আনাজের আগুন দর আগুনতর হয়ে উঠবে, সেই আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলল তিন দিন ব্যাপী ট্রাক ধর্মঘট। পশ্চিমবঙ্গের ট্রাক মালিকরা যে কারণগুলি দেখিয়ে ধর্মঘট ডেকেছেন, তার মধ্যে একটি কারণ বেশ চাঞ্চল্যকর— তাঁদের দাবি, ট্রাকে ওভারলোডিং বন্ধ করতে হবে। পণ্যবাহী গাড়িতে যে পরিমাণ মাল তোলার অনুমতি থাকে, তার বেশি তোলাকেই বলে ওভারলোডিং। কেউ বলতেই পারেন যে, বেআইনি ভাবে মাল তোলা বা না-তোলা তো ট্রাক মালিকদেরই হাতে— তার জন্য ধর্মঘট করতে হচ্ছে কেন? ট্রাক মালিকদের বক্তব্য, যে সব গাড়ি বেআইনি ভাবে মাল তুলে পুলিশের হাতে নগদ দক্ষিণা গুঁজে দেয়, তাদের কোনও সমস্যা হয় না; কিন্তু যে গাড়ি নির্ধারিত সীমার মধ্যে পণ্য পরিবহণ করে, পুলিশ তাদের বিভিন্ন ভাবে নাজেহাল করতে থাকে। অভিযোগটি কতখানি সত্য, তা প্রমাণসাপেক্ষ— কিন্তু, কেউ আইন মেনে চলতে চাইলে পুলিশ তাতে বাগড়া দিচ্ছে, কারণ মানুষ আইন মানলে অবৈধ পথে খাজনা আদায় করা যাচ্ছে না, এই অভিযোগটি রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে বেশ মানানসই। রাজ্য প্রশাসনের এ দিকে নজর দেওয়া উচিত, কিন্তু তা দিয়ে উঠতে পারবে কি? রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি দেখে সেই ভরসা হয় না।
যে দাবিগুলি নিয়ে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে, সেগুলির কী হবে তা বলা মুশকিল— কিন্তু থলি হাতে বাজার যাওয়া মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস উঠছে। পেঁয়াজ থেকে মাছ, হরেক খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ ভিন রাজ্যের উপরে নির্ভরশীল। ট্রাক বন্ধ থাকলে সেই পণ্য বাজারে পৌঁছবে না, ফলে দাম বাড়বে। যে সব আনাজ রাজ্যেই উৎপন্ন হয়, সেগুলির পরিবহণও স্বভাবতই ট্রাকনির্ভর। ফলে, ট্রাক পরিবহণ বন্ধ হলে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে বাজারদরে। এবং, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই মওকাটিকে ব্যবহার করে অন্যায্য ভাবে মুনাফা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে। যে-হেতু ট্রাক বন্ধ থাকার কারণে আনাজের দর বাড়বে এ কথাটি সাধারণ মানুষ জানেন, ফলে তারও উপরে দাম বাড়িয়ে সেই অতিরিক্ত বৃদ্ধিকেও ট্রাক ধর্মঘটের নামে চালিয়ে বাড়তি মুনাফা অর্জনের একটি প্রবণতা অতীতে লক্ষ করা গিয়েছিল। এ দফাতেও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কোনও কারণ নেই।
তবে, বাজারদরের ক্ষেত্রে একটি সুসংবাদও আছে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের হিসাব অনুযায়ী, গত অগস্ট মাসে ভারতে ভোগ্যপণ্যের মূল্যসূচকের নিরিখে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩.৬৫ শতাংশ— ব্যাঙ্কের নির্ধারিত লক্ষ্যসীমা ৪ শতাংশের নীচে। জুলাই মাসেও এই হার লক্ষ্যসীমার নীচেই ছিল। গত পাঁচ বছরে এই জুলাই এবং অগস্টেই প্রথম বার ভোগ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ৪ শতাংশের নীচে থাকল। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৫.৬৬%, যা গত বছর অগস্টে ছিল ৯.৯৪%। যে-হেতু গত বছর অত্যন্ত চড়া হারে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ঘটছিল, ফলে সেই ‘হাই বেস এফেক্ট’-এর দরুন এ বছরের হারটি সহনীয় সীমায় আছে, এ কথা যেমন সত্য, তেমনই এটাও সত্য যে, পর পর দু’মাস মূল্যবৃদ্ধির হারে লাগাম পরানো গেলে তা সাধারণ মানুষের পক্ষে সুসংবাদ। আনাজের মূল্যবৃদ্ধির হার যদিও এখনও তুলনায় চড়া। পেঁয়াজের মতো বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় আনাজের দাম এখনও চড়চড়িয়ে বাড়ছে। ফলে, ভোগ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার নিম্নমুখী হওয়ার স্বস্তি কত দিন স্থায়ী হবে, সে প্রশ্ন থাকছেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy