Advertisement
E-Paper

শব্দের অধিকার

ধর্মীয় আচার-আচরণের অধিকার বলিতে ঠিক কী বুঝায়? তাহার সীমাটিই বা কত দূর? ধর্মের নামে যথেচ্ছাচারের বর্তমান যুগে প্রশ্নটি বিশেষ প্রাসঙ্গিক

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

ধর্মীয় আচার-আচরণের অধিকার বলিতে ঠিক কী বুঝায়? তাহার সীমাটিই বা কত দূর? ধর্মের নামে যথেচ্ছাচারের বর্তমান যুগে প্রশ্নটি বিশেষ প্রাসঙ্গিক। শুভবুদ্ধি বলিবে, ধর্মাচরণের নামে কাহারও আইনি তথা স্বাভাবিক অধিকারগুলি লঙ্ঘন করা ন্যায়সঙ্গত হইতে পারে না। প্রত্যেকের নিজ ধর্ম পালনের অধিকার যেমন সংবিধানস্বীকৃত, তেমনই স্বীকৃত এই সত্য যে, একের ধর্মপালন অন্যের মানসিক শান্তি, সুরক্ষাকে বিঘ্নিত করিতে পারে না। কিন্তু ইহা তো কেতাবি কথা। ভারতের মতো দেশে ধর্মীয় উদ‌্‌যাপনের ক্ষেত্রে বিপরীত চিত্রটিরই প্রাধান্য। রাস্তা জুড়িয়া পূজাপাঠ, ডিজে বক্স বাজাইয়া প্রমত্ত নাচগান— কোনওটিতেই আইন মানিবার নামগন্ধও নাই। ইদানীং কালে ধর্মীয় উদ‌্‌যাপনের সঙ্গে শব্দদূষণের এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপিত হইয়াছে। বিসর্জন তো বটেই, নূতন যে সমস্ত পূজাপার্বণের আগমন ঘটিতেছে, তাহাদের প্রতিটিই অত্যন্ত শব্দমুখর। হাওড়ার সালকিয়াতে যেমন প্রতি বৎসর শীতলা পূজার অনুষ্ঠানে দিনভর ডিজে-র তাণ্ডব চলে। পরীক্ষার্থীদের দুর্ভোগ, স্থানীয়দের তীব্র অসুবিধা, বয়স্কদের অসুস্থতা— কোনও
কিছুই ‘ট্র্যাডিশন’ ভাঙিতে পারে নাই। আইনরক্ষকরাও এত দিন নিশ্চুপই থাকিয়াছে।
নিশ্চুপ থাকিবার একটি কারণ অবশ্যই ধর্মীয়। শব্দ নিয়ন্ত্রণার্থে গৃহীত যে কোনও কড়া পদক্ষেপই ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ প্রতিপন্ন হইতে পারে। এবং অনিবার্য ভাবেই তাহাতে রাজনীতির রং লাগিতে পারে। কিন্তু অপর একটি কারণও আছে— শব্দদূষণ যে একটি ঘোরতর মাথাব্যথার কারণ, সেই বিষয়ে এই রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন আশ্চর্য রকমের উদাসীন। ধর্মীয় উৎসব তো বটেই, ‘অ-ধর্মীয়’ কাজকর্মেও নির্ধারিত ডেসিবেলের তোয়াক্কা না করিয়া নির্বিচারে ডিজে বক্স চলে, শব্দবাজি দাপট দেখায়। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী— ধর্মতলায় ধর্না কর্মসূচির ক্ষেত্রে মাধ্যমিক পরীক্ষার কথা মনে রাখিলেও— ‘ছেলেপুলে’দের নানাবিধ বেলাগাম দুষ্টামিতে স্নেহমিশ্রিত প্রশ্রয় দিয়া থাকেন। তাঁহার সহকর্মীরা অনেকেই পাড়ায় পাড়ায় শব্দ-তাণ্ডবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সায় দেন। এমন রাজ্যে এই তাণ্ডব রাতারাতি বন্ধ করিবার সাহস কাহার আছে? সুতরাং, জন্মদিন হইতে বিবাহ, বর্ষবরণ হইতে ক্রিকেটে ভারতের জয়— কানফাটানো হৃদয়কাঁপানো শব্দ হইতে রাজ্যবাসীর পরিত্রাণ নাই।
অতঃ কিম্? উপরমহলের প্রচ্ছন্ন সমর্থন থাকিলে আইন প্রয়োগ করিয়া শব্দদূষণ বন্ধ করা কঠিন ঠিকই। কিন্তু অ-সম্ভব নহে, বিশেষত সম্ভব করিবার কাজটি যদি দায়িত্বশীল নাগরিক নিজ হস্তে তুলিয়া লয়। বিচ্ছিন্ন প্রতিবাদ নহে। দরকার সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিবাদ। যেমনটি সালকিয়ার এলাকাবাসীরা করিয়া দেখাইয়াছেন। শীতলা পূজার মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণ বন্ধ করিতে একযোগে তাঁহারা বিরোধিতা করায় নড়িয়া বসিয়াছে প্রশাসন। নির্ধারিত ডেসিবেল না মানিলে কড়া ব্যবস্থা করিবার আশ্বাস দিয়াছে। ইহাই প্রয়োজন। নাগরিক নিজ অধিকারটি রক্ষায় সংগঠিত হইয়া প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করিলে তবেই প্রশাসন নিজ দায়িত্বরক্ষায় তৎপর হইবে। সালকিয়ায় ইহাই হইয়াছে। আইন না মানিলে ব্যবস্থা করিবার আশ্বাস মিলিয়াছে। তবে না আঁচাইলে বিশ্বাস নাই। এই আশ্বাস সত্যই কার্যকর হইল কি না, সমাজ কিন্তু সে দিকে নজর রাখিবে।

Noise Pollution Salkia Pollution Religion
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy