Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Malnutrition

নীরব মহামারি

ভারতে আজ খাদ্য উদ্বৃত্ত, কিন্তু অপুষ্টির গ্রাস থেকে মুক্ত হয়নি ভারত। এক নীরব মহামারির মতো অপুষ্টি ভারতের দরিদ্র মানুষকে দুর্বল করছে।

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২২ ০৫:০৩
Share: Save:

ভারতে আজ খাদ্য উদ্বৃত্ত, কিন্তু অপুষ্টির গ্রাস থেকে মুক্ত হয়নি ভারত। এক নীরব মহামারির মতো অপুষ্টি ভারতের দরিদ্র মানুষকে দুর্বল করছে, নানা ধরনের জীবাণুর সহজ শিকার হচ্ছেন তাঁরা। এর অন্যতম যক্ষ্মা। মেঙ্গালুরুর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা অপুষ্টির সঙ্গে যক্ষ্মার প্রকোপের সম্পর্ক সন্ধান করতে গিয়ে দেখেছেন, ভারতে প্রতি বছর অন্তত নয় লক্ষ যক্ষ্মা-আক্রান্ত মানুষ অপুষ্টির জন্য যক্ষ্মার শিকার হচ্ছেন, যা প্রতি বছর মোট নতুন সংক্রমণের (বছরে ২৬ লক্ষ) এক-তৃতীয়াংশ। ভারতের মতো দেশে যক্ষ্মার জীবাণু প্রায় সকলের শরীরে রয়েছে, দীর্ঘ দিন অন্নাভাবে শীর্ণ শরীর তাকে প্রতিরোধ করতে পারে না বলে সেই জীবাণু সক্রিয় হয়ে উঠে অনর্থ ঘটায়। যক্ষ্মা জীবাণুর মারণক্ষমতা কোভিড ভাইরাসের চেয়েও তীব্র। ভারতে প্রতি বছর সাড়ে চার লক্ষ যক্ষ্মা-আক্রান্ত মারা যান, দৈনিক গড়ে এক হাজার। তা সত্ত্বেও, কোভিড নিবারণে যে তৎপরতা দেখা গেল, তার অতি ক্ষুদ্রাংশও কেন দেখা যায় না যক্ষ্মা নিবারণে। বিশ্বের সর্বাধিক যক্ষ্মা রোগী বাস করেন ভারতে, যক্ষ্মাজনিত মৃত্যুর সংখ্যাও সর্বাধিক। এ কি ভারতের লজ্জা নয়? কেন যক্ষ্মা নিবারণ ভারতে গুরুত্ব পায় না?

এর একটিই উত্তর খুঁজে পাওয়া গিয়েছে বার বার। তা হল, কোভিড ভাইরাস ধনী-দরিদ্র দেখে না, কিন্তু যক্ষ্মার জীবাণু দরিদ্রদের আক্রমণ করে বেশি, কারণ তাঁদের শরীরই অপুষ্ট, দুর্বল। রাষ্ট্রের সম্পদ ও কর্মশক্তি, দুই-ই বরাবর অধিক নিয়োজিত হয় বিত্তবানের সুরক্ষায়। কোভিড পরিস্থিতিতে তাই আরও বিপন্ন হয়েছেন যক্ষ্মারোগীরা। তার একটি কারণ, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়োজিত করা হয়েছে করোনা সংক্রমণের উপর নজরদারির কাজে। ফলে, যক্ষ্মারোগী চিহ্নিত করা এবং তাঁদের চিকিৎসার বৃত্তে আনার কাজের গতি শিথিল হয়ে যায়। যে দেশগুলি থেকে নতুন যক্ষ্মা সংক্রমণের তথ্য আসা সবচেয়ে কমেছে, তার শীর্ষে রয়েছে ভারত, বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ওই সংস্থার তথ্য অনুসারে, এক দশক ধরে যক্ষ্মায় মৃত্যুর সংখ্যা ধারাবাহিক ভাবে কমে আসার পরে ২০২০ এবং ২০২১ সালে বেড়েছে। চলতি বছরেও ভারতে যক্ষ্মায় মৃত্যুর সংখ্যা ২০১৯-এর চেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা। রোগ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা পরিষেবার বণ্টনে এই বৈষম্য ভারতে প্রশাসনের স্বরূপটি বুঝিয়ে দেয়।

তবে দেশবাসীর বিপন্নতার আরও বড় কারণটি হল অপুষ্টিতে বৃদ্ধি। অতিমারি দেখা দেওয়ার আগেই ভারতে অপুষ্টির প্রকোপ বাড়ছিল। জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার সাম্প্রতিকতম রিপোর্টে (২০১৯-২০) ধরা পড়েছে, শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির নানা লক্ষণ আগের তুলনায় বেড়েছে। যক্ষ্মা বিষয়ক গবেষণার রিপোর্টটি ইঙ্গিত দিচ্ছে, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও অপুষ্টির প্রকোপ ব্যাপক। তার কারণগুলি বোঝা কঠিন নয়। এক দিকে কৃষির সঙ্কট, ব্যাপক কর্মহীনতা, খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে বেসামাল কৃষিজীবী, শ্রমজীবী পরিবারগুলি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে ব্যয় কমিয়েছে, দুধ-ফল-ডিম চলে গিয়েছে তাদের সাধ্যের বাইরে। অন্য দিকে, কেন্দ্র কেবলই খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তার প্রকল্পগুলিতে ব্যয় কমিয়েছে। দরিদ্রের দেহ যত শীর্ণ, দুর্বল হয়েছে, ততই সংক্রামক রোগ ছড়িয়েছে। কর্মক্ষমতা কমেছে, বেড়েছে কর্মক্ষম মানুষের অকালমৃত্যু। দেশে নতুন করে তৈরি হচ্ছে দারিদ্রের ফাঁদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Malnutrition India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE