Advertisement
E-Paper

অব্যবস্থা

হুগলির ত্রিবেণীতেও তিন দিনের কুম্ভমেলার আয়োজন হয়েছিল। সেখানে উঠেছে গঙ্গাদূষণের অভিযোগ। পর্যাপ্ত শৌচাগার না থাকায় সাধুদের অনেককে গঙ্গার পারে শৌচকর্ম সারতে হয়েছে।

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৪:৫১
খামতি ছিল প্রস্তুতীতে।

খামতি ছিল প্রস্তুতীতে। — ফাইল চিত্র।

যথেষ্ট পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া এবং জনসমাগমের চরিত্র আগাম না বুঝে প্রশাসন কোনও উৎসবের আয়োজন করলে তার পরিণতি সচরাচর সুখের হয় না। সম্প্রতি তা আবারও স্পষ্ট হল সদ্যসমাপ্ত নদিয়ার ‘বঙ্গ কুম্ভমেলা’য়। তাকে ঘিরে অব্যবস্থার গুরুতর অভিযোগ। কল্যাণীতে আয়োজিত সেই মেলায় মাঘ-সংক্রান্তিতে শাহি স্নান এবং শোভাযাত্রার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, অথচ মূল মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশপথ ছিল মাত্র একটি। ফলে ছুটির দিনে লক্ষাধিক লোকের সমাগমে পদপিষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। পুলিশ পরিস্থিতির সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও বেশ কয়েক জন দর্শনার্থীর আহত হওয়ার খবর মিলেছে। অতঃপর কিছু সময়ের জন্য মেলায় প্রবেশ বন্ধ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

যে কোনও বড় জমায়েতের আয়োজনে ছোটখাটো ত্রুটিবিচ্যুতি থাকে। কিন্তু মানুষের নিরাপত্তার প্রশ্নটিতে আপস করা চলে না। ২০১৯ সালে কচুয়ায় লোকনাথ মন্দিরে ভিড়ের চাপে পাঁচিল ভেঙে পাঁচ জনের মৃত্যু, কিংবা গত বছর পানিহাটিতে দণ্ড মহোৎসবে তিন জনের মৃত্যু এবং শতাধিক মানুষের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা এ প্রসঙ্গে স্মরণে আসা উচিত। পানিহাটির ঘটনার পর পুরকর্তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ভিড় হয়, এমন কোনও অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। কিন্তু কুম্ভমেলা প্রমাণ, সেই সিদ্ধান্ত কথার কথা হয়েই থেকে গিয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রাণহানি ঘটার আগেই উপযুক্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে সত্য, কিন্তু তেমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়াটাও যথেষ্ট উদ্বেগের নয় কি? আগাম প্রস্তুতি নেওয়া থাকলে এক সঙ্গে পঞ্চাশ হাজার মানুষ এসে পড়েন কী ভাবে? পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে এমন উৎসবের আয়োজন নতুন ঘটনা নয়। তাই, এই পরিস্থিতিতে কী ধরনের অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে, এবং সে ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ করা যেতে পারে, সেই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পুলিশ-প্রশাসনের থাকা উচিত। অথচ, মেলা কমিটি এবং স্থানীয় প্রশাসনের যুক্তিটি চমকপ্রদ। তাদের নাকি ধারণা ছিল না, এত বেশি ভিড় হবে। ছুটির দিনে ‘বঙ্গ কুম্ভমেলা’য় যে বাঁধভাঙা ভিড় হতে পারে— সেটা অনুমান করতে সামান্য বোধবুদ্ধিই যথেষ্ট, যার প্রমাণ মেলার ব্যবস্থাপনায় পাওয়া যায়নি।

অন্য দিকে, হুগলির ত্রিবেণীতেও তিন দিনের কুম্ভমেলার আয়োজন হয়েছিল। সেখানে উঠেছে গঙ্গাদূষণের অভিযোগ। পর্যাপ্ত শৌচাগার না থাকায় সাধুদের অনেককে গঙ্গার পারে শৌচকর্ম সারতে হয়েছে। ফলে দূষণ ছড়িয়েছে জলে এবং পার-সংলগ্ন স্থানে। অথচ, গত মাসে গঙ্গাসাগর মেলাকে পরিবেশবান্ধব করে তুলতে প্রশাসন যথেষ্ট সচেষ্ট ছিল। দুর্ভাগ্য, এই জাতীয় সদর্থক প্রচেষ্টা অপেক্ষাকৃত নবীন এবং স্থানীয় মেলা বা উৎসবগুলির ক্ষেত্রে দেখা যায় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে সেগুলি শুধুমাত্র হুজুগের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়। পরিবেশ দূরের কথা, ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধিটুকুও মানা হয় না। অথচ উৎসবময়, হুজুগে বঙ্গে বর্তমানে স্থানীয় উৎসব-আড়ম্বরের সংখ্যাটি উপেক্ষণীয় নয়। সুতরাং, যে কোনও উৎসবে অনুমোদনের পূর্বে নিরাপত্তা এবং পরিবেশ— দু’টি বিষয়েই কড়া নিয়ম প্রণয়নের সময় এসেছে। প্রশ্ন যখন সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা, তখন ছেলেখেলা ক্ষমার অযোগ্য।

Kumbh Mela Kalyani
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy