অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশের পঁচাত্তরটি জেলায় পঁচাত্তরটি ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং ইউনিট (ডিবিইউ) খোলা হবে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকা মেনে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক সেই ডিবিইউ-গুলি খুলবে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সংজ্ঞা অনুযায়ী, কোনও একটি নির্দিষ্ট স্থানে এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং প্রোডাক্ট ও প্রথাগত ব্যাঙ্ক পরিষেবা প্রদানের ব্যবস্থা থাকবে; যেখানে গ্রাহক নিজেই কাজটি করে নিতে পারবেন, এবং/অথবা তাঁর জন্য সহায়তার ব্যবস্থা থাকবে— তাকে ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং ইউনিট বলা হবে। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণায় কিঞ্চিৎ ধোঁয়াশা আছে। ইতিমধ্যেই আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্ক, পেমেন্টস ব্যাঙ্ক, স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যাঙ্ক বাদে সব বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ককে ডিবিইউ খোলার অনুমতি দিয়েছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। নন-ব্যাঙ্কিং ফাইনানশিয়াল কর্পোরেশন (এনবিএফসি) নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের অবস্থান স্পষ্ট না হলেও মূলত ডিজিটাল রিটেল ঋণের পথ ধরে সেই ক্ষেত্রটিও ডিবিইউ-এর বাজারে আছে। এবং, বাজারটির চরিত্র যে হেতু ক্রমবর্ধমান ও প্রতিযোগিতামূলক, ফলে ব্যাঙ্ক ও এনবিএফসিগুলিকে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখার কারণেই এই বাজারে উপস্থিত থাকতে হবে। ইতিমধ্যেই ৩৫টি ব্যাঙ্ক ডিবিইউ-এর পরিসরে উপস্থিত। অতএব, ‘স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব’ উপলক্ষে বাড়তি কী পাওনা হবে, অর্থমন্ত্রীর ঘোষণায় তা স্পষ্ট হয়নি।
কিন্তু, এই অস্বচ্ছতা সত্ত্বেও ঘোষণাটির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। গুরুত্ব এইখানে যে, ডিবিইউ স্থাপনের প্রক্রিয়াটিকে সরকার সম্পূর্ণত বাজারের হাতে ছেড়ে দেয়নি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মাধ্যমে যদি জেলায় জেলায় ডিবিইউ প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে তাতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের উদ্দেশ্যটি সাধিত হতে পারে। অন্তর্ভুক্তির প্রথম ধাপটি হল, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে ব্যাঙ্কিং পরিষেবাকে পৌঁছে দেওয়া। বহু সাধনার পর দূরদূরান্তে কিছু এটিএম স্থাপিত হয়েছে বটে, কিন্তু সেগুলির সাধ্য সীমিত— বাস্তব কার্যক্ষমতা তার চেয়েও কম। এটিএম-এর পক্ষে ব্যাঙ্কের শাখার বিকল্প হয়ে ওঠার প্রশ্নই নেই। সেই ক্ষেত্রে ডিবিইউ-গুলি কার্যকর হতে পারে, কারণ রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশ অনুসারেই তাতে প্রথাগত ব্যাঙ্কিংয়ের সমস্ত পরিষেবা, এবং ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং পরিষেবা রাখতে হবে। ডিবিইউ-এর সুবিধা হল, তাতে ফ্রন্ট অফিসে কর্মীর সংখ্যা ন্যূনতম হলেই চলে— গ্রাহকদের সহায়তা করার জন্য এক বা দুই জন প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়োগ করাই যথেষ্ট। অতএব, শাখা প্রতিষ্ঠার তুলনায় ডিবিইউ খোলা ও চালানোর খরচও কম। চব্বিশ ঘণ্টাই কাজ করা সম্ভব বলে গ্রাহকদের পক্ষেও নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী ব্যাঙ্ক পরিষেবা ব্যবহার করা সম্ভব।
ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের চলন থেকে স্পষ্ট যে, যত দিন যাবে, ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা তত বেশি ইন্টারনেট-নির্ভর, ডিজিটাল হয়ে উঠবে। এখানেই আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে ডিবিইউ-এর দ্বিতীয় ভূমিকা। ভারতের মতো দেশে এখনও ব্যক্তিগত স্তরে নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগ সর্বজনীন নয়— তার ব্যবহারের জ্ঞান আরও অনেক দুর্লভ। ফলে, ব্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রেও ডিজিটাল বিভাজিকা ক্রমেই প্রকটতর হয়ে উঠবে। ডিবিইউ সেই ব্যবধান পূরণ করতে পারে। এই ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কিং সহায়কের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। তবে, যে কোনও ভাল ব্যবস্থার সাফল্যই দাঁড়িয়ে থাকে পরিকাঠামোর উপর। গ্রামাঞ্চলে নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবস্থা হবে, না কি দরজায় ঝোলানো ‘লিঙ্ক ফেলিয়র’-এর অমোঘ নোটিসই এই ব্যবস্থার ভবিতব্য হবে, তা বহুলাংশে নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছার উপর। ব্যাঙ্কিং সহায়ক হিসাবে ফ্রন্ট অফিসে যাঁরা নিযুক্ত হবেন, অথবা যাঁরা ব্যাক অফিসে কাজ করবেন, তাঁদের প্রশিক্ষণের প্রশ্নটিও গুরুত্বপূর্ণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy