Sourced by the ABP
গত সপ্তাহে লোকসভায় পাশ হয়েছে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ আইন-প্রস্তাব: বন সংরক্ষণ আইন এবং জৈব বৈচিত্র আইন। অতঃপর সেটি রাজ্যসভার অনুমোদনের অপেক্ষায়। প্রস্তাবিত আইন দু’টির নামে পরিবেশ রক্ষার কথা আছে। কিন্তু নাম এবং চরিত্রের মধ্যে যে অনেক সময়েই বিস্তর দূরত্ব থাকে, সে কথা সুবিদিত। এই বিল দু’টির চরিত্র নিয়েও বড় রকমের প্রশ্ন আছে। পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে সচেতন এবং অভিজ্ঞ বিভিন্ন মহল থেকে তথ্য ও যুক্তি সহকারে সেই সব প্রশ্ন তোলা হয়েছে, প্রতিবাদ জানানো হয়েছে, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার কর্ণপাত করেনি। প্রশ্ন এবং প্রতিবাদে কর্ণপাত করা তাদের স্বভাব নয়। অতএব সংখ্যার জোরে এবং সংসদে দিনের পর দিন চলতে থাকা শোরগোলের সুযোগে শাসকরা বিল দু’টি পাশ করিয়ে নিয়েছেন। রাজ্যসভাতেও সেই অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা জোরদার। সেই কক্ষটিতে সংখ্যার জোর লোকসভার তুলনায় কম, কিন্তু শোরগোলের মাত্রা কিছু কম নয়। আরও বড় কথা, এবং দুর্ভাগ্যের কথা এই যে, পরিবেশের প্রশ্নে সরকার-বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও সচরাচর উদাসীন। তার কতখানি অজ্ঞতা ও মানসিক আলস্যের কারণে, আর কতটা বিভিন্ন স্বার্থের অনুপ্রেরণায়, সেই বিচার অন্যত্র, কিন্তু ঔদাসীন্যের মাত্রাটি যে বিপুল ও ভয়াবহ, সে বিষয়ে কোনও সংশয় নেই। বিশ্ব জুড়ে প্রকৃতি ও পরিবেশ যখন আক্ষরিক অর্থে প্রলয়ের দিন গুনছে, তখনও ভারতীয় রাজনীতিক তথা জনপ্রতিনিধিদের ঘুম ভাঙার কোনও লক্ষণ নেই।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই প্রাক্তন সরকারি আমলা-সহ বিভিন্ন বর্গের উদ্বিগ্ন নাগরিকমণ্ডলী এবং পরিবেশ রক্ষায় সক্রিয় বিভিন্ন গোষ্ঠী সম্প্রতি রাজ্যসভার সদস্যদের এই বিল দু’টি অনুমোদন না করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। আবেদনকারীদের প্রধান অভিযোগ, যে কোনও ধরনের প্রকল্পের জন্য আরণ্যক প্রকৃতি এবং সেখানকার জৈব বৈচিত্রের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী, পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে নিযুক্ত স্থানীয় বা আঞ্চলিক সংগঠন, রাজ্য সরকারি দফতর ও সংস্থা এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা নতুন আইনে ভয়ানক ভাবে শিথিল করে দেওয়ার আয়োজন হচ্ছে, যার ফলে কার্যত প্রকৃতি এবং পরিবেশের যথেচ্ছ সংহারের পথ আরও অনেক বেশি প্রশস্ত হবে। লক্ষণীয়, জাতীয় নিরাপত্তার যুক্তিতে সীমান্ত থেকে একশো কিলোমিটার অবধি অঞ্চলে পরিবেশ বিধির নিয়ন্ত্রণ বিশেষ ভাবে শিথিল করা হবে। দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা, যেমন মণিপুর-সহ উত্তর-পূর্ব ভারত বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ পার্বত্য-আরণ্যক অঞ্চল এবং জৈব বৈচিত্রের অতুলনীয় ভান্ডার হিসাবে স্বীকৃত। উন্নয়ন এবং প্রতিরক্ষার যুক্তিতে এই ভান্ডারগুলি যথেচ্ছ ধ্বংস করা হবে— এই আশঙ্কাতেই পরিবেশ-সচেতন প্রতিবাদীরা শঙ্কিত এবং উদ্বিগ্ন।
শঙ্কা এবং উদ্বেগ অস্বাভাবিক নয়। উন্নয়ন নিশ্চয়ই জরুরি, প্রতিরক্ষার আয়োজনও অবশ্যই অপরিহার্য। কিন্তু প্রথমত, কোনও যুক্তিতেই আজ আর পরিবেশ রক্ষার প্রশ্নে আপস চলতে পারে না, কারণ প্রকৃতির ভারসাম্য এখন কেবল সুস্থায়ী উন্নয়নের আবশ্যিক শর্ত নয়, সেই ভারসাম্য আরও ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রতিরক্ষার ভিতও বিপন্ন এবং বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে— প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে জাতীয় নিরাপত্তার অর্থনৈতিক কাঠামোয় কী পরিমাণ ক্ষতি হয়, তার নানা নিদর্শন দুনিয়া জুড়েই প্রকট হয়ে উঠছে। দ্বিতীয়ত, উন্নয়ন এবং প্রতিরক্ষার যুক্তি দেখিয়ে বিভিন্ন ক্ষমতাবান স্বার্থগোষ্ঠীকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য পরিবেশ বিধি যথেচ্ছ ভাবে শিথিল করা হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নও উড়িয়ে দেওয়ার কোনও উপায় নেই। এই পরিস্থিতিতে পরিবেশ রক্ষার প্রশ্নে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিসরে সক্রিয় সচেতনতার কোনও বিকল্প নেই। অথচ, ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়িয়েও, এ দেশের রাজনীতি পরিবেশ সম্পর্কে উদাসীন, সমাজও তথৈবচ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy