Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Plastic

নির্বিকল্প প্লাস্টিক

পরিবেশবিদরা ইতিপূর্বে বহু বার প্লাস্টিক বর্জন করে পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু রাজ্যের চটকলগুলির অবস্থা দেখলে বিকল্পটির প্রতি ভরসা রাখা কঠিন।

plastic

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২৩ ০৪:৫৫
Share: Save:

আগামী ২ অক্টোবর থেকে অসমে নিষিদ্ধ হতে চলেছে ১ লিটারের কম আয়তনের পানীয় জলের বোতলের উৎপাদন ও ব্যবহার। আগামী বছর অক্টোবর মাস থেকে সে রাজ্যে নিষিদ্ধ হবে ২ লিটারের কম আয়তনের পানীয় জলের বোতলও। সম্প্রতি নাগাল্যান্ডেও প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধুমাত্র প্লাস্টিকের ব্যাগই নয়, প্লাস্টিকের থালা, বাটি, গেলাস, বেলুনের কাঠি, আইসক্রিমের চামচ, নিমন্ত্রণ পত্র-সহ বহুবিধ জিনিসের ব্যবহার, উৎপাদন, বিক্রি, মজুতকরণ একই সঙ্গে নিষিদ্ধ করেছে তারা। ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ। এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ার এক বছর অতিক্রান্ত। অথচ, দোকান-বাজারে এখনও দেখা মেলে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের। আগের মতোই অতি বৃষ্টিতে প্লাস্টিকের স্তূপ আটকে দেয় নিকাশির মুখ। শহরে কিছু সচেতনতার ছবির খোঁজ পাওয়া গেলেও জেলায় তার ছিটেফোঁটাও নেই।

স্বল্প দাম, সহজলভ্য এবং টেকসই হওয়ার কারণেই প্লাস্টিকের বিপুল চাহিদা। ফলে, তাকে বাজার থেকে সম্পূর্ণ সরানোর জন্য প্রয়োজন অল্প দামে, ভাল গুণমানের এক বা একাধিক বিকল্প উপাদানের সন্ধান, যা দিয়ে ব্যাগের পাশাপাশি দৈনন্দিন প্রয়োজনের জিনিসপত্রও তৈরি করা যাবে। পাট এবং পাটজাত দ্রব্য অনেকাংশে সেই জায়গাটি নিতে পারত। পরিবেশবিদরাও ইতিপূর্বে বহু বার প্লাস্টিক বর্জন করে পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু রাজ্যের চটকলগুলির অবস্থা দেখলে বিকল্পটির প্রতি ভরসা রাখা কঠিন। কাঁচা পাটের অভাব, পুরাতন প্রযুক্তির ব্যবহার, মালিক-শ্রমিক বিবাদ-সহ নানা কারণে চটকলগুলি ধুঁকছে। বর্তমানে খাদ্যশস্য ভরার কাজে একশো শতাংশ, এবং চিনির মোড়কের জন্য কুড়ি শতাংশ চটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক। রাজ্য থেকে চটের বস্তা কিনে নেয় কেন্দ্র। অথচ পরিস্থিতি এমনই যে, সেই বস্তাও রাজ্যের চটকলগুলি সরবরাহ করে উঠতে পারে না। অন্যান্য সামগ্রী দূর অস্ত্।

অপর দিকে, প্লাস্টিকের বিকল্প হিসাবে কাগজ টেকসই নয়। পুরনো কাপড় দিয়ে ব্যাগ তৈরির প্রয়াস বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নিলেও তার ব্যবহার সমাজের নির্দিষ্ট স্তরে সীমাবদ্ধ। শালপাতা, কলাপাতার বাক্স, বেত কিংবা সুপারির পাতা দিয়ে থালা, বাটি তৈরির বিচ্ছিন্ন চেষ্টাও চোখে পড়ে। কিন্তু দাম প্লাস্টিকের তুলনায় বেশি। প্রয়োজনের সময় ক্রয় করতে পারার মতো দোকানই বা কতগুলি আছে? সর্বোপরি, অধিকাংশটুকু এত দিন পরেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়েই আবদ্ধ। একটি বহুলপ্রচলিত দ্রব্যকে সরিয়ে বিকল্প সামগ্রী ব্যবহারকারীর হাতে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে যে সচেতন, নিখুঁত সরকারি পরিকল্পনা, উদ্যোগের প্রয়োজন, পশ্চিমবঙ্গে তা অনুপস্থিত। কেন মানুষ এক অনায়াসলভ্য, সস্তার জিনিস ছেড়ে বিকল্পের প্রতি আকৃষ্ট হবে, সেই যুক্তিগুলিও প্রাথমিক পর্বের পর আর সর্বস্তরের মানুষের কাছে তুলে ধরা হল না। তাই, বার বার প্লাস্টিক বন্ধের কথা ঘোষণা করা হলেও প্রাথমিক উত্তেজনা থিতিয়ে এলেই প্লাস্টিক স্বমহিমায় বাজারে ফেরে। লক্ষ্যপূরণে সর্বাগ্রে প্রয়োজন, বিচ্ছিন্ন উদ্যোগগুলিকে এক ছাতার তলায় আনা এবং নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে কড়া অভিযান চালানো। সেই সদিচ্ছা কি প্রশাসনিক কর্তাদের আছে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Plastic Bottle Assam West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE