E-Paper

আরও খারাপ

স্বভাবতই কেউ কৌতূহলী হতে পারেন যে, অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে, এমন পরিসংখ্যান দিনের আলো দেখল কী ভাবে?

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪ ০৯:০০

এই জমানায় যে এমন কোনও রিপোর্ট প্রকাশিত হতে পারে যাতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকট ব্যর্থতা ধরা পড়েছে, অনেকের কাছে সেই কথাটিই অবিশ্বাস্য ঠেকবে। তেমন ‘অবিশ্বাস্য’ ঘটনাই ঘটল— জাতীয় নমুনা সমীক্ষা সংস্থার করা ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ সালের অ্যানুয়াল সার্ভে অব আনইনকর্পোরেটেড সেক্টর এন্টারপ্রাইজ়েস-এর প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করল কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রক। স্বভাবতই কেউ কৌতূহলী হতে পারেন যে, অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে, এমন পরিসংখ্যান দিনের আলো দেখল কী ভাবে? তার একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে এই যে, ২০১৫-১৬ সালের তুলনায় সাড়ে দশ শতাংশ কর্মসংস্থান হ্রাসের ঘটনা ঘটেছে কোভিড অতিমারি চলাকালীন, এবং অতিমারির প্রকোপ কমার পর কর্মসংস্থানও বেড়েছে, যদিও তা ২০১৫-১৬ সালের স্তরে পৌঁছতে পারেনি। অতএব, কর্তারা বলতেই পারেন যে, দোষ সরকারের নয়, দোষ অদৃষ্টের। তবে কিনা, অতিমারি শুরু হওয়ার আগেই অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানে ধাক্কা না লাগলে যে কর্মসংস্থান অতখানি কমত না, সে বিষয়ে সংশয়ের অবকাশ কম। বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৯-২০ অবধি কর্মসংস্থানের যে ছবি পাওয়া যায়, তাতেও শ্লথতা ধরা পড়ে। কেন, সেই কারণও বহু-আলোচিত— ২০১৬ সালের নভেম্বরে নোট বাতিল এবং ২০১৭ সালের জুলাইয়ে অত্যন্ত অপরিকল্পিত ভঙ্গিতে জিএসটি প্রবর্তনের ধাক্কা নগদ-নির্ভর অসংগঠিত ক্ষেত্র সামলাতে পারেনি।

অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান কতখানি হ্রাস পেয়েছে, তা পুরোটা বুঝতে গেলে অবশ্য এই দু’টি সময়কালের কর্মসংস্থানের হিসাব দেখলেই চলবে না— স্বাভাবিক গতিতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেলে ২০১৫-১৬ সাল থেকে ২০২২-২৩’এ এসে শ্রমিকসংখ্যা কত দাঁড়াত, এবং প্রকৃত শ্রমিকসংখ্যা কত দাঁড়িয়েছে, সে হিসাব দেখতে হবে। তাতে ধাক্কার চরিত্রটি স্পষ্টতর হবে। এখানে অবশ্য কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে, অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান কি আদৌ ভাল কথা? পরিসংখ্যান বলছে, না। এই মুহূর্তে ভারতে কৃষি-বহির্ভূত অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান হয় দেশের মোট কর্মরত জনসংখ্যার ১৯ শতাংশের; কিন্তু দেশের অর্থব্যবস্থায় ক্ষেত্রটির মোট মূল্য সংযোজন মাত্র ৬%। কৃষিক্ষেত্রে এই দু’টি অনুপাত যথাক্রমে ৪৫% ও ১৮%। অর্থাৎ, সম্মিলিত ভাবে এই দু’টি ক্ষেত্রে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ কর্মসংস্থান ঘটে, কিন্তু মোট মূল্য সংযোজন ২৫ শতাংশের কম। স্বাভাবিক ভাবেই, এই দু’টি ক্ষেত্রে নিয়োজিত শ্রমশক্তির আয় সবচেয়ে কম; আর্থিক বৈষম্যের বৃহত্তম শিকার তাঁরাই। কেউ বলতেই পারেন যে, এই অবস্থায় অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান মানেই সেই শ্রমিককে দারিদ্রের অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া— অতএব, কর্মসংস্থান কমে মন্দ হয়নি। কথাটি ঠিক কি না, তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।

অসংগঠিত ক্ষেত্রে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা এক রকম নাচার হয়েই কাজ করেন— এর চেয়ে ভাল কাজ তাঁদের জোটেনি বলে। প্রশ্ন হল, গত সাত-আট বছরে অপেক্ষাকৃত ভাল কাজ কি এই পরিমাণে তৈরি হয়েছে যে, এই শ্রমশক্তির একটি অংশের আর অসংগঠিত ক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি? পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভের পরিসংখ্যান বলছে, না— এই সময়কালে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির গতি মূলত অবৈতনিক পারিবারিক শ্রমে স্বনিযুক্তির দিকে। অর্থাৎ, অসংগঠিত ক্ষেত্রে যাঁরা মাসে গড়ে ন’হাজার টাকা বেতনের কাজ পাচ্ছেন না, তাঁরা কার্যত বিনা বেতনের কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। আদর্শ পরিস্থিতিতে অসংগঠিত ক্ষেত্রে নিযুক্তি কমাই ভাল; কিন্তু তার পূর্বশর্ত হল, বিকল্প হিসাবে উন্নততর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। ভারতে তা হয়নি। এই পরিসংখ্যানের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা এখানেই যে, আগে যাঁরা খারাপ ছিলেন, তাঁরা এখন আগের চেয়েও খারাপ আছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Unorganized Sector Unemployment

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy