E-Paper

দূষণগ্রাস

দিল্লির দূষণ বিষয়ে নীতি-নির্ধারকদের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলা জরুরি। বছরের কোন সময় দূষণের তীব্রতা বাড়ে, সম্ভাব্য কারণ কী কী— সবই বহুচর্চিত। তা সত্ত্বেও প্রতি বছর শীত শুরুর সময়টি থেকে কয়েক মাস দিল্লিবাসীর স্বস্তির শ্বাস নেওয়া নিশ্চিত করা যাচ্ছে না কেন— সরকারকে তার জবাব দিতে হবে।

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৫ ০৫:৫৩

অত্যন্ত খারাপ থেকে খারাপ— গত কয়েক দিন যাবৎ দিল্লির বাতাসের গুণমান এমন পর্যায়েই ঘোরাফেরা করেছে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, দিল্লির বাতাসের সামগ্রিক গুণগত মান বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স এক সময় সাড়ে তিনশোর কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। তার পর কিছুটা কমলেও পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক। বিবেক বিহার, আনন্দ বিহার, ওয়াজ়িরপুরের মতো স্থানে একিউআই পৌঁছে গিয়েছিল চারশোর কাছে, যা মারাত্মক খারাপ-এর পর্যায়ভুক্ত। সুতরাং, এই বছরের শীতের মাসগুলিতেও যে প্রবল বায়ুদূষণ দিল্লিবাসীর যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়াবে, তা সহজবোধ্য। ইতিমধ্যেই সমীক্ষায় প্রকাশ, দিল্লি এবং এনসিআর-এ প্রতি চারটি বাড়ি পিছু তিনটিতেই অন্তত এক জন করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মরসুম বদলের প্রাক্কালে ভাইরাসঘটিত অসুখের পাশাপাশি তীব্র দূষিত বাতাসও যে এই অসুস্থতার জন্য দায়ী, তেমনই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

দূষণ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দিল্লি সরকারের কৃত্রিম ভাবে বৃষ্টি নামানোর প্রচেষ্টাটিতেও সাফল্য মেলেনি। ছোট বিমানের মাধ্যমে দিল্লির আকাশের কিয়দংশে মেঘের মধ্যে সিলভার আয়োডাইড জাতীয় রাসায়নিক এবং লবণের কণা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আশা করা হয়েছিল, কৃত্রিম এই বৃষ্টি স্বল্প সময়ের জন্য হলেও বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা পিএম ২.৫ এবং পিএম ১০-এর পরিমাণ হ্রাসে সক্ষম হবে। বাস্তবে তা হয়নি। সাধারণত প্রক্রিয়াটি শেষ হওয়ার চার ঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টি নামে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যৎসামান্য বৃষ্টি ছাড়া বিশেষ কিছুই ঘটেনি। স্পষ্টতই, বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ার মতো পর্যাপ্ত জলকণাও মেঘের মধ্যে ছিল না। ফলে, দূষণ কমার আশাটি জলে গিয়েছে। ঘন কুয়াশা-ঢাকা রাজধানীর অন্দরে বেড়েছে শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীর সংখ্যা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লির দূষণ বিষয়ে নীতি-নির্ধারকদের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলা জরুরি। বছরের কোন সময় দূষণের তীব্রতা বাড়ে, সম্ভাব্য কারণ কী কী— সবই বহুচর্চিত। তা সত্ত্বেও প্রতি বছর শীত শুরুর সময়টি থেকে কয়েক মাস দিল্লিবাসীর স্বস্তির শ্বাস নেওয়া নিশ্চিত করা যাচ্ছে না কেন— সরকারকে তার জবাব দিতে হবে। এই মুহূর্তে প্রয়োজন, পরিণামহীন তাৎক্ষণিক পরীক্ষার পথটি বর্জন করে বছরভর দূষণ মোকাবিলায় সরকারের আগ্রাসী, সদর্থক পদক্ষেপ। কৃত্রিম বৃষ্টির নামানো সম্ভব হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, তার ফল স্বল্পমেয়াদি এবং নির্দিষ্ট স্থানেই সীমাবদ্ধ হত। তা হলে শুধুমাত্র তার উপর ভরসা করা হল কেন? অতীতের ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রে জোড়-বিজোড় সংখ্যা, জল ছিটিয়ে ধুলো কমানো— এমন পদক্ষেপগুলিও সুস্থায়ী সমাধানের দিশা দেখাতে পারেনি। উল্টে এ বছরের তথ্য বলছে, দিল্লির সাঁইত্রিশটি বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ন’টি ঠিক ভাবে কাজ করছিল দীপাবলির সময়। এই অপর্যাপ্ত তথ্য এবং আপৎকালীন কিছু ব্যবস্থায় ভরসা করেই কি তবে দিল্লির বিজেপি সরকার দূষণ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়েছে? ক্ষমতায় আসার পূর্বে তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির অন্যতম ছিল দিল্লির কুখ্যাত বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ। প্রতিশ্রুতি পূরণের কোনও ইঙ্গিত এখনও মেলেনি। দীপাবলি-পরবর্তী কালে দিল্লি ক্রমশ জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের পরিচিত পথেই হাঁটতে চলেছে। প্রতি বছরের এই কুনাট্য থেকে দিল্লিবাসীর মুক্তির আশা দূর অস্ত্।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Delhi Air pollution BJP

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy