E-Paper

নজরদারির গুরুত্ব

নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো জানিয়েছে যে, কলকাতার বিভিন্ন রাস্তার ধারের ধাবা ক্রমে মাদক ব্যবসার ‘হটস্পট’ হয়ে উঠছে।

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:১২
cyber crime.

কলকাতা পুলিশ ক্রমে সাইবার প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করছে। প্রতীকী ছবি।

ঝাড়খণ্ডের এক ছোট জনপদ জামতাড়া দেশজোড়া ‘খ্যাতি’ অর্জন করেছে এক বিশেষ কারণে— ভুয়ো ফোনকলের মাধ্যমে আর্থিক জালিয়াতির রাজধানী হিসাবে। সেই ‘খ্যাতি’ প্রায় যায়-যায় এই ‘ব্যবসা’য় অন্য একটি শহরের দ্রুত উত্থানের ফলে। শহরটির নাম, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, কলকাতা। গত কয়েক মাসে সংবাদপত্রের পাতায় বহু বার প্রকাশিত হয়েছে কলকাতা ও শহরতলিতে গড়ে ওঠা ভুয়ো কল সেন্টারের খবর। শুধু শহরের বাসিন্দা দুষ্কৃতীরাই নয়, ভিনরাজ্যের জালিয়াতরাও তাদের কর্মক্ষেত্র হিসাবে কলকাতাকে বেছে নিচ্ছে, এমনটা অনুমান করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। পুলিশ নিষ্ক্রিয়, এমন অভিযোগ করা যাবে না— অপরাধীদের ধরতে না পারলে এই ভুয়ো কল সেন্টারগুলির কথা অজ্ঞাতই থেকে যেত। কিন্তু, এই গোত্রের অপরাধের চরিত্র হল, যতটুকু ধরা পড়ল, তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র কি না, সে কথা স্পষ্ট ভাবে জানার কোনও উপায় নেই। ফলে, কল সেন্টার জালিয়াতির বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে পুলিশের সাফল্য কতখানি, সে কথাও নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে না। সেই বিচারের প্রয়োজনও নেই— দরকার নজরদারি অব্যাহত রাখা। সাইবার জালিয়াতরা আধুনিক প্রযুক্তির মেঘের আড়াল থেকে অস্ত্র শাণায়, ফলে তাদের শায়েস্তা করতে হলে পুলিশকেও নতুন পথে চলতে হবে। বিভিন্ন সংবাদে, এবং সমাজমাধ্যমে কলকাতা পুলিশের স্বকৃতিত্ব প্রচারের প্রতিবেদনগুলি থেকে অনুমান করা চলে যে, কলকাতা পুলিশ ক্রমে সাইবার প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করছে। এ ক্ষেত্রে সাফল্যের মন্ত্র হল, অপরাধীদের চেয়ে এক কদম এগিয়ে থাকা। প্রথাসিদ্ধ পথ নয়, নতুন পথ খুঁজে নেওয়া। এবং একই সঙ্গে এই নতুন বিপদ সম্বন্ধে নাগরিকদের সচেতন করে চলা।

অপরাধের চরিত্র পাল্টালে নজরদারির চরিত্রও পাল্টানো যে জরুরি, তার একটি ভিন্নতর প্রমাণ সম্প্রতি পাওয়া গেল। নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো জানিয়েছে যে, কলকাতার বিভিন্ন রাস্তার ধারের ধাবা ক্রমে মাদক ব্যবসার ‘হটস্পট’ হয়ে উঠছে। দীর্ঘ দিন নজরদারি চালিয়ে চিহ্নিত করা গিয়েছে এমন একাধিক ধাবা, বোঝা গিয়েছে লেনদেনের ধরন। সেই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত একাধিক ধাবা কর্মীকে সোর্স হিসাবে ব্যবহার করাও সম্ভব হয়েছে। সংবাদটি তাৎপর্যপূর্ণ। শুধু কলকাতায় নয়, ভারতের কার্যত সব শহরেই মাদকের ব্যবসা পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে মাথাব্যথার কারণ। এত দিন জানা ছিল যে, মূলত বার, পাব ও নাইটক্লাবগুলিই এই ব্যবসার কেন্দ্র— সেখানেই মাদকের লেনদেন হয়। কিন্তু, শহরের রাস্তার ধারে, একেবারে প্রকাশ্যে ব্যবসা করে চলা ধাবা-রেস্তরাঁগুলিও যে এই ব্যবসার কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে, এই কথাটি নেহাত কাণ্ডজ্ঞানের নয়, তার জন্য নজরদারি প্রয়োজন। অপরাধের কার্যপদ্ধতি এবং কেন্দ্র চিহ্নিত করা গেলে পুলিশ বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ বহুলাংশে সহজ হয়। স্মরণ করিয়ে দেওয়া যেতে পারে যে, কোনও শহরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যত বাড়ে, শহর যত চলমান হয়, তার অপরাধের চরিত্রও তত বহুমুখী হয়ে উঠতে থাকে। যত বেশি বাইরের লোক শহরে ঢোকে, এবং যত বেশি লোকের আনাগোনা চলতে থাকে, ততই কঠিন হয় পুলিশের কাজ। ফলে, কলকাতা শহরকে ঘিরে আর্থিক কর্মকাণ্ডের পরিমাণ যত বাড়বে, পুলিশের প্রস্তুতিকেও তার সঙ্গে তাল মেলাতে হবে। শহরকে সুরক্ষিত রাখতে নজরদারিতে বিন্দুমাত্র গাফিলতি চলবে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Cyber Crime Kolkata

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy