মেয়েদের হস্টেলে কেন ওয়ার্ডেনের স্বামীকে থাকতে হবে— প্রশ্নটি তুলেছেন হরিদেবপুর থানার নিকটস্থ ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের এক ছাত্রীর আত্মীয়া। সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট স্কুলটির ছাত্রীদের হস্টেলে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। আর জি কর কাণ্ড এবং বাংলা বিনোদন জগতে মি-টু’র ধাক্কায় যখন মেয়েদের নিরাপত্তাজনিত অব্যবস্থাটি ক্রমেই প্রকট, তখন উপরোক্ত প্রশ্নটি বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। হস্টেলে পাঁচ নাবালিকাকে যৌন হেনস্থার যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আপাতত গ্রেফতার হয়েছেন ওয়ার্ডেন নিজে, স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক, এবং এক শিক্ষাকর্মী। এমন ঘটনায় গ্রেফতারিটুকুই শেষ কথা নয়। মেয়েদের হস্টেলে পুরুষরা যথেচ্ছ প্রবেশাধিকার পাবে না— এমনটাই স্বাভাবিক নিয়ম হওয়া উচিত। তা হলে কেন এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটল, কেন এই ধরনের মারাত্মক অভিযোগ আগে উঠলেও উপযুক্ত ব্যবস্থা করা হয়নি, প্রত্যেকটির বিষয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। একমাত্র তা হলেই খানিক আন্দাজ পাওয়া যাবে যে, মেয়েদের সুরক্ষার অভাব বলতে যেমন মনে করা হয়ে থাকে, বাস্তব অবস্থাটি তার চেয়ে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর।
মেয়েদের জন্য এই পরিস্থিতি অবশ্য নতুন নয়। নতুন যা, তা হল— এমত ঘটনাগুলি এখন অনেক বেশি সামনে আসছে, আলোচিত হচ্ছে, সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। কয়েক দশক পূর্বেও এমন হেনস্থায় সামাজিক প্রথা ছিল, অসম্মানের ভয়ে নির্যাতিতার মুখ বন্ধ রাখা। সাম্প্রতিক নানা ঘটনা ও আইনের জোরে সেই ফাঁস অনেকটাই আলগা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও অ-প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েরা ওয়ার্ডেনের ‘হুমকি’ উপেক্ষা করেই নিজেদের হেনস্থার কথা অভিভাবকদের কাছে তুলে ধরেছে। অভিভাবকরা স্কুলে অভিযোগ জানিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ করেছেন। অন্যায়ের প্রতি সর্বস্তরে এই আপসহীন মনোভাবটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দিনে যাতে এ ভাবেই সব মেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে নিজেদের অসুবিধার কথা বাধাহীন ভাবে তুলে ধরতে পারে, কর্তৃপক্ষকে তা নিশ্চিত করতে হবে। কর্মক্ষেত্রের পাশাপাশি সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৃথক কমিটি রাখতে হবে যাতে মেয়েরা হেনস্থার শিকার হলে নির্ভয়ে অভিযোগ জানাতে পারে, এবং সেই অনুযায়ী দ্রুত পদক্ষেপ করা যায়।
বিশেষত অ-প্রাপ্তবয়স্কদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা জরুরি। অ-প্রাপ্তবয়স্ক বলতে শুধুমাত্র নাবালিকারাই নয়, নাবালকদের সুরক্ষাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। নাবালিকাদের মতোই তারাও নানা সময়ে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার শিকার হয়। কিন্তু অনেক সময়েই তাদের হেনস্থার অভিযোগগুলি অ-শ্রুত রয়ে যায়, ব্যবস্থা করা তো দূর স্থান। অথচ, ভারতে ‘পকসো’ আইনটি ১৮ বছরের নীচে লিঙ্গ নিরপেক্ষ ভাবে সকলকে সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয়। সমস্যা হল, এ দেশে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে যে তৎপরতা দেখা যায়, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে তা দুর্ভাগ্যজনক ভাবে অনুপস্থিত। বিচার ও শাস্তি কতগুলি ঘটনায় পাওয়া গিয়েছে, হাত গুনে বলা যায়। সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বহিরাগতদের নিয়ন্ত্রণ এবং ভিতরে নজরদারি ব্যবস্থাটি কড়া করতে হবে। যৌন হেনস্থা এক ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যাধি। দ্রুত তা নির্মূল করতে হবে, এটা সমাজেরই দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy