Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
School Students

খেলার ছলে

একই সঙ্গে জরুরি— বিদ্যালয়গুলিতে পঠনপাঠনের পরিবেশটিকে আরও উন্নত করে তোলা। আসল কাজটিতেই ফাঁকি পড়লে শুধুমাত্র খেলার প্রশিক্ষণ দিয়ে শিক্ষার্থীদের বেশি দিন ধরে রাখা যাবে না।

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৪ ০৮:৫০
Share: Save:

শিক্ষার্থীদের বেড়ে ওঠার পর্বে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তার কথা বহুচর্চিত। কিন্তু বাস্তবে নিজ বিদ্যালয়ে সেই সুযোগ পায় কত জন? বেসরকারি স্কুলগুলিতে যদিও বা তার বন্দোবস্ত থাকে, সরকারি এবং সরকার-পোষিত স্কুল, বিশেষত প্রাথমিক স্কুলগুলি এই ক্ষেত্রে যথেষ্ট পিছিয়ে। সেখানে পাঠ্যক্রমে খেলা আছে, কিন্তু শিক্ষকের অভাবে তার অস্তিত্ব খাতায়-কলমেই। সাধারণ শিক্ষকরা দৈনিক খেলাধুলা এবং যোগব্যায়ামের অভ্যাসটুকু বজায় রাখলেও, কোনও বিশেষ খেলার প্রশিক্ষণের সুযোগ মেলে না। এই ক্ষেত্রে কলকাতা জেলার চতুর্দশ চক্রের অধীনে থাকা প্রাথমিক স্কুলগুলি এক স্বস্তিদায়ক ব্যতিক্রম। সেখানে ফুটবল প্রশিক্ষণ এবং প্রশিক্ষণ-অন্তে প্রতিযোগিতার আয়োজন চলছে জোরকদমে। চতুর্দশ চক্রের আওতায় রয়েছে যাদবপুর, বিজয়গড়, টালিগঞ্জের প্রাথমিক স্কুলগুলি। মূলত স্কুলের শিক্ষক, এবং ওই চক্রের আধিকারিকদের উদ্যোগে এলাকার ৩০টি প্রাথমিক স্কুলে ফুটবল প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতা হচ্ছে।

এই উদ্যোগের তাৎপর্য অবশ্য অন্য জায়গায়। ফুটবলের নেশায় ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা এখন আর স্কুল কামাই করতে চায় না। বস্তুত এ-হেন প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতার আয়োজনের মূল উদ্দেশ্যও ছিল এটাই— পড়াশোনার সঙ্গে খেলার আনন্দকে মিশিয়ে পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করে তোলা। সেই উদ্দেশ্য যে অনেকাংশে সফল, তেমন দাবি করা অত্যুক্তি হবে না। অর্থাৎ, সামান্য উদ্যোগ, আন্তরিক কিছু ইচ্ছা যে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের পথে টেনে আনতে পারে, দক্ষিণ কলকাতার প্রাথমিক স্কুলগুলি সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। মাঝপথে পড়া ছেড়ে দেওয়ার হার ঠেকাতে সরকারি উদ্যোগ অবশ্য ইতিপূর্বে কম হয়নি। হাজার প্রতিবন্ধকতা এবং সমালোচনা সত্ত্বেও বিদ্যালয়ে দ্বিপ্রাহরিক আহারের ব্যবস্থা স্কুলছুটের হার হ্রাস করতে অনেকটাই সফল হয়েছে। এক বেলা রান্না করা গরম খাবারের আশ্বাস অভিভাবকদেরও সন্তানকে স্কুলে পাঠানোয় আগ্রহী করে তুলেছে। কিন্তু এই ব্যবস্থা পুরোপুরি স্কুলছুটের প্রবণতায় লাগাম টানতে পারেনি। সুতরাং, আরও কিছু ছকভাঙা ভাবনার প্রয়োজন। তারই ছবি এই উদ্যোগে।

তবে একই সঙ্গে জরুরি— বিদ্যালয়গুলিতে পঠনপাঠনের পরিবেশটিকে আরও উন্নত করে তোলা। আসল কাজটিতেই ফাঁকি পড়লে শুধুমাত্র খেলার প্রশিক্ষণ দিয়ে শিক্ষার্থীদের বেশি দিন ধরে রাখা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের সরকারি এবং সরকার-পোষিত স্কুলগুলিতে সেই পঠনপাঠনের বিষয়টিই সর্বাধিক অবহেলিত। শিক্ষকের অভাবে বহু স্কুলে দৈনন্দিন পঠনপাঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরিকাঠামোগত সমস্যাও অত্যধিক। প্রত্যন্ত অঞ্চলের বহু স্কুলে উপযুক্ত ক্লাসঘরটুকুও নেই। সম্প্রতি খবরে প্রকাশ, দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক বিদ্যালয়ে গত আট বছর ধরে কোনও পানীয় জল নেই। এই অব্যবস্থার সমাধান না করলে পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করা যাবে কি? মনে রাখা প্রয়োজন, স্কুলছুট হওয়া ছাত্রছাত্রীদের এক বড় অংশই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। পঠনপাঠনের জন্য তারা মূলত বিদ্যালয়ের উপরেই নির্ভরশীল। খেলাধুলার ব্যবস্থা পড়াশোনার পরিপূরক হিসাবে অত্যন্ত সফল হোক, কিন্তু পড়াশোনার অভ্যাস ও বন্দোবস্ত কী ভাবে তাড়াতাড়ি বাড়ানো যায়, তা নিয়েও এমন ছকভাঙা ভাবনা চাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE