E-Paper

সাক্ষাৎ নরক

রাজ্যে ক্ষতিকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিচালক দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড। কারখানা স্থাপনের আগেই উৎপন্ন পণ্য ও তৎসঞ্জাত বর্জ্যের প্রকৃতি ও পরিমাণের অনুপুঙ্খ হিসাব নিয়ে তবেই ছাড়পত্র দেওয়ার, পরিবেশকে নিরাপদ রাখতে কারখানায় ‘ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ সচল কি না— নজরদারি করার কথা তাদের।

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৫ ০৫:৩২

দেশে শিল্পক্ষেত্রে প্রকৃত উন্নয়ন হোক বা না হোক, দূষণের ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে। পদে পদে প্রমাণ হাওড়ায়। এই জেলা যে বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পের জন্য খ্যাত, তার চিহ্ন অনাদিকাল ধরে ডাঁই হয়ে থাকা জঞ্জাল। জেলার পুর এলাকার প্রান্তিক ভ্যাটগুলিতে অনৈতিক ভাবে রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে-চুরিয়ে পাশের পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন শিল্প-কারখানা থেকে টন টন শিল্পবর্জ্য এনে জমা করার প্রবণতা কিছুতে শোধরায় না। সেগুলি ভাগাড়ে নিয়ে যেতে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে পুরসভার এবং যাত্রাপথে জঞ্জাল রাস্তায় পড়ে গাড়ির চাকায় লেগে পরিবেশকে নরক করছে। এই ধরনের বর্জ্য বায়ু ও মাটি দূষণের প্রত্যক্ষ কারণ, নদীতে পড়লে জলজদের প্রাণনাশ, জলের রং বদলে তাকে অব্যবহার্য করে। এই বর্জ্যকে আগুনে পোড়ালে বিষাক্ত ধোঁয়া ফুসফুসের ক্ষতি করে, হাঁপানি বাড়ায়। শিল্পবর্জ্য চর্মরোগ, ক্যানসারের অন্যতম কারণ।

দৃশ্যদূষণ ও গন্ধের অভিযোগ তো রইলই, বাস্তুতন্ত্র ও স্বাস্থ্যের প্রতিও গুরুতর বিপদ এই বর্জ্য। তাই এগুলি ভ্যাটে বা রাস্তায় ফেলে যাওয়ায় স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা, যা লঙ্ঘনের উদ্দেশ্যেই কারখানাগুলি রাতের অন্ধকারে দুষ্কর্মটি সমাধা করছে। এই শিল্পবর্জ্য ক্ষতিকর বর্জ্যের শ্রেণিভুক্ত। রাজ্যে ক্ষতিকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিচালক দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড। কারখানা স্থাপনের আগেই উৎপন্ন পণ্য ও তৎসঞ্জাত বর্জ্যের প্রকৃতি ও পরিমাণের অনুপুঙ্খ হিসাব নিয়ে তবেই ছাড়পত্র দেওয়ার, পরিবেশকে নিরাপদ রাখতে কারখানায় ‘ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ সচল কি না— নজরদারি করার কথা তাদের। নিয়ম অনুযায়ী, যে বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়, তাকে আলাদা করে হলদিয়ার রাজ্য দূষণ পর্ষদের নিয়ন্ত্রণাধীন স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর বর্জ্য শোধন ও নিষ্কাশন প্রকল্পে পাঠানোর কথা। বর্জ্যের উৎপাদন, সংগ্রহ, পরিবেশবান্ধব ভাবে আবদ্ধ রাখা, পরিবহণ, কেন্দ্রে গ্রহণ, শোধনপ্রক্রিয়া সব কিছুই নথিবদ্ধ হওয়ার কথা। নিয়ম এড়ালেই দোষীদের দ্রুত ও সহজে ধরার কথা। কিছু দিন আগেও, নিষ্কাশন প্রকল্প থেকে খবর মিলেছিল, বর্জ্য পাঠানোর জন্য ১২৭৩টি সংস্থা তালিকাভুক্ত, অথচ মাত্র ২০-২২টি সংস্থা নিয়মিত বর্জ্য পাঠায়। অর্থাৎ, কুশীলবদের চিনতে সিসিটিভিরও প্রয়োজন নেই। পুরসভার পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার আশ্বাসও সমর্থনযোগ্য নয়। এরা পরিবেশ আইন ভেঙেছে, শ্রম ও খরচ বাঁচাতে দেশ ও মানুষের সঙ্গে শত্রুতা করছে। সরাসরি জরিমানা ও দণ্ডবিধানই বিধেয়।

এ কথা ঠিকই, জনবহুল দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কর্মিসংখ্যা ও পরিকাঠামো অপ্রতুল। কিন্তু, বর্জ্য পরিবহণে অসুবিধা থাকলে তা দূষণ পর্ষদকে জানানোরও অবকাশ রয়েছে। তবে, ব্যবসা করতে এসে এত প্রশাসনের মুখাপেক্ষী থাকাই বা কেন? কলকারখানাগুলির পরিবেশ কর বাড়ালে ও বর্জ্য নিষ্পত্তিতে ফাঁকি দেখলেই আরও জরিমানার ব্যবস্থা রাখলে সুবুদ্ধি ফিরতে পারে ও পর্ষদের তহবিলের স্বাস্থ্যোদ্ধারও হতে পারে। কর্মী নিয়োগ, বর্জ্য নিষ্কাশনে প্রযুক্তির আয়োজন করা যায়। তবে, উদ্যোগপতিদের কাছে এই বার্তা যেন না যায় যে, এলাকার আবহ শিল্পায়নের প্রতিকূল। অন্যান্য দেশের মতো এখানেও বৈজ্ঞানিক উপায়ে বর্জ্য শোধনকারী পেশাদার প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে প্রশাসনের গাঁটছড়া বাঁধা ও প্রক্রিয়াটিকে যথাসম্ভব অনমনীয় অথচ সরল রাখা জরুরি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Waste industry

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy