E-Paper

সবার উপরে

ভারতে সাম্প্রতিক ভাষা-রাজনীতির প্রেক্ষাপটে, বিশেষত কেন্দ্রের হিন্দি ‘চাপিয়ে দেওয়া’র বিরুদ্ধে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির এক সুদৃঢ় ভাষিক ঐক্য দেখা যায়।

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২৫ ০৭:০৬

ভাষা নিয়ে গৌরব ও গর্ব অবশ্যই থাকবে, কিন্তু তার বশবর্তী হয়ে কখনও আইনের শাসন বা ‘রুল অব ল’ ভঙ্গ করা চলে না। অভিনেতা কমল হাসনের সাম্প্রতিক এক মন্তব্য ঘিরে কর্নাটকে প্রবল রাজনৈতিক ও ভাষিক উত্তেজনার আবহে সুপ্রিম কোর্ট যা বলল, তার সার কথাটি এই। ঘটনার কেন্দ্রে সদ্য মুক্তি পাওয়া একটি সিনেমা, চেন্নাইয়ে যার প্রচার-অনুষ্ঠানে অভিনেতা বলেন, কন্নড় ভাষা এসেছে তামিল থেকে। এর বিপুল বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় কর্নাটকে, বিরোধী দল বিজেপি এবং কন্নড়পন্থী সংগঠনগুলি প্রতিবাদে সরব হয়, অভিনেতার ক্ষমাপ্রার্থনার দাবি ওঠে, সঙ্গে ছবিটি কর্নাটকে বয়কট ও নিষিদ্ধ করার কথাও। এই ‘নিষেধ’কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছিল, তারই সূত্রে শীর্ষ আদালত বলেছে আইনের শাসনের নিঃশর্ত সর্বময়তার কথা।

ভাষা নিয়ে সংঘাত বা সিনেমার মতো একটি শিল্পবস্তুর উপরে নিষেধ ছাপিয়ে কেন আইনের শাসনের কথা বলল সুপ্রিম কোর্ট? বাক্‌স্বাধীনতা, শিল্প ও শিল্পীর স্বাধীনতা, এই সব কিছু ঘিরেই যদি কোনও বিরুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, সেই পরিস্থিতিতেও সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার ও সর্বোপরি আইন মেনে চলার কোনও বিকল্প নেই, হতে পারে না— এই কথাটি বোঝাতে। শীর্ষ আদালত স্পষ্ট বলেছে, কর্নাটকে উত্তেজিত জনতা ও স্বঘোষিত নজরদারেরা যা করছেন তা আইন হাতে তুলে নেওয়ার শামিল, এ চলতে দেওয়া যেতে পারে না— এ যেন কারও মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে বলা যে যত ক্ষণ না ক্ষমা চাওয়া হচ্ছে, ছবি মুক্তি পাবে না। এই আচরণ আইনের শাসনের পরিপন্থী, এবং সে কারণেই কর্নাটকে যা হচ্ছে তা স্রেফ ভাষা-অস্মিতা বা একটি সিনেমার ব্যাপার নয়, তার চেয়ে অনেক বড় কিছু— সংবিধান-বর্ণিত আইনের শাসন এখানে বিপদগ্রস্ত। কর্নাটক সরকারকেই শক্ত হাতে সেই আইনের শাসন ফেরাতে হবে, সঙ্গে প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি নির্বিঘ্নে চলাও নিশ্চিত করতে হবে— যে ছবি আগেই সেন্সর সার্টিফিকেট পেয়েছে, প্রেক্ষাগৃহে তার চলার পিছনে আর কোনও কিছুই বাধা হতে পারে না।

ভারতে সাম্প্রতিক ভাষা-রাজনীতির প্রেক্ষাপটে, বিশেষত কেন্দ্রের হিন্দি ‘চাপিয়ে দেওয়া’র বিরুদ্ধে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির এক সুদৃঢ় ভাষিক ঐক্য দেখা যায়। আবার সাম্প্রতিক ঘটনাটি প্রমাণ করে, তামিল তেলুগু কন্নড় মালয়ালমের মধ্যেও আছে মতান্তর এমনকি মনান্তরের পরিসর, যে কারণে এক মুখ্যত তামিল অভিনেতা তামিল ভাষাকে কন্নড়ের উৎস-ভাষা বলে বসলে তার প্রভাব পড়ে কর্নাটকে ছবির মুক্তিতে; দুঃখপ্রকাশ, ক্ষমাপ্রার্থনা বা মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে রাজ্য-রাজনীতি ও সমাজমাধ্যম তপ্ত হয়ে ওঠে। লক্ষণীয়, কর্নাটক হাই কোর্টও কমল হাসনের মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বলেছিল, অভিনেতা এক বার ক্ষমা চেয়ে নিলেই এই পরিস্থিতির সমাধান হত। কিন্তু শীর্ষ আদালত এ ক্ষেত্রেও স্পষ্ট করে দিয়েছে, নাগরিক কিছু একটা মন্তব্য করেছেন বলেই তাঁকে ক্ষমা চাইতে বলাটা আদালতের কাজ নয়। কেউ কোনও মন্তব্য করলে প্রতিমন্তব্য করা যেতে পারে, মতের বিপ্রতীপে অমত প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে, সিনেমাহলে ছবি আটকানো যেতে পারে না— ছবি দেখা বা না-দেখার সিদ্ধান্তটি দর্শকদের। এটাই আইনের শাসন, এবং তা সবার উপরে। সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে আরও এক বার তা স্পষ্ট হল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kamal Haasan Supreme Court of India film

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy