প্রতীকী ছবি।
ঘর বাঁধিবার পূর্বে পাত্র-পাত্রীর পারস্পরিক পছন্দ-অপছন্দকে জানিয়া-বুঝিয়া লওয়া একান্ত আবশ্যক। ইহাতে ভবিষ্যতে মেয়েদের উপর পারিবারিক হিংসার পরিমাণ কমিতে পারে। কেরল সিপিআইএমের মুখ্য সচেতক কে কে শৈলজা বিবাহ-পূর্ব কাউন্সেলিং-কে অত্যাবশ্যক করিবার পক্ষে যে সওয়াল করিয়াছেন, তাহার মূল সুরটি এই রূপ। কেরলে সম্প্রতি পণ-সংক্রান্ত নিগ্রহ এবং মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে আসিয়াছে। ভারতের সর্বাপেক্ষা শিক্ষিত রাজ্যটিতে মেয়েদের অবস্থা লইয়া বিভিন্ন মহলে আলোচনাও হইয়াছে। কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান যেমন প্রস্তাব দিয়াছেন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হইবার সময় পড়ুয়াদের নিকট হইতে মুচলেকা গ্রহণ করা হউক, তাঁহারা ভবিষ্যতে পণ দেওয়া এবং লওয়া হইতে বিরত থাকিবেন। প্রাক্-বিবাহ কাউন্সেলিং সংক্রান্ত শৈলজার প্রস্তাবটিও আসিয়াছে এই পরিপ্রেক্ষিতে। একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কথা তিনি স্মরণ করাইয়া দিয়াছেন— বিবাহোত্তর জীবন শুধুমাত্র অর্থ এবং যৌনসম্পর্কের উপর নির্ভর করে না। ইহা আজীবন এক বন্ধুত্বের সূচনাও বটে, যাহাকে সযত্নে লালন করা প্রয়োজন।
প্রশ্ন হইল, ভারতের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কথাটির তাৎপর্য বোঝে কি? স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটি বন্ধুত্বের— ইহা স্বীকার করিতে হইলে উভয়কে সর্বাগ্রে একাসনে বসাইতে হয়। বহু পরিবারই সেই পথে চলিতে রাজি নহে। এখনও বহু পরিবার বিবাহকে ব্যবসায়িক দেনাপাওনার বাহিরে অন্য কিছু ভাবিতে চাহে না। শ্বশুরবাড়িতে বধূর সম্মান নির্ভর করে তিনি কত নগদ, গহনা, জিনিসপত্র আনিলেন, তাহার উপর। অনেক ক্ষেত্রে ধরিয়া লওয়া হয়, স্বামী এবং তাঁহার আত্মীয়দের পছন্দই শেষ কথা। বধূটির নিজস্ব কোনও পছন্দ থাকিতে পারে না। তাঁহাকে পরিবারের অনুশাসন অনুযায়ী চলিতে হইবে। এই নিয়ন্ত্রণকামী মানসিকতা বধূটিকে তো বটেই, ক্ষেত্রবিশেষে তাঁহার স্বামীকেও চালনা করিতে চাহে। ফলে, বৈবাহিক সম্পর্কের সূচনাতেই গোড়াটি আলগা হইয়া পড়ে। ভাঙা সম্পর্কের ক্ষত শুধুমাত্র মহিলাদেরই নহে, পুরুষদেরও বহিয়া বেড়াইতে হয় আজীবন।
সেই ক্ষত নিরাময়ের উপায় সমাজ ভাবিতে না পারিলে রাষ্ট্রকেই তাহা ভাবিতে হইবে বইকি। ভারতের ন্যায় দেশে বিবাহিত মেয়েদের যাবতীয় অধিকার আইনের মাধ্যমে সুরক্ষিত রাখিবার ব্যবস্থা ইতিপূর্বে রাষ্ট্রই করিয়াছে। কাউন্সেলিং-এর বিষয়টি লইয়াও এই রূপ ভাবা প্রয়োজন। স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী, বিবাহের ন্যূনতম এক মাস পূর্বে নোটিস দেওয়া আবশ্যক। এই সময়টিকে যথাযথ ভাবে কাজে লাগানো যাইতে পারে। প্রয়োজনে সময়সীমা বৃদ্ধিও করা যাইতে পারে। কেরলের মহিলা কমিশনের সদস্য শাহিদা কামাল প্রস্তাব করিয়াছেন, কাউন্সেলিং-অন্তে যে সার্টিফিকেট দেওয়া হইবে, বিবাহের সার্টিফিকেটের জন্য তাহা অত্যাবশ্যক— এমন নিয়মের কথাও ভাবা প্রয়োজন। অর্থাৎ, বিবাহে সর্বাগ্রে গুরুত্ব পাইবেন পাত্র-পাত্রী, এবং তাঁহারা পরস্পরের নিকট কী প্রত্যাশা করেন, সেই কথাটি। পরিবারের ভূমিকাটি গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যই। কিন্তু, এই ক্ষেত্রে তাহার ভূমিকা যথার্থ অভিভাবকের, নিয়ন্ত্রকের নহে। পরামর্শদানের মধ্যেই সেই ভূমিকা সীমাবদ্ধ থাকিবে। সমাজ নিজে সেই লক্ষ্মণরেখা না টানিলে, রাষ্ট্রকেই তাহা স্মরণ করাইয়া দিতে হইবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy