রথম ফেল করেন ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে। নক্ষত্রের আলো পৃথিবীতে বক্রপথে পৌঁছায়। নিউটনের হিসাবে ওই বক্রতার মান যত, আইনস্টাইনের হিসাবে তাহার দ্বিগুণ। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে এক পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ কালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের উদ্যোগে নক্ষত্রের আলোর বক্রপথ গণনায় দেখা যায়, আইনস্টাইনের হিসাবই ঠিক। পৃথিবী জুড়িয়া ধন্য ধন্য পড়িয়া যায়। ওই সাফল্যই আইনস্টাইনকে জনারণ্যে জগদ্বিখ্যাত করে। তৎপূর্বে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে পাঁচখানি পেপার লিখিয়া পদার্থবিজ্ঞানে বিপ্লব আনিলেও তৎকালে তাঁহার খ্যাতি সীমিত ছিল বিশেষজ্ঞ মহলে। শ্রেষ্ঠ মস্তিষ্কবান মনুষ্য হিসাবে তাঁহার সর্বময় খ্যাতির সূত্রপাত ১৯১৯ সালে ওই সূর্যগ্রহণ পরীক্ষায়। অতলান্তিকের দুই পারে মুখ্য সংবাদপত্রগুলি ঢক্কানিনাদ সহকারে প্রচার করিয়াছিল আইনস্টাইনের সাফল্য। প্রচারের মূলে ছিল এক সমাজতাত্ত্বিক কারণ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হইয়াছে, ইংল্যান্ডের নিকট জার্মানি পর্যুদস্ত। অথচ এক জন জার্মান বিজ্ঞানীর তত্ত্ব পরীক্ষায় ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের তৎপরতা প্রমাণ করিয়াছিল, গবেষণা জাতিভেদ বা জাতিবৈরের ঊর্ধ্বে।

নিউটন বনাম আইনস্টাইন প্রশ্নে দুই মহাপুরুষের মানসিকতার প্রসঙ্গটি আসিয়া পড়ে। নিউটন ছিলেন অকৃতদার, এক গবেষকের সহিত তাঁহার কিঞ্চিৎ সমকামী সম্পর্ক লইয়া তাঁহার জীবনীকাররা সন্দেহ করিলেও, কেহই নিশ্ছিদ্র তথ্য পরিবেশন করিতে পারেন নাই। এ দিকে আইনস্টাইন দুই বার দারপরিগ্রহ করা ছাড়াও একাধিক প্রণয়-সম্পর্কে লিপ্ত হইয়াছিলেন। গবেষণায় নিউটন গোপনীয়তায় নিতান্ত আগ্রহী ছিলেন, মহাকর্ষ তত্ত্ব আবিষ্কার করিবার পরেও তাহা প্রকাশ করেন নাই। এমনকী, তৎকালে নিন্দিত অ্যালকেমিরও প্রভূত চর্চা করিয়াছিলেন একান্ত গোপনে। ক্যালকুলাস আবিষ্কারের কৃতিত্ব দাবি করিয়া গটফ্রিড লিবনিৎজ-এর সহিত নিউটনের দ্বন্দ্ব তো নিন্দনীয় পর্যায়ে পৌঁছাইয়াছিল। অন্য দিকে আইনস্টাইন গবেষণায় তাঁহার প্রতিদ্বন্দ্বীদের ক্ষমতায় যেমন সদাসন্ত্রস্ত থাকিতেন, তেমনই তাঁহাদের সহিত যোগাযোগও রাখিয়া চলিতেন। তাঁহাদের মানসিকতার এই ফারাক দুই যুগের কারণে কি না, বলা যায় না। তবে চরিত্রের মাপকাঠিতে নিউটন ও আইনস্টাইন যে সমমেরুর ছিলেন না, তাহা লইয়া তর্কের বিশেষ কোনও অবকাশ নাই।

যৎকিঞ্চিৎ

এক জওয়ান সাত বছর নিখোঁজ ছিলেন। সেনাবাহিনী ধরেই নিয়েছিল, তিনি মারা গেছেন। এ বার সেই সৈন্য বাড়ি ফিরে এলেন। জিপ অ্যাক্সিডেন্টে স্মৃতি হারিয়ে গিয়েছিল। হরিদ্বারের রাস্তায় ভিক্ষে করতে গিয়ে বাইকের ধাক্কা খেয়ে সহসা সব মনে পড়ে গেছে। প্রমাণিত: হিন্দি সিনেমা সত্য কথা বলত। আমরা বুঝিনি, হেসেছি। আরও: এ বার থেকে ভ্রষ্টস্মৃতি-রোগীদের বাইকের ধাক্কা দেওয়া হোক। পা-ফা ভেঙে গেলে যাবে, হুইলচেয়ারে বসে তাঁরা ডাইরি তো লিখতে পারবেন!

Newton Einstein
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy