Advertisement
E-Paper

নিজকীর্তির পরিণাম

কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বা আসন বোঝাপড়া না করার পিছনেও অসহিষ্ণুতার ভূমিকা আছে, যদিও সেই অসহিষ্ণুতার দায়ভাগ রাহুল গান্ধী ও তাঁর সতীর্থরাও এড়াতে পারেন না।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:২৪
Share
Save

সাতাশ বছর পরে দিল্লি সরকারের গদিতে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রত্যাবর্তন স্বভাবতই ঐতিহাসিক। কিন্তু তাকে অপ্রত্যাশিত বলার কোনও উপায় নেই। নির্বাচনী প্রচারের মরসুমেই দেওয়ালের লিখন বোধ করি উত্তরোত্তর স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। আম আদমি পার্টির এই পরাজয়ের পিছনে বিজেপির সর্বাত্মক তৎপরতার ভূমিকা অনস্বীকার্য। কেন্দ্রীয় সরকারের চালক হিসাবে তারা দিল্লির তখ্‌ত থেকে আম আদমি পার্টিকে উৎখাত করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল। হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রের প্রচারপর্বে নিজেকে কিছুটা ‘আড়াল’-এ রাখার পরে প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর ময়দানে অত্যন্ত প্রকট ভাবে সম্মুখসমরে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ভোটার সংখ্যায় চমকপ্রদ বৃদ্ধি থেকে শুরু করে ভোটের চার দিন আগে পেশ করা কেন্দ্রীয় বাজেটের কল্পতরু উৎসব অবধি সব রকমের অস্ত্র প্রয়োগে শাসক দল কিছুমাত্র দ্বিধা করেনি। সেই অস্ত্রপ্রয়োগ আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে কি না, সেই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নজরদারির মাত্রা নিয়েও বড় রকমের প্রশ্ন উঠেছে। দীর্ঘদিন যাবৎ অরবিন্দ কেজরীওয়াল, মণীশ সিসৌদিয়া-সহ আপ নেতৃত্বের শীর্ষস্তরকে কার্যত ‘বডিলাইন’ আক্রমণের ধারাটি এই নির্বাচনে এক চরম মাত্রা অর্জন করে। আপের থেকে মাত্র দুই শতাংশ ভোট বেশি পেয়ে এবং অনেক আসনেই অল্প ব্যবধানে এগিয়ে থেকেও ৪৮-২২ আসনে বিজয়ী হওয়ার পিছনে এই আগ্রাসী অভিযানের অবদান বিপুল।

কিন্তু তার থেকেও অনেক বড় অবদান আপ এবং তার নায়ক কেজরীওয়ালের। এই পরাজয় প্রথমত এবং প্রধানত তাঁদের নিজকীর্তির পরিণাম। এক দিকে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, অন্য দিকে শিক্ষা স্বাস্থ্য ইত্যাদি পরিষেবার উন্নতি— এই দ্বৈত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আপ রাজধানীর রাজনৈতিক ময়দানে বিদ্যুদ্গতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই ভিত কেবল দুর্বল নয়, বিধ্বস্ত। আবগারি দুর্নীতি এবং অন্যান্য অনাচারের অভিযোগকে কেন্দ্রীয় শাসকরা আপের নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আক্রমণের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছেন, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু অভিযোগগুলি বাস্তবিকই গুরুতর। ঠিক যেমন ‘আম আদমি’র জীবনযাপনের ধ্বজাধারী মুখ্যমন্ত্রীর বহুমূল্য আবাসটিও জ্বলন্ত বাস্তব। অন্য দিকে, নাগরিক পরিকাঠামোর উন্নতি ক্রমশ স্তিমিত হয়েছে, পরিবহণের সমস্যা এবং দূষণের মাত্রা চরমে পৌঁছেছে। এই সঙ্কটের দায় আপ সরকার কেন্দ্রের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। দায়ভাগ যেমনই হোক, নাগরিকরা অনেকেই হয়তো ক্লান্ত হয়ে ভেবেছেন, তার থেকে ‘ডাবল ইঞ্জিন’ই শ্রেয়। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের একক নেতৃত্বের দাপট এবং অসহিষ্ণুতা, যা তাঁর অনেক সহকর্মীর সঙ্গে দূরে সরিয়ে দিয়েছে বহু নাগরিককেও। নির্বাচনী সাফল্য এবং তজ্জনিত ক্ষমতা বোধ হয় তাঁর বা তাঁর সতীর্থদের মাথায় ঢুকে গিয়েছিল, যার ফলে জনসংযোগের স্বধর্ম ভুলে তাঁরা ‘সরকারি দল’ হয়ে ওঠেন। এই পরাজয় সেই প্রবণতাকে উচিত শিক্ষা দিয়েছে।

কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বা আসন বোঝাপড়া না করার পিছনেও অসহিষ্ণুতার ভূমিকা আছে, যদিও সেই অসহিষ্ণুতার দায়ভাগ রাহুল গান্ধী ও তাঁর সতীর্থরাও এড়াতে পারেন না। তবে এ-কথাও মনে রাখতে হবে যে ‘ইন্ডিয়া’র সর্বভারতীয় অঙ্ক যা-ই হোক না কেন, দিল্লির নিজস্ব রাজনীতিতে আপ এবং কংগ্রেসের মধ্যে কোনও স্বাভাবিক মিত্রতার প্রশ্ন ওঠে না এবং, সেই কারণেই, নেতারা বোঝাপড়া করলেও দুই পক্ষের কর্মী বা ভোটদাতারা তাতে কতটা সাড়া দিতেন, তা নিয়ে গভীর সংশয় আছে। নির্বাচনী পাটিগণিত অবশ্যই মূল্যবান, কিন্তু নির্বাচন কেবলই পাটিগণিত নয়। দিল্লিতে ব্যর্থ কংগ্রেস এবং পরাস্ত আপ, দুই দলকেই আপাতত জনসাধারণের কাছে নিজেদের প্রাসঙ্গিক করে তোলার পথ খুঁজতে হবে। অরবিন্দ কেজরীওয়াল এবং রাহুল গান্ধী নিশ্চয়ই জানেন যে বিজয়ী বিজেপি সেই কাজটিকে সহজ করে দেবে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

BJP AAP Arvind Kejriwal

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}