Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Parking Fees

ভুল রাস্তা

বিশ্বের অধিকাংশ শহরের তুলনায় কলকাতায় পার্কিং ফি অনেক কম। বড় শহরগুলিতে পার্কিং-এর জায়গা সীমিত, অথচ গাড়ির সংখ্যা ঢের বেশি।

Cars.

সব পার্কিং এলাকায় ‘পয়েন্ট অব সেল’ (পিওএস) মেশিনের মাধ্যমে ফি নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৫:৫৫
Share: Save:

কলকাতা পুরসভা ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিল, শহরের পার্কিং ফি বাড়ানোর। সব ধরনের যানবাহনের ক্ষেত্রেই এই নিয়ম চালু করা হয়, সেই সঙ্গে সিদ্ধান্ত হয়, সব পার্কিং এলাকায় ‘পয়েন্ট অব সেল’ (পিওএস) মেশিনের মাধ্যমে ফি নেওয়া হবে। জানুয়ারি মাস থেকেই কিছু জায়গায় এ পদ্ধতি চালু হয়েছিল, কিন্তু শেষরক্ষা হল না। প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের নির্দেশে পার্কিং ফি বৃদ্ধির নির্দেশিকা প্রত্যাহার করা হয়েছে। মনে রাখার, কলকাতা পুরসভা একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, নাগরিক পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে নতুন আইন বলবৎ করার ক্ষমতাও তার রয়েছে। ফলে পার্কিং ফি বাড়ানো নিয়ে পুরসভা ও শাসক দলের চাপানউতোর, এবং শেষ বিচারে পুরসভার সিদ্ধান্তের উপরে প্রশাসনের ছড়ি ঘোরানো নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অসঙ্গত নয়।

বিশ্বের অধিকাংশ শহরের তুলনায় কলকাতায় পার্কিং ফি অনেক কম। বড় শহরগুলিতে পার্কিং-এর জায়গা সীমিত, অথচ গাড়ির সংখ্যা ঢের বেশি। অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মেই, যেখানে চাহিদা বেশি অথচ জোগান কম, সেখানে পরিষেবার জন্য বেশি মূল্য দিতে হয়। বিশ্বের বহু শহরে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার সীমিত রাখতে ‘কনজেশন ট্যাক্স’-এর ব্যবস্থা রয়েছে; এই করের উপযোগিতা হল, এর কারণে দিনের ব্যস্ত সময়ে শহরের রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি কম থাকে, ফলে অন্য যানবাহন দ্রুত চলাচল করতে পারে। এতে যানজট কমে, মানুষের সময় বাঁচে, হ্রাস পায় মাত্রাতিরিক্ত দূষণও। অন্য দিকে, ওই করের অর্থ গণপরিবহণের পরিকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়। কলকাতায় এমন কোনও করের ব্যবস্থা নেই। আবার ভারতের অন্যান্য অনেক শহরেই ঘণ্টাপ্রতি পার্কিং ফি কলকাতার তুলনায় অনেকটাই বেশি। তুল্যমূল্য বিচারে এ শহরে পুরসভার পার্কিং ফি বাড়ানো সেই অর্থে নীতিবিরুদ্ধ কাজ নয়। বিদেশের অনেক শহরে নাগরিকদের গণপরিবহণ ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হয়, কিন্তু কলকাতায় গণপরিবহণের অবস্থাও খুব ভাল নয়— বহু রুটে বাসের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং অটো-নির্ভরতা আখেরে সাধারণ মানুষের পরিবহণ ব্যয়ভার বাড়িয়ে তুলেছে। প্রশাসন এক দিকে পুরসভাকে পার্কিং ফি বাড়াতেও দেবে না, অন্য দিকে গণপরিবহণের পরিকাঠামোও উন্নত হবে না, একুশ শতকের এক জনবহুল ও যানবহুল মহানগরে এই পরিস্থিতি চলা উচিত নয়।

পার্কিং ফি-র ক্ষেত্রে অন্য একটি অভিযোগ— বহু ক্ষেত্রেই চালকদের থেকে অন্যায় ভাবে নগদে বেশি অর্থ আদায় করা হয়। এই অভিযোগ অসত্য নয়, বাস্তবেই পার্কিং ফি থেকে আসা বাড়তি অর্থ শুধু আদায়কারীরই পকেটস্থ হয় না, পৌঁছয় আরও নানা স্তরে। এই ‘ট্র্যাডিশন’ও শহরে সমানে চলছে। এতে সাধারণ মানুষের হয়রানির পাশাপাশি লোকসান হচ্ছে পুরসভারও, দীর্ঘ দিনই যার কোষাগারের অবস্থা শোচনীয়। পার্কিং ফি আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে অনলাইন লেনদেন পদ্ধতি চালু করা জরুরি, তাতে নিয়ম এড়িয়ে অবৈধ ভাবে কিছু করা যাবে না, প্রাপ্য ও বৈধ অর্থ পৌঁছবে পুরসভার কাছেই। দুর্নীতি ও লোকসানে রাশ টানতে অনলাইন পার্কিং ফি চালুর বিষয়ে দরকারি পদক্ষেপ করতে হবে পুরসভাকে। প্রয়োজন সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণের। কিন্তু ভিতরের ও বাইরের বিভিন্ন চাপ সামলে পুরসভা তা পারবে কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Parking Fees Kolkata KMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE