এ বারও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডিগ্রি সংক্রান্ত নথি প্রকাশ বিষয়ে সম্মতি মিলল না। কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন (সিআইসি) প্রধানমন্ত্রীর স্নাতক ডিগ্রি সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশের জন্য দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়কে যে নির্দেশ দিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়। সেই নির্দেশটিই বাতিল করল হাই কোর্ট। এর আগে, অরবিন্দ কেজরীওয়ালের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যের অধিকার আইনে প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রি সংক্রান্ত নথি প্রকাশের যে নির্দেশ গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার, গুজরাত হাই কোর্ট সেটি নাকচ করে কেজরীওয়ালকে জরিমানা করেছিল। দিল্লি হাই কোর্টের সাম্প্রতিক রায় মোতাবেক, ডিগ্রি, প্রাপ্ত নম্বর ইত্যাদি শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য ব্যক্তিগত তথ্যের আওতাভুক্ত। এই তথ্য জনস্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় ও ব্যক্তিগত বৃত্তে অনধিকার প্রবেশ প্রতিভাত হতে পারে। বলা হয়েছে, জনস্বার্থ ও মানুষের কৌতূহল— বিষয় দু’টির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
সত্য যে, সংবিধানে দেশের নির্বাচনে যোগ দেওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠি নেই। কিন্তু, আদালতের বর্তমান রায়ের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই ২০০২ সালের ভারত সরকার বনাম অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। অন্য কিছু বিষয়ের পাশাপাশি সে রায়ে আদালত বলেছিল যে, যাঁরা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন, তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রকাশ্যে জানাতে হবে। দিল্লি হাই কোর্টেরই একটি রায়কে বহাল রেখে এই রায় সংবিধানের ১৯ (১)(ক) অনুচ্ছেদটির বৃহত্তর তাৎপর্যে প্রণিধান করে। যেখানে প্রার্থীদের বিষয়ে সব জেনে তবেই কে প্রশাসনের ভার পাবেন, ভোটদাতার সেটি নির্বাচনের অধিকারকে মান্যতা দেওয়া হয়। জানানো হয়েছিল, প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, আর্থিক অবস্থা, এবং তিনি দুর্নীতিতে জড়িত কি না, এই তিন ধরনের তথ্য জনস্বার্থের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত, তাই তা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারের এক্তিয়ারে পড়ে না। গণতন্ত্রের স্বাস্থ্য ও নির্বাচনে স্বচ্ছতার খাতিরেই এ বিষয়ে জানার অধিকার আছে ভোটারদের। অর্থাৎ, নেতার শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পৃক্ত, অতএব এতে জনস্বার্থ জড়িত— পূর্বেই জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।
শিক্ষাগত যোগ্যতা— বা তার অভাব বিষয়ে— কত সহজ ভাবে সত্যটি বলা যায়, তার এক উদাহরণ পেশ করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। ইংল্যান্ডে তাঁর লেখাপড়ার ফল কেমন ছিল, সাংবাদিকের এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, একটি বৃহৎ শূন্য! কথাটি সহজে স্বীকার করায় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁর গ্রহণযোগ্যতার ইতরবিশেষ ঘটেনি, তাঁর কর্মদক্ষতাও পাল্টায়নি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েই বা এত রাখঢাকের প্রয়োজন কী? এ তো জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত প্রশ্ন নয়! যদি সত্যিই ডিগ্রি থেকে থাকে, তবে দেখিয়ে দিলে ল্যাঠা চুকে যায়। আর যদি না থাকে? তাতেই বা কী? ভারতের সব প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু বা মনমোহন সিংহের মতো উচ্চশিক্ষিত, পণ্ডিত ছিলেন না। নরেন্দ্র মোদী তাঁর যোগ্যতার কথাটি নির্দ্বিধায় জানালে দেশবাসী অন্তত এটুকু আশ্বাস পাবেন যে, তাঁদের প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত না হতে পারেন, সত্যটি স্বীকার করার মতো সৎসাহস তাঁর আছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)