Advertisement
E-Paper

জুমলার তেল

আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কত, সেই দাম কীভাবে বাড়িয়াছে, এই গোত্রের তথ্যগুলিকে তাঁহারা সযত্নে এড়াইয়া গিয়াছিলেন, কারণ এই কথাগুলি বলিলে আর রাজনীতি হয় না।

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:১৫

অতীত আসিয়া যখন বর্তমানের নিকট তাহার প্রাপ্য দাবি করে, তখনই ‘জুমলা’-র সওদাগরদের বৃহত্তম বিপদ। নরেন্দ্র মোদী সেই প্যাঁচেই পড়িয়াছেন। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের পূর্বে তাঁহার দল বারংবার প্রশ্ন করিয়াছিল, পেট্রল-ডিজেলের দাম এমন আকাশছোঁয়া হয় কেন? উত্তরটিও তাঁহারাই জোগাইয়াছিলেন— ইহা মনমোহন সিংহের ব্যর্থতা। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কত, সেই দাম কীভাবে বাড়িয়াছে, এই গোত্রের তথ্যগুলিকে তাঁহারা সযত্নে এড়াইয়া গিয়াছিলেন, কারণ এই কথাগুলি বলিলে আর রাজনীতি হয় না। ক্ষমতায় আসিলে ডলারের দামকে ৪০ টাকায় নামাইয়া আনা, বিদেশ হইতে কালো টাকা ফিরাইয়া আনিয়া প্রত্যেক দেশবাসীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা ভরিয়া দেওয়ার মতো আরও একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল নরেন্দ্র মোদীর— তেলের দামকে নিয়ন্ত্রণে আনিবেন। দেশব্যাপী ঢেউ তাঁহাকে দিল্লির অধীশ্বর করিয়াছে। তাহার পরও চার বৎসর কাটিয়া গিয়াছে। ডলারের দাম পঁয়ষট্টি টাকার কাছাকাছি। ‘বিদেশের ব্যাংকে জমা থাকা কালো টাকা’র একটি আধুলিও দেশে ফিরে নাই। এবং, পেট্রল-ডিজেলের দাম চড়িতে চড়িতে ইউপিএ জমানার রেকর্ড ছুঁইয়া ফেলিয়াছে। আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিবেন, সেই সুযোগও নরেন্দ্র মোদীর নাই, কারণ তাঁহার শাসনকালের প্রায় গোটাটাই অপরিশোধিত তেলের দাম তলানিতে ছিল। পেট্রল-ডিজেল এমন অগ্নিমূল্য কেন, সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর তাঁহার নিকট নাই। পরের লোকসভা নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়িয়া গিয়াছে। ২০১৩ সালের পাপ ২০১৮ সালে তাঁহাকে পাড়িয়া ফেলিয়াছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমিলেও ভারতে কমিল না কেন, সেই প্রশ্নের সহজ উত্তর— নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালে পেট্রপণ্যের উৎপাদন শুল্ক মোট নয় দফায় বাড়িয়াছে। কমিয়াছে মাত্র এক বার। ফলে, পেট্রল-ডিজেলের দাম হইতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ সরাইয়া লইয়া তাহাকে বাজারের সহিত জুড়িয়া দেওয়ায় সাধারণ মানুষের লাভ হয় নাই। আন্তর্জাতিক বাজারে যখন দাম কমিয়াছে, তখন শুল্ক বাড়াইয়া সরকার টাকা তুলিয়া লইয়াছে। সেই কাজটির যে কোনও যৌক্তিকতা নাই, তাহা বলা চলে না। পরিবেশের উপর পেট্রপণ্যের নেতিবাচক প্রভাবের কথা মাথায় রাখিতেই হইবে। কিন্তু, নরেন্দ্র মোদীর আর পাঁচটি নীতির ন্যায় আলোচ্য ক্ষেত্রেও বিন্দুমাত্র স্বচ্ছতা ছিল না। তাঁহার রাজনৈতিক রেটোরিক আর প্রকৃত নীতির মধ্যে যে যোজনব্যাপী দূরত্ব, তাহা তিনি সযত্নে চাপিয়া গিয়াছেন।

পেট্রলিয়াম মন্ত্রক ইতিমধ্যেই অর্থমন্ত্রীর নিকট উৎপাদন শুল্ক হ্রাস করিবার দাবি জানাইয়াছে। এই দাবির মধ্যেও বিলক্ষণ রাজনীতি রহিয়াছে। উৎপাদন শুল্ক বৃদ্ধি এবং হ্রাস, উভয়ই সরকারের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত। মন্ত্রিসভার অভ্যন্তরেই সেই বিষয়টির ফয়সলা হওয়া সম্ভব— তাহার জন্য ঢাকঢোল পিটাইবার প্রয়োজন ছিল না। অনুমান করা চলে, বাজেটের পূর্বে ইহা জনমতের জল মাপিবার কৌশল। তেলের দাম বাড়িতেছে, অতএব সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা মাথায় রাখিয়া সরকার দাম কমাইতে সচেষ্ট— সুকৌশলে এমন একটি বার্তা ছড়াইয়া দেওয়ার চেষ্টা। আরও একটি রাজনীতির হাওয়া বহিতেছে। পেট্রলিয়াম পণ্যকে জিএসটি-র আওতায় লইয়া আসিবার প্রস্তাব ভাসাইয়া দেওয়া হইয়াছে। ভাবখানা এমন, যেন পেট্রপণ্যের দাম রাজ্য সরকারগুলির কারণেই বাড়িতেছে। স্মরণ করাইয়া দেওয়া বিধেয়, রাজ্যগুলি প্রতি লিটার পেট্রল-ডিজেলে ভ্যাট হিসাবে যে টাকা আদায় করে, কেন্দ্রীয় উৎপাদন শুল্কের পরিমাণ তাহার তুলনায় বেশি। অবশ্য, জুমলার জল শেষ অবধি রাজনীতির চোরাগলিতে আসিয়াই ঠেকে।

GST petroleum products Petroleum
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy