E-Paper

তবুও অপর্যাপ্ত

স্বস্তিদায়ক পদক্ষেপ। তবে, মনে রাখতে হবে নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধানে শুধুমাত্র সিসি ক্যামেরা যথেষ্ট নয়।

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:০১
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

গণতান্ত্রিক দেশে সিসি ক্যামেরা দ্বারা নজরদারি চালালে তা নাগরিকদের গোপনীয়তার অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে— যুক্তিটি জোরালো। তবে ভারতে এ যুক্তি প্রয়োগে বেশ অসুবিধা। কারণ, ২০২৪ সালের নথিবদ্ধ তথ্য অনুযায়ীই, দেশে প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে একটি করে অপরাধ সংঘটিত হয়। আর ২০২২-এ ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো-র সমীক্ষায়, প্রতি ঘণ্টায় দেশে মহিলাদের বিরুদ্ধে ৫১টি অপরাধ নথিভুক্ত হয়। অথচ বহু অপরাধের খবরই থানার নথি পর্যন্ত পৌঁছয় না, ফলে সার্বিক চিত্র আরও বিপজ্জনক, বোঝাই যায়। সুতরাং নিরাপত্তা ও ব্যক্তিতথ্যের গোপনীয়তা এই দুইয়ের দড়ি-টানাটানিতে অনেক সময়েই প্রথমটি বেশি গুরুত্ব দাবি করে। সন্দেহ নেই, সিসি ক্যামেরা রয়েছে দেখলে কিছু দুষ্কৃতী ধরা পড়ার ভয়ে নিবৃত্ত হতে পারে। সুবিধা হয় তদন্তেরও। দিল্লির গণধর্ষণ কাণ্ডের পর দেশের ঘরে ও বাইরে নারীর প্রতি হিংসা রুখতে নিরাপত্তা কাঠামো ঢেলে সাজাতে নির্ভয়া ফান্ড-এর ব্যবস্থা হয়। এরই একটি প্রকল্পের আওতায় নজরদারির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অভিপ্রায়ে যত সম্ভব বেশি এলাকাকে সিসি ক্যামেরার অধীনে আনা শুরু। এই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের টাকায় কলকাতার অলিগলিতে আরও প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ক্যামেরা বসানো এবং অকেজো ক্যামেরা পরিবর্তন ইত্যাদি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু করেছে পুলিশ।

স্বস্তিদায়ক পদক্ষেপ। তবে, মনে রাখতে হবে নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধানে শুধুমাত্র সিসি ক্যামেরা যথেষ্ট নয়। বিপদকে ঠেকাতে যে রক্ষণব্যবস্থার অষ্টপ্রহর সক্রিয় থাকার কথা, ক্যামেরার চোখ সেই সম্পূর্ণ প্রতিরোধ-বর্মের একটি ছোট ও মূল্যবান অঙ্গ মাত্র। ক্যামেরাগুলির কিছু অক্ষমতার জায়গাকে অস্বীকার করা যায় না। এই যন্ত্র-চোখ অপরাধকে দেখে, কিন্তু আটকাতে পারে না। যত ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানো হবে, তাতে নজরদারি, রক্ষণাবেক্ষণ ও দৃশ্যগুলিকে সুরক্ষিত রাখার স্বার্থে যোগ্য কর্মীর প্রয়োজনও বাড়বে, যার অভাবে এই ক্যামেরা কেবলই খেলনা হয়ে থাকবে। সিসিটিভি ক্যামেরা বিকল হওয়া বা অপরাধমনস্কের তরফে তাকে বিকল করে রাখা, ফুটেজ নষ্ট করার উদাহরণ, ক্যামেরার দৃষ্টিশক্তির বাইরের অংশে দুষ্কর্ম অবাধ হওয়া ও ফলাফলে প্রমাণাভাবে দোষীর ছাড়া পাওয়ার ঘটনার সঙ্গেও মানুষ বিলক্ষণ পরিচিত।

অতএব, প্রশাসন যদি সত্যিই নিরাপত্তা আঁটসাঁট করতে চায় তবে শুধু প্রযুক্তির উপর নির্ভরতাই যথেষ্ট নয়। যে ভয় মেয়েদের বা সাধারণ নাগরিকের জীবনযাপনের নিরাপত্তায় বাধা দেয়, গোটা পরিকাঠামোর সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সেই ত্রাসের অস্ত্রের সূচিমুখটিই ঘুরিয়ে দিতে হবে সমাজবিরোধীদের দিকে। তার প্রকরণগুলি অজানা নয়। বিপদের আশঙ্কাকে অনেকখানিই হ্রাস করবে কলকাতার অলিগলিতে, করিডর, শৌচালয়, বাসস্টপ, স্টেশন, পার্কিং লটে জোরালো আলোর ব্যবস্থা। নির্জন এলাকায় পর্যাপ্ত রক্ষী, কিছু দূর অন্তর পুলিশের ও জরুরি কিছু ফোন নম্বর লিখে রাখলে তা অপরাধীকে প্রশাসনিক সক্রিয়তার বার্তা দেবে। পুলিশকর্মীদের টহলদারি হতে হবে নিয়মিত, আচমকাও। স্থানীয় থানা নিরাপত্তার অ্যাপগুলি সম্পর্কে সচেতন হলে, কিছু দূর অন্তর বিপদঘণ্টির ব্যবস্থা রাখলে কাজ হতে পারে। আসল কথা, আইন মজুত, সুরক্ষার কৌশলও অনেক। কিন্তু ব্যবস্থা ও তার প্রয়োগের মধ্যে ফাঁকটি সুবিশাল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

crimea CCTV camera

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy