E-Paper

শিকার

বাংলাদেশের জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং এডিটরস’ গিল্ডের সভাপতি গ্রেফতার হয়ে পুলিশি হেফাজতে, এখন জানা যাচ্ছে যে ঢাকার বহু সিনিয়র সাংবাদিক গ্রেফতারি এড়াতে আত্মগোপন করে আছেন।

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:১৭

পেশাসূত্রে নানা ঝামেলা-ঝক্কির মোকাবিলা সংবাদকর্মীরা করে থাকেন। কিন্তু সংবাদজীবী হওয়ার কারণে যদি প্রাণটি বেঘোরে যেতে বসার উপক্রম হয়, তখন বুঝতে হবে আসল সমস্যা অন্য ও অন্যত্র। শেখ হাসিনা-উত্তর বাংলাদেশে অগণিত সংবাদকর্মী এখন সেই সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। প্রায় দেড়শো জন সাংবাদিক-সম্পাদক রাতারাতি হয়ে দাঁড়িয়েছেন ‘অপরাধী’: খুন, গণহত্যা, মাদক চোরাচালান, মানবতাবিরোধী নানা গুরুতর অপরাধে চিহ্নিত ও অভিযুক্ত। বাংলাদেশের জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং এডিটরস’ গিল্ডের সভাপতি গ্রেফতার হয়ে পুলিশি হেফাজতে, এখন জানা যাচ্ছে যে ঢাকার বহু সিনিয়র সাংবাদিক গ্রেফতারি এড়াতে আত্মগোপন করে আছেন। এই সবই অতি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

প্রতিবেশী দেশের ঘটনাক্রম দেখে উদ্বেগ বোধ না করে পারা যায় না, কারণ সাংবাদিকের স্বাধীনতার স্বীকৃতি শুধু সংবাদমাধ্যমের সুস্থতার জন্য জরুরি নয়, রাষ্ট্রের সার্বিক সুস্থতার জন্যই প্রয়োজন। বিশেষত যদি সে দেশ গণতন্ত্রের কথা বলে। সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশেই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সাম্প্রতিক কালে বারংবার বিঘ্নিত ও লঙ্ঘিত, ভারতীয় নাগরিকমাত্রেই জানেন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে এই অঞ্চল এখন কতখানি নীচের দিকে। শাসকের সঙ্গে যুঝে কাজ করা উপমহাদেশের সংবাদকর্মীদের জন্য নতুন বিষয় নয়। তবুও সাম্প্রতিক বাংলাদেশে তাঁদের দমন-পীড়নের সীমা আতঙ্ক জাগাচ্ছে কারণ সেখানে সংবাদকর্মীদের দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রাক্তন শাসকের রাজনৈতিক অপরাধের দোসর হিসাবে। তারই খেসারত পুলিশি হেনস্থা, গ্রেফতার; গুরুতর মামলার আসামি-তালিকায় তাঁদের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে গণহত্যাকারী, ষড়যন্ত্রকারী, প্ররোচক হিসাবে। ভাঙচুর হয়েছে খবরকাগজ ও টিভি চ্যানেল দফতর, ‘দখল’ করা হচ্ছে প্রেস ক্লাব। আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘রিপোর্টারস উইদাউট বর্ডারস’ গভীর উদ্বেগে অন্তর্বর্তিকালীন সরকারকে বলেছে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে।

গত মাসের ঘটনাবলির সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে বুঝতে অসুবিধা হয় না, সংবাদকর্মীরা এখানে পরিবর্তিত পরিস্থিতির রাজনৈতিক শিকার। অন্তর্বর্তী সরকার এখন যে দেশ মেরামতের কথা বলছে, সাংবাদিক-নিপীড়নের চিত্রটি তার সম্পূর্ণ বিপরীত বাস্তবের। সাংবাদিকদের নামে খুনের মামলা দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের পুলিশ— নতুন ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা বাংলাদেশে এ দুঃস্বপ্নের শামিল। আবার অপ্রিয় হলেও এই সত্যটি না বলে উপায় নেই, প্রেস ক্লাব দখল থেকে দফতর ভাঙচুরে জড়িতদের রাজনৈতিক পরিচয় হিসাবে উঠে আসছে বিএনপি ও বিশেষত জামায়াতে ইসলামীর নাম। অর্থাৎ আগের জমানার শাসক ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করাই লক্ষ্য, সংবাদকর্মীরা তারই ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’। দশ বছর আগের সংস্কৃতিমন্ত্রী বা মৌলবাদ-বিরোধিতায় সতত সরব বুদ্ধিজীবীও যেখানে গ্রেফতারি থেকে ছাড় পান না, সংবাদকর্মীদের দশা সেখানে সহজে অনুমেয়। রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের সঙ্গে বাংলাদেশের বহুকালীন পরিচয়, তবুও সাংবাদিকের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার নিয়ে যে পরিস্থিতি সে দেশে সম্প্রতি উদ্ভূত হয়েছে, তাতে উপমহাদেশীয় নাগরিক হিসাবে গভীর উদ্বিগ্ন, বিপন্ন হতে হয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Journalists Bangladesh Sheikh Hasina

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy