E-Paper

দেবদূতের শাপমুক্তি

সমস্যা হল, কোনও চালু সংস্থার ক্ষেত্রে তার ন্যায্য মূল্যায়নের হিসাব কষা যতখানি সহজ, স্টার্টআপের ক্ষেত্রে তা নয়। কারণ, স্টার্টআপের বর্তমান মূল্য সামান্যই— তার মূল্যায়ন হয় ভবিষ্যতের সম্ভাবনার ভিত্তিতে।

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৪ ০৯:০৩
(বাঁ দিকে) শশী তারুর, (মাঝে) নির্মলা সীতারামন ও পি চিদম্বরম (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) শশী তারুর, (মাঝে) নির্মলা সীতারামন ও পি চিদম্বরম (ডান দিকে)।

এই বাজেটের একটিমাত্র বিষয়কে তাঁরা সমর্থন করেন, জানিয়েছেন শশী তারুর ও পালনিয়াপ্পান চিদম্বরম। এই দুই প্রবীণ কংগ্রেস নেতার পছন্দের বিষয়টি হল, এঞ্জেল কর বিলোপ করা— চিদম্বরম বলেছেন, ভাবনাটি সরাসরি কংগ্রেসের ইস্তাহার থেকে টুকে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তার অবশ্য প্রয়োজন ছিল না, কারণ গত এক দশক ধরেই ভারতের বণিক মহল এবং সমগ্র স্টার্টআপ ক্ষেত্র এই করটি তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে চলেছে। ২০১২ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় এই করটি চালু করেন। কোনও সংস্থা তার ন্যায্য মূল্যায়নের চেয়ে বেশি টাকা তুললে সেই টাকার উপর যে কর আরোপ করা হয়, তারই নাম এঞ্জেল কর। যদি ধরা যায় যে, কোনও সংস্থার ন্যায্য মূল্যায়ন এক কোটি টাকা, এবং সংস্থাটি মোট দেড় কোটি টাকার পুঁজি জোগাড় করতে পেরেছে, তা হলে পঞ্চাশ লক্ষ টাকার উপরে এঞ্জেল কর আরোপ করা হয়। এঞ্জেল, অর্থাৎ দেবদূত— যে লগ্নিকারী দেবদূতের মতো এসে সদ্যপ্রতিষ্ঠিত কোনও শিল্পকে তার প্রয়োজনীয় পুঁজির জোগান দেন, তিনি এঞ্জেল ইনভেস্টর। দেবদূতের ছদ্মবেশে কেউ যাতে একে কালো টাকাকে সাদা করার সহজ রাস্তা হিসাবে ব্যবহার না করতে পারে, তার জন্যই এই করের প্রবর্তন হয়েছিল।

সমস্যা হল, কোনও চালু সংস্থার ক্ষেত্রে তার ন্যায্য মূল্যায়নের হিসাব কষা যতখানি সহজ, স্টার্টআপের ক্ষেত্রে তা নয়। কারণ, স্টার্টআপের বর্তমান মূল্য সামান্যই— তার মূল্যায়ন হয় ভবিষ্যতের সম্ভাবনার ভিত্তিতে। ফলে, ভবিষ্যতের মূল্যায়নের ভিত্তিতে যে লগ্নি যথাযথ বলে বোধ করেন বিনিয়োগকারী, বর্তমানের হিসাবে তা-ই অন্যায্য হিসাবে প্রতিভাত হতে থাকে। শিল্পক্ষেত্রের অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রে এমন এঞ্জেল করের নোটিস আসে, যার পরিমাণ কোনও সংস্থার মোট লগ্নির চেয়েও বেশি। অভিযোগ যে, লগ্নিকারীরা এই করের ভয়ে স্টার্টআপে লগ্নি করা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন। ফলে, এই করটির বিলুপ্তির দাবি দীর্ঘ দিন ধরেই উঠছে। এ বছর দাবিটির গুরুত্ব বেড়েছে, কারণ একটি হিসাব বলছে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ভারতে স্টার্টআপ ক্ষেত্রে লগ্নির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে ৬০%। লগ্নির পরিস্থিতির নিরিখে তো বটেই, এই করটি দার্শনিক ভাবেও আপত্তিযোগ্য— কালো টাকা সাদা করা হচ্ছে কি না, অথবা দেশ থেকে ঘুরপথে টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে কি না, তা দেখা এবং প্রতিরোধ করার উপায় যেমন আয়কর আইনে আছে, তেমনই প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট-এও আছে। এঞ্জেল কর আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে অতিসক্রিয়তার উদাহরণ ছিল। তার বিলুপ্তি আর্থিক সংস্কারের নিরিখে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।

এই বাজেটে অর্থমন্ত্রী কর্মসংস্থানের উপরে জোর দেওয়ার কথা বলেছেন। এঞ্জেল কর বিলুপ্তির সিদ্ধান্তকে সরাসরি তার সঙ্গে জুড়লে ভুল হবে— স্টার্টআপ ক্ষেত্রটি কর্মসংস্থানের প্রকৃষ্ট উদাহরণ নয়। তবে, দীর্ঘমেয়াদে ভারতকে অর্থনৈতিক বিশ্বশক্তি হয়ে উঠতে গেলে, চিনের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে চাইলে আর্থিক উদ্ভাবনী শক্তিকে গুরুত্ব দিতেই হবে। স্টার্টআপ ক্ষেত্রটির মাহাত্ম্য সেখানে। আন্তর্জাতিক পুঁজি যাতে ভারতের বাজারে প্রবেশ করতে ভয় না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য দরজা খোলা রাখার কোনও বিকল্প নেই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Union Budget 2024 Nirmala Sitharaman P Chidamabaram Shashi Tharoor Congress Leaders

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy