Advertisement
E-Paper

এক দিকে আত্মবিশ্লেষণ, অন্য দিকে দায়িত্বশীলতা জরুরি

আত্মবিশ্লেষণের দায় অবশ্য শুধু বামেদের নয়। উত্তর-পূর্ব ভারতের তিন রাজ্যের নির্বাচনী ফলাফল বলছে, আত্মনিরীক্ষণের সামনে দাঁড়ানো উচিত কংগ্রেসেরও। আগের নির্বাচনটাতেও ত্রিপুরার মানুষ প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন কংগ্রেসকে। সেই কংগ্রেস এ বার বিধানসভায় পা রাখার ছাড়পত্র পায়নি।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৮ ০০:৫৮
ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

আট মাস বা ছ’মাস আগেও অনেকেই কল্পনা করতে পারেননি, উত্তর-পূর্ব ভারতে, বিশেষত ত্রিপুরায় এই রকম হবে নির্বাচনী ফলাফল। ত্রিপুরায় পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিল বিজেপি, ‘চলো পাল্টাই’ স্লোগান তুলেছিল। আড়াই দশকের লালদুর্গে জোরদার ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা হবে, সে হয়তো বোঝা গিয়েছিল। কিন্তু সে ধাক্কায় গড় ধূলিসাৎ হবে, এমনটা ভাবতে পারেননি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও।

অনেকে ২০১১-র বাংলার সঙ্গে ২০১৮-র ত্রিপুরার মিল খোঁজার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দুই দৃশ্যপট কি মেলে আদৌ? ২০১১-র বেশ কয়েক বছর আগে থেকে বাংলায় বাম বিদায়ের একটা প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-নেতাই-লালগড়-ভাঙড় তো ছিলই। ছিল জনমতে সে সবের স্পষ্ট প্রতিফলনও। ২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচন, ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচন, ২০১০-এর পুরসভা নির্বাচন— বামেরা ধাক্কা খাচ্ছিল একের পর এক পরীক্ষায়। ত্রিপুরায় কিন্তু তেমন কিছুই ছিল না। গেরুয়া রঙের দৃশ্যমানতা বেড়েছিল, গেরুয়া পতাকাকে নিয়ে চর্চা বেড়েছিল, গেরুয়া শিবিরের প্রত্যয়ী নির্ঘোষ ছিল। কিন্তু তাতেই কি ধসে যেতে পারে আড়াই দশকের দুর্জয় ঘাঁটি, খসে যেতে পারে ত্রিপুরার বামেদের ‘অপরাজেয়’ তকমা?

বিজেপি এবং আরএসএস সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছিল ত্রিপুরা দখলের জন্য। বিজেপির ভাল ফল অতএব প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু শূন্য থেকে দুই-তৃতীয়াশ আসনের অধীশ্বর হয়ে ওঠা! বাম রাজত্বের এমন শোচনীয় সমাপ্তি ঘটানো! শুধু বিজেপির তৎপরতায় কি এতটা সম্ভব? বামফ্রন্ট সরকারের প্রতি পর্যাপ্ত বিতৃষ্ণা যদি তৈরি না হত ত্রিপুরাবাসীর মধ্যে, তা হলে কি এই প্রত্যাখ্যানের মুখে পড়তে হত মানিক সরকারদের?

প্রত্যাখ্যানের প্রেক্ষাপটটা তলায় তলায় প্রস্তুত হচ্ছিল দীর্ঘ দিন ধরেই অর্থাৎ। ক্ষমতা বিরোধিতার হাওয়া অবশ্যই বইতে শুরু করেছিল চোরাস্রোতের মতো। বামেরা হয় সে হাওয়ার চরিত্র বুঝতে পারেনি। অথবা বোঝার চেষ্টাই করেনি।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আত্মবিশ্লেষণ করা উচিত ত্রিপুরার বামপন্থী নেতাদের। কী কারণে এই সাংঘাতিক প্রত্যাখ্যান? অনুন্নয়ন? প্রশাসনিক অসাফল্য? কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পারা? বঞ্চনা? কারণটা বামেদেরই খুঁজে বার করতে হবে।

আত্মবিশ্লেষণের দায় অবশ্য শুধু বামেদের নয়। উত্তর-পূর্ব ভারতের তিন রাজ্যের নির্বাচনী ফলাফল বলছে, আত্মনিরীক্ষণের সামনে দাঁড়ানো উচিত কংগ্রেসেরও। আগের নির্বাচনটাতেও ত্রিপুরার মানুষ প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন কংগ্রেসকে। সেই কংগ্রেস এ বার বিধানসভায় পা রাখার ছাড়পত্র পায়নি। নাগাল্যান্ডেও ঠিক একই ছবি। একটা আসনও পায়নি কংগ্রেস। মেঘালয় এত দিন কংগ্রেসের শাসনে ছিল। এ বারও সে রাজ্যে কংগ্রেসই বৃহত্তম দল। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে অনেকটা দূরেই থেমে গিয়েছেন মুকুল সাংমারা। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া বিজেপি। রাহুল গাঁধীর দলকে ক্ষমতা থেকে দূর রাখতে বিজেপির তরফে জোট তৎপরতা তুঙ্গে।

আরও পড়ুন
গেরুয়া ঝড়, মানিক বদলে ‘হিরা’কেই বাছল ত্রিপুরা

কোন প্রেক্ষাপটে এই বিপর্যয়ের মুখে পড়ল কংগ্রেস? গুজরাতে দলের ভাল ফলের প্রেক্ষাপটে। খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাতে কয়েক মাস আগেই বিজেপি-কে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে রাহুল গাঁধীর দল। কংগ্রেস ক্ষমতা দখল করতে না পারলেও, শাসকের সঙ্গে বিরোধীর ব্যবধান সে রাজ্যে কমে গিয়েছে অনেকটা। গুজরাতে স্থানীয় স্তরের নির্বাচনে বিধানসভা নির্বাচনের চেয়েও ভাল ফল করেছে কংগ্রেস। পঞ্জাব, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশেও একের পর এক নির্বাচন বা উপনির্বাচনে বিজেপিকে ধাক্কা দিয়েছে কংগ্রেস। রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে কংগ্রেস— এমন চর্চা যখন শুরু হচ্ছে, ঠিক তখনই উত্তর-পূর্ব ভারতের দুই রাজ্যে কংগ্রেস এ রকম নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল কী ভাবে? যতটা গুরুত্ব দিয়ে লড়তে নেমেছিল বিজেপি, আদৌ কি উত্তর-পূর্বের এই তিন রাজ্যে ততটা তৎপর ছিলেন রাহুল গাঁধীরা? এই ফলাফল কি দলের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাকে ফের জোরদার ধাক্কার মুখে ফেলল না? প্রশ্নগুলোর উত্তর অবিলম্বে খোঁজা উচিত কংগ্রেসের।

বিজেপি-কে অভিনন্দন জানাতেই হয়। উত্তর-পূর্বের এই তিন রাজ্যে প্রায় শূন্য ছিল বিজেপি। বেনজির তৎপরতা নিয়ে নির্বাচনে ঝাঁপাল গোটা সংগঠন। শূন্য থেকে সৌধ তৈরি হল কয়েক মাসেই। এ মোটেই সহজ কাজ নয়। অভিনন্দন অবশ্যই প্রাপ্য বিজেপি নেতৃত্বের।

দায়িত্বও কিন্তু অনেকটা বেড়ে গেল বিজেপির। দীর্ঘ দিন ধরে যে সব দলকে ভোট দিতে অভ্যস্ত উত্তর-পূর্বের মানুষ, তাদের দিক থেকে মুখ অনেকখানি ফিরিয়ে নিয়ে বিজেপির উপর ভরসা রাখলেন দলে দলে। অনুন্নয়ন, অপ্রাপ্তি, বঞ্চনার অভিযোগ উত্তর-পূর্ব ভারতে দীর্ঘ দিন ধরেই প্রতিধ্বনিত হয়। সে সবের হাত থেকে মুক্তি মিলবে, এমন আশ্বাসেই সম্ভবত বিজেপি-তে আস্থা রাখা। এ আস্থার মর্যাদা রক্ষা করা খুব সহজ কাজ কিন্তু নয়। সে কথা মাথায় রেখেই পরবর্তী পদক্ষেপগুলো করতে হবে বিজেপি-কে।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Tripura Assembly Election Meghalaya Assembly Elections 2018 Nagaland Assembly Election 2018 Tripura Assembly Elections 2018 Assembly Election Results 2018
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy