Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Supreme Court

কার ধর্ম

ভারতীয় সংবিধানের সবচেয়ে শক্তিশালী বার্তাটি নাগরিকের অধিকার বিষয়ে। এই বার্তাটি রক্ষা করা জরুরি।

সুপ্রিম কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্ট। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:০৪
Share: Save:

ভারতের সংবিধান ধর্মাচরণের স্বাধীনতা দিয়েছে, কিন্তু জোর করে ধর্মান্তরণের নয়, আবারও জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। জোর করে, কিংবা লোভ দেখিয়ে এক ধর্মের মানুষকে অন্য ধর্ম নিতে বাধ্য করা সংবিধান বিরোধী, বেআইনি ও অনৈতিক, উপরন্তু জাতীয় সুরক্ষার পক্ষেও বিপজ্জনক, আগেই বলেছিল শীর্ষ আদালত। এ-হেন ঘটনার মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকারকে পদক্ষেপ করতেও নির্দেশ দিয়েছিল, রাজ্যগুলির কাছ থেকে জবরদস্তি ধর্মান্তরণ সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে বলে কেন্দ্র এক সপ্তাহ সময় চেয়েছে। জোর করে ধর্মান্তরণকে যে আর পাঁচটা সমস্যার মতোই কেবল ‘অতি গুরুতর’ ব্যাপার বলেই সুপ্রিম কোর্ট ক্ষান্ত হয়নি, দেশ ও সংবিধানের পরিপ্রেক্ষিতে তার বিস্তৃত ব্যাখ্যা দিয়েছে, সেখানেই বিষয়টির গুরুত্ব। এ কথা মানতেই হবে যে, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে জোর করে ধর্মান্তরণের ঘটনা সাম্প্রতিক কালে প্রচারমাধ্যমে আসছে। অভিযোগ উঠেছে যে, গত অক্টোবর মাসের শেষে উত্তরপ্রদেশে মেরঠের এক প্রত্যন্ত গ্রামে চারশো জন দরিদ্র গ্রামবাসীকে অন্য ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা হয়েছে। কোভিডকালে লকডাউনের সময় নাকি ওই গ্রামবাসীরা অভিযুক্তদের ‘সাহায্য’ পেয়েছিলেন। খাদ্য, বস্ত্র, ঔষধ, অর্থ পরে নাকি হয়ে উঠেছিল ধর্মান্তরণের হাতিয়ার, সাহায্যপ্রাপ্তদের দীপাবলি পালনে বাধা দেওয়া হয়েছিল।

দান-অনুদানের এই প্রবণতাকেই আলাদা করে তুলে ধরতে চেয়েছে শীর্ষ আদালত। বলেছে, সঙ্গতিহীনকে সাহায্য খুব ভাল কাজ, তা বলে ধর্মান্তরণের জন্য নয়— প্রলোভন হয়ে দাঁড়ালে তা অতি বিপজ্জনক ও অসাংবিধানিক। অবশ্য একটি ভাবনা এড়ানো যাচ্ছে না। মাননীয় শীর্ষ আদালতের রায়ের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেও প্রশ্ন তুলতেই হচ্ছে— নাগরিকের অধিকার বিষয়ে। কে কাকে বাধ্য করছে, তা কি এই ভাবে বাইরে থেকে বিচার করা সম্ভব? যদি ধর্মান্তরিত নিজে অভিযোগ না জানান, তা হলে কি তাঁকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে, এই দাবি প্রতিষ্ঠা করা চলে? দরিদ্র গ্রামবাসী বলেই কি তাঁর নিজের জীবনের পথ নির্বাচনের অধিকার তাঁর নিজের থাকবে না? নাগরিক নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি খাদ্য-বাসস্থান ইত্যাদি সুরক্ষার প্রতি আকৃষ্ট হবেন কি না, কিংবা কোন ধর্মে আগ্রহী হবেন। এ বিষয়ে সমাজ কিংবা অাইন-আদালত কতখানি প্রভাব বিস্তার করতে পারে?

সুপ্রিম কোর্টের এই রায় আসলে বৃহত্তর ও বহুস্তরীয় একটি বিষয় সামনে নিয়ে আসে। ব্যষ্টি ও সমষ্টির সংঘর্ষের মধ্যে নাগরিক বিপন্ন বোধ করলে নিশ্চয়ই রাষ্ট্র পাশে থাকবে। কিন্তু বিপন্নতার অভিযোগটি কে কী ভাবে পেশ করছে, তার মধ্যেও পার্থক্য করা জরুরি। ধর্মান্তরণের বিরুদ্ধে ভারতের নানা রাজ্য আইন করেছে বা করতে চলেছে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এ কাজের পিছনে মূল চালিকাশক্তি শাসনতন্ত্র তথা রাজনীতির প্রণোদনা, নাগরিকের জীবন ও অধিকারের সুরক্ষা তত নয়। এই ধর্মান্তরণ প্রসঙ্গেই ভারতের অন্য আদালতের অন্য মতও দেখা গিয়েছে। গত জুন মাসে দিল্লি হাই কোর্ট বলেছিল, যে কোনও ব্যক্তির ধর্মান্তরিত হওয়ার, এবং যে কোনও ধর্মমত প্রচারেরও অধিকার রয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের সবচেয়ে শক্তিশালী বার্তাটি নাগরিকের অধিকার বিষয়ে। এই বার্তাটি রক্ষা করা জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Supreme Court Religion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE