E-Paper

অতঃপর

সাম্প্রতিক উন্নয়নে কিছুটা ভূমিকা রয়েছে কানাডার নেতৃত্ব পরিবর্তনেরও। প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ইন্দো-প্যাসিফিক মহাসাগরীয় অঞ্চলে সহযোগিতা বৃদ্ধির অঙ্গ হিসেবে সচেতন ভাবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেছেন।

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৫ ০৫:২৭

কূটনৈতিক সম্পর্কে বিরতির নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে। ভুল বোঝাবুঝি, বিচ্ছিন্নতা, সংঘর্ষ এমনকি যুদ্ধ— যা-ই হোক না কেন, একটি সাময়িক বিরতি সম্পর্ক পুনঃ স্থাপনের সুযোগটুকু গড়ে দিতে পারে। কানাডার বিদেশমন্ত্রী অনিতা আনন্দের তিন দিনের সফরে নয়াদিল্লিতে আগমনকালে ভারত-কানাডার সম্পর্কে তেমনই এক মুহূর্তের সূচনা হল। অথচ, দু’বছর আগে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল খলিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদী হরদীপ সিংহ নিজ্জরের হত্যার কারণে। সেই সময় জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বাধীন তৎকালীন কানাডিয়ান সরকার অভিযোগ তোলে যে তাদের নাগরিক নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিল ভারতের গুপ্ত সংস্থাগুলি। দিল্লি সেই অভিযোগ অস্বীকার করে বটে, তবে ওই বিবাদের জেরে দু’তরফেই বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত, ভিসা পরিষেবা ব্যাহত এবং কূটনীতিকদের বহিষ্কার-সহ একাধিক পদক্ষেপ করা হয়। কানাডার বিদেশমন্ত্রীর ভারত সফরে ইঙ্গিত স্পষ্ট— উভয় দেশই পূর্বের ‘কূটনৈতিক স্থিতাবস্থা’র পর্যায় অতিক্রম করতে বদ্ধপরিকর।

সাম্প্রতিক উন্নয়নে কিছুটা ভূমিকা রয়েছে কানাডার নেতৃত্ব পরিবর্তনেরও। প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ইন্দো-প্যাসিফিক মহাসাগরীয় অঞ্চলে সহযোগিতা বৃদ্ধির অঙ্গ হিসেবে সচেতন ভাবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেছেন। বস্তুত, বর্তমান সরকারের উদ্যোগেই গত জুন মাসে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে বিশেষ আমন্ত্রিত হিসেবে কানাডা সফর করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সঙ্গে পরবর্তী কালে হাইকমিশনের পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্তরের সংলাপের পুনঃসূচনা দুই তরফেই নিরাপত্তা ও আস্থার জন্য প্রয়োজনীয় ভিত্তি গড়ে তুলেছে। অন্য দিকে, বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও এই পুনর্নির্মাণে একটি শক্তিশালী বাহ্যিক চাপ প্রদান করেছে। লক্ষণীয়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পর থেকে দুই দেশের, বিশেষত আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার কানাডার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। মার্ক কার্নি যখন দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে শপথ নেন, তখন তাঁর অন্যতম প্রতিশ্রুতিই ছিল দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি। কিন্তু ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি কানাডার অর্থনীতির ক্রমাগত ক্ষতি করে চলেছে। এই অবস্থায় আমেরিকার উপরে তার অর্থনৈতিক নির্ভরতা কমাতে আগ্রহী অটাওয়া। আর, ভারতেরও প্রয়োজন এমন এক অংশীদার, যে তার কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনকে গুরুত্ব দেবে। অন্য দিকে, উভয়ের ক্ষেত্রেই চিনের ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক ও বিশ্বব্যাপী প্রভাবের ভারসাম্য রক্ষা জরুরি হয়ে পড়েছে।

সাম্প্রতিক সফরে উভয় দেশই বেশ কিছু সহযোগিতামূলক পদক্ষেপের বিষয়ে একমত হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়ে মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনা শীঘ্রই শুরু হওয়ার কথা। সুযোগ রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ, পরিবেশবান্ধব শক্তি এবং ডিজিটাল অর্থনীতির ক্ষেত্রে সহযোগিতার বাড়ানোরও। সন্দেহ নেই, ভারত ও কানাডা দুই দেশের কাছেই বাণিজ্য, জ্বালানি এবং নিরাপত্তা বৈচিত্র অপরিহার্য। প্রসঙ্গত, খলিস্তানপন্থী শিবির আগামী দিনেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রভাবিত করতে পারে। তাই নিরাপত্তা পরিসরে সতর্কতার সঙ্গে, কিন্তু অর্থনীতি ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বৃহত্তর স্তরে জড়িত থাকা জরুরি— দুই দেশের জাতীয় স্বার্থ এবং বিশ্বব্যবস্থার স্থিতিশীলতার জন্য।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Government of India Trade Deal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy