E-Paper

চরিত্র বিচার

মন্দির-মসজিদের তথা হিন্দু-মুসলমানের এই দ্বন্দ্বে শাস্ত্র থেকে ইতিহাস পুরাতত্ত্ব, সবই জুড়ে গিয়েছে নানা সময়।

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:২৫
An Image Of Mosques

জ্ঞানবাপী মসজিদ। —ফাইল চিত্র।

আইনের চোখে ধর্মস্থানের দ্বৈত চরিত্র থাকতে পারে না, একই সঙ্গে তা মন্দির এবং মসজিদ দুই-ই হতে পারে না, হতে হবে যে কোনও একটি— রায় দিল ইলাহাবাদ হাই কোর্ট। কাশী বিশ্বনাথ মন্দির-জ্ঞানবাপী মসজিদ বিতর্ক ও বত্রিশ বছরের পুরনো মামলার সূত্রে এই সাম্প্রতিক রায়: ১৯৯১ সালের মামলায় আদি বিশ্বেশ্বর বিরাজমান কর্তৃপক্ষের আর্জি ছিল, মসজিদের বিতর্কিত জমি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেখানে যেন পুজোর অনুমতি দেওয়া হয়। তা করলে ‘ধর্মস্থানের চরিত্র রক্ষা আইন’ লঙ্ঘিত হবে, এই যুক্তি দেখিয়ে ওই আর্জিকে চ্যালেঞ্জ করে অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটি ও উত্তরপ্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড; কেননা এই আইনমতে ১৯৪৭-এর ১৫ অগস্টের সময় বহাল থাকা ধর্মস্থানের চরিত্র বদল সম্ভব নয়। মামলাকারীদের প্রতিযুক্তি ছিল, জ্ঞানবাপী মসজিদ বিতর্ক স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ের, তাই উল্লিখিত আইনের আওতার বাইরে। হাই কোর্টও সাম্প্রতিক রায়ে মসজিদ কমিটির সব আর্জি খারিজ করে বলেছে পুরনো আইনে ‘ধর্মস্থানের চরিত্র’-এর ধারণা বা সংজ্ঞা সুস্পষ্ট ছিল না, এখন নিম্ন আদালতের মাধ্যমে, তথ্য নথি ও মৌখিক প্রমাণের মধ্য দিয়ে, একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ধর্মস্থানের চরিত্র নির্ধারিত হবে।

মন্দির-মসজিদের তথা হিন্দু-মুসলমানের এই দ্বন্দ্বে শাস্ত্র থেকে ইতিহাস পুরাতত্ত্ব, সবই জুড়ে গিয়েছে নানা সময়। হিন্দু মামলাকারীরা বলেছেন জ্ঞানবাপী মসজিদ-সহ পুরো এলাকাটি ছিল সেই ‘সত্যযুগ’ থেকে আদি বিশ্বেশ্বরের মন্দিরক্ষেত্র, মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের ফরমানে সতেরো শতকে যা ধ্বংস করা হয়, সেখানে মসজিদ তৈরি হয়। মন্দির গুঁড়িয়ে মসজিদ তুলে দিলেও ‘আদি’ ও ‘প্রকৃত’ ধর্মস্থান-চরিত্র বদলে যায় না, এ-ই তাঁদের বক্তব্য। এরই বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে আছে ১৯৯১-এর ধর্মস্থানের চরিত্র রক্ষা আইন, এই মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্টেও যার বৈধতা নিয়ে বেশ কয়েকটি আর্জি বিচারাধীন, কেন্দ্রও এই আইন নিয়ে তার স্পষ্ট অবস্থান জানিয়ে হলফনামা দেয়নি। অথচ এই আইনের প্রসঙ্গটি অতি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ শীর্ষ আদালতে জমা পড়া আর্জিগুলির মূল বক্তব্যই হল, এই আইনের ফলে হিন্দু শিখ বৌদ্ধ ও জৈনরা নিজেদের ধর্মস্থানগুলি ‘বর্বর আক্রমণকারী’দের থেকে ‘পুনরধিকার’ করতে পারছেন না।

আইনের সূক্ষ্ম জটিল তত্ত্ব সাধারণের পক্ষে বোঝা সহজ নয়। সে কারণেই তাঁরা চেয়ে থাকেন আদালতের রায়ের দিকে। ইলাহাবাদ হাই কোর্ট এ-ও বলেছে যে, জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে মামলা অন্য সব মামলার থেকে আলাদা, ভারতের দুই প্রধান ধর্মসম্প্রদায়ের সঙ্গে তা জড়িত। জাতীয় স্তরেও এর প্রভাব নিঃসন্দেহে পড়তে বাধ্য, বিশেষত যখন নতুন বছরে অযোধ্যায় রামজন্মভূমি মন্দির উদ্বোধন ঘিরে সাজো-সাজো রব। অযোধ্যা জমি বিতর্ক যে আদালতেই নিষ্পত্তি হয়েছিল, এ কথাটি মনে করানো যেতে পারে। এখন কথা উঠেছে আদালতের মাধ্যমে কোনও ধর্মস্থলের চরিত্র নির্ধারণের। তবে ভারতে সুদূর অতীত থেকে পরস্পর বিপ্রতীপ মত ও ধারার সহাবস্থান ও বৈচিত্র শুধু আচরিতই নয়, আইন দ্বারা রক্ষিতও। ধর্মনিরপেক্ষ শাসনতন্ত্রে এই সহাবস্থানও কি আতশকাচের তলায় ‘বিচার’-এর জন্য আসতে পারে? ধর্ম নিয়ে তেতে ওঠা আজকের ভারতে এই ভাবনাটি এখনই দরকার।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Gyanvapi Masjid Allahabad High Court Gyanvapi Mosque Restoration Hindu Religion

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy