Advertisement
২৩ অক্টোবর ২০২৪
Kanchanjunga Express Accident

দুঃস্বপ্ন

দুর্ঘটনাকে ঘিরে প্রশ্ন অনেক। কিন্তু নিশ্চিন্ত থাকা যায় এই ভেবে, কোনওটির উত্তরই যথাযথ মিলবে না। দুর্ঘটনার যাবতীয় দায় রেলের তরফে আপাতত মালগাড়ির চালকের উপরে চাপানোর কাজ চলছে, যিনি নিজেই এই দুর্ঘটনার শিকার।

Kanchanjunga Express Accident

কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২৪ ০৮:৪০
Share: Save:

রয়েছে শুধুই গতির প্রতিশ্রুতি। নেই, বর্তমানকে সুস্থ, স্বচ্ছন্দ রাখার ন্যূনতম প্রচেষ্টা। সেই কারণেই ভারতীয় রেলে দুর্ঘটনা এখন বাৎসরিক ঘটনায় পরিণত। গত দু’বছরে ট্রেনে যতগুলি দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাতে প্রাণহানির সংখ্যাটি উপেক্ষণীয় নয়। গত বছর এই জুন মাসেই ওড়িশার বাহানাগায় করমণ্ডল এক্সপ্রেস-সহ তিনটি ট্রেনের মর্মান্তিক সংঘর্ষ এবং প্রায় তিনশত মানুষের মৃত্যুর স্মৃতি এখনও ফিকে হয়নি। সম্প্রতি তাতে যোগ হল নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের কাছে সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে মালগাড়ির ধাক্কা। পশ্চিমবঙ্গবাসীর সোমবারের সকাল শুরু হল শূন্যে ঝুলতে থাকা ট্রেনের কামরা দেখে আর মৃত-আহতের বিবরণ শুনে। ভারতে ট্রেনযাত্রা যে আদৌ নিরাপদ নয়, যাত্রী-সুরক্ষা, পরিষেবা— কোনও দিক থেকেই যে যাত্রীরা বিন্দুমাত্র স্বস্তিতে থাকেন না, সেই কথা মন্ত্রী-সহ রেলকর্তাদের স্বীকার করে নেওয়ার সময় এসেছে।

দুর্ঘটনাকে ঘিরে প্রশ্ন অনেক। কিন্তু নিশ্চিন্ত থাকা যায় এই ভেবে, কোনওটির উত্তরই যথাযথ মিলবে না। দুর্ঘটনার যাবতীয় দায় রেলের তরফে আপাতত মালগাড়ির চালকের উপরে চাপানোর কাজ চলছে, যিনি নিজেই এই দুর্ঘটনার শিকার। আশঙ্কা হয়, তাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পিছনে অনেক জরুরি প্রশ্ন আড়াল করার অপচেষ্টা নেই তো? প্রশ্ন উঠছে— মালগাড়ির চালক সিগন্যাল না মেনে পূর্ণ গতিতে ট্রেন চালালেন কেন? স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বন্ধ থাকায় কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে ম্যানুয়াল মেমো দেওয়া হয়, তা সত্ত্বেও একই লাইনে মালগাড়ি দ্রুত এগিয়ে গেল কী করে? রেল-দুর্ঘটনা ঠেকাতে ইতিপূর্বে প্রযুক্তিগত যে উন্নতির কথা বলা হয়েছে, তা-ও এ ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। সে প্রযুক্তির একেবারে গোড়ার কথা ছিল, চালক ভুল করলেও যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করা। একই লাইনে দু’টি ট্রেন চলে এলে দুর্ঘটনা আটকাতে চালু করা হয়েছে ‘কবচ’ প্রযুক্তি। কিন্তু প্রয়োজনের সময় এর কোনওটি যে কাজ করেনি, কাঞ্চনজঙ্ঘার দুমড়ে যাওয়া কামরাগুলিই তার প্রমাণ। মানুষ ভুল করতে পারে, কিন্তু উন্নত প্রযুক্তি সেই ভুল শোধরাতে না পারলে এত ঘটা করে তার ঢাক পেটানো কেন? প্রকৃতপক্ষে, রেলের সর্বত্র সুরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করা যায়নি। বহু জায়গায় ট্রেন এবং রেললাইন আদ্যিকালের ব্যবস্থায় ভর করে চলছে। মূল্য চোকাতে হচ্ছে যাত্রীদের, জীবন-জীবিকার বিনিময়ে।

সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া রেল দুর্ঘটনাগুলি থেকে একটি বিপজ্জনক প্রবণতা চোখে পড়া স্বাভাবিক। ‘বন্দে ভারত’-এর মতো প্রধানমন্ত্রীর সুনজরধন্য কিছু ভিআইপি ট্রেন বাদে বাকি ট্রেনগুলির ক্ষেত্রে অবহেলা প্রকট। বেহাল রক্ষণাবেক্ষণ, নজরদারি ব্যবস্থা; নিরাপত্তার প্রশ্নে গাফিলতি আক্ষরিক অর্থেই প্রাণঘাতী। রেলকর্মীদের, বিশেষত ইঞ্জিনচালকদের, যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ নেই; নিরাপত্তার খুঁটিনাটির দিকে নজর দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক কর্মী নেই। থাকার মধ্যে আছে শুধু গালভরা কথা। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সমগ্র ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজা প্রয়োজন। রেলের উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। দুর্ঘটনা ঘটলে উন্নততর প্রযুক্তির আষাঢ়ে গল্প শোনানো নয়, বরং সেই প্রযুক্তি যে বাস্তবে কাজে আসছে, তার প্রমাণ চাই। একটা দুর্ঘটনার রেশ না কাটতেই অন্য দুর্ঘটনার অপেক্ষায় দিন গোনা— ভারতীয় রেলযাত্রীদের এটাই নিয়তি হতে পারে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Indian Railways
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE