E-Paper

অক্ষমণীয়

স্বাস্থ্যবিমা গ্রহণের সুবিধার পক্ষে বিশেষ ভাবে সাক্ষ্য দিচ্ছে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি। অনেক রাজ্যেরই নিজস্ব স্বাস্থ্যবিমা বহু আগে থেকে রয়েছে, ভাল কাজও করছে।

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:১৫
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল ছবি।

পশ্চিমবঙ্গ এবং দিল্লি, এই দুই রাজ্যের প্রবীণদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সম্প্রতি সত্তরোর্ধ্ব সব নাগরিকের জন্য আয়ুষ্মান ভারত-প্রধানমন্ত্রী জনআরোগ্য যোজনার সুযোগ প্রসারিত করেছে কেন্দ্র। আর্থ-সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে ভারতের সব প্রবীণই পাঁচ লক্ষ টাকা স্বাস্থ্য বিমার সুযোগ পেতে পারেন, এই দুই রাজ্যের প্রবীণরা ছাড়া। কারণ, ওই দুই রাজ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্যবিমা গ্রহণ করেনি। আর্থিক সহায়তা হারানো ছাড়াও, এর ফলে এই দুই রাজ্যের প্রবীণদের স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত কোনও তথ্যও থাকবে না কেন্দ্রের কাছে, আক্ষেপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এই আক্ষেপ প্রকারান্তরে অভিযোগ— কেন্দ্র আর্থিক ভাবে দুর্বল শ্রেণির জন্য স্বাস্থ্যবিমার সহায়তা দিলেও এই রাজ্য দু’টি তা গ্রহণ করছে না কেন? পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের এক মুখপাত্র এই পুরনো প্রশ্নের পরিচিত উত্তরটিই দিয়েছেন, রাজ্যের নিজস্ব স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প রয়েছে, তাই কেন্দ্রের প্রকল্পের প্রয়োজন নেই। বিশেষত যেখানে কেন্দ্রের স্বাস্থ্যবিমা কেবল দরিদ্রতম চল্লিশ শতাংশের জন্য, সেখানে রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা যে কেউ পেতে পারেন। অযথা কেন রাজ্য সরকার কেন্দ্রের বিমা প্রকল্পের চল্লিশ শতাংশ খরচ জোগাতে যাবে? নাগরিকের তরফে পাল্টা প্রশ্ন করাই যায়, কেন নয়? কেন্দ্রের যে কোনও প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণ করার অধিকার রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মানুষেরও। দেশবাসীর করের টাকাতেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের খরচ চলে, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের টাকাও রয়েছে। রাজ্য সরকার চাইলে তার নিজস্ব প্রকল্প চালু করতেই পারে, কিন্তু তা হতে হবে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের পরিপূরক। এ রাজ্যেই তার দৃষ্টান্ত রয়েছে— রেশন ব্যবস্থা, কৃষক অনুদানে কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রকল্প একই সঙ্গে চলছে। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রকল্পের মধ্যে প্রতিযোগিতার রূপও নিতে পারে। কিন্তু কেন্দ্রের প্রকল্পের জায়গা নিতে পারে না রাজ্যের প্রকল্প। সর্বোপরি, স্বাস্থ্যবিমার মতো ব্যয়বহুল প্রকল্পে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা নিলে রাজ্যের যে সাশ্রয় হবে, তার সুযোগ ছাড়ার কারণ কী?

স্বাস্থ্যবিমা গ্রহণের সুবিধার পক্ষে বিশেষ ভাবে সাক্ষ্য দিচ্ছে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি। অনেক রাজ্যেরই নিজস্ব স্বাস্থ্যবিমা বহু আগে থেকে রয়েছে, ভাল কাজও করছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দক্ষিণের রাজ্যগুলি, এমনকি কেরল, তামিলনাড়ু, কর্নাটকের মতো বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলিও, কেন্দ্রের বিমার সুযোগ নিচ্ছে পুরোমাত্রায়। অনেক রাজ্য তাদের নিজেদের স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পকে কেন্দ্রের প্রকল্পের সঙ্গে মিলিয়ে নিচ্ছে। যেমন তেলঙ্গানা তার ‘আরোগ্যশ্রী’ প্রকল্প, ওড়িশা সরকার ‘গোপবন্ধু জন আরোগ্য যোজনা’ সংযুক্ত করছে প্রধানমন্ত্রী জনআরোগ্য যোজনার সঙ্গে। প্রশ্ন উঠতে বাধ্য, অন্য রাজ্যগুলি যদি তাদের নিজস্ব স্বাস্থ্যবিমা রেখেও কেন্দ্রীয় বিমার সুযোগ নিতে পারে, পশ্চিমবঙ্গই বা পারবে না কেন? ভারতে এখনও চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে দারিদ্র সীমার নীচে চলে যাচ্ছে বহু পরিবার। এই সঙ্কট আরওতীব্র প্রবীণদের ক্ষেত্রে। স্বাস্থ্যবিমা এই বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে পারে। কেন্দ্রের স্বাস্থ্যবিমা থেকে প্রবীণদের বঞ্চিত করা ক্ষমার অযোগ্য অন্যায়।

তবে স্বাস্থ্যবিমার কার্ডই যে উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার জাদুকাঠি, এমন নয়। উত্তরপ্রদেশে কেন্দ্রের স্বাস্থ্যবিমার গ্রাহক পাঁচ কোটিরও বেশি, কিন্তু প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে বিমার অধীনে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা এখনও অবধি মাত্র আটাশ লক্ষ। যেখানে তামিলনাড়ুতে গ্রাহক সংখ্যা এক লক্ষেরও কম, কিন্তু বিমার অধীনে ভর্তির সংখ্যা নব্বই লক্ষ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর অন্যতম কারণ চিকিৎসা পরিকাঠামোর মানে হেরফের। অতএব স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়ামের খাতে বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না, সরকারি হাসপাতাল ও অন্যান্য চিকিৎসা কেন্দ্রের মান উন্নয়নে যথেষ্ট বিনিয়োগ করতে হবে কেন্দ্র এবং রাজ্য, উভয় সরকারকে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Ayushman Bharat Yojana Narendra Modi

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy