Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Israel Palestine Conflict

অনিঃশেষ?

ইজ়রায়েল এবং সৌদি আরবের মধ্যে শান্তি চুক্তির সূত্রে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে যে বিশেষ ছাড় পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছিল, সেই সুযোগ হাতছাড়া হল হামলার কারণে।

Israel Palestine Conflict

যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইজ়রায়েল। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৩ ০৫:৫১
Share: Save:

বিধ্বস্ত ইজ়রায়েল। গত সপ্তাহান্তে সে দেশে হামাস সন্ত্রাসবাদীদের ভয়ঙ্কর হামলা ইজ়রায়েলের ক্ষয়ক্ষতি তো ঘটিয়েছেই, তার সঙ্গে বিরাট মানসিক ধাক্কাও দিয়েছে। ইয়ম কিপুর যুদ্ধের পাঁচ দশক পরে এই হামলা ইজ়রায়েলি সামরিক বাহিনীর ‘অপ্রস্তুতি’-কে প্রকট করে তুলল। এখনও অবধি সংবাদ, প্রাণ গিয়েছে হাজারের কাছাকাছি ইজ়রায়েলির, আহত কয়েক হাজার। অপহৃত শতাধিক। দেশে জঙ্গি ও সামরিক সেনার মধ্যে যুদ্ধ অব্যাহত। ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন, দেশে যুদ্ধ বেধেছে। প্যালেস্তিনীয়দের উপরে ইজ়রায়েলি দমনের বিষয়টি গোটা বিশ্ব ভাল চোখে না দেখলেও হামাসের এত ভয়ঙ্কর রক্তক্ষয়ী হামলা বিশ্বের তাবড় বিশ্বনেতাদের ইজ়রায়েল-এর সপক্ষেই দাঁড় করিয়েছে। লক্ষণীয়, প্রতিরক্ষা সূত্রে সে দেশের সঙ্গে ভারতের কৌশলগত সুসম্পর্ক থাকলেও, প্যালেস্তাইন প্রশ্নে ইজ়রায়েল-এর মিত্র বলা যায় না ভারতকে, কিন্তু এমন কঠিন সময়ে সে দেশের পাশে দাঁড়িয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

প্রশ্ন হল, যে দেশের গুপ্তচর বিভাগ বিশ্বের অন্যতম সেরা হিসাবে খ্যাত, তাদের নাগাল এড়িয়ে কী ভাবে এ-হেন হানা সম্ভব হল? এই ব্যর্থতার ভার বহুলাংশেই বর্তায় নেতানিয়াহু সরকারের উপরে। সম্প্রতি দেশের বিচারবিভাগের নিরপেক্ষতায় হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছিল সে দেশের সরকার, যার কারণে জনগণের নজিরবিহীন বিক্ষোভের সম্মুখীন হতে হয় তাদের। ফলে গাজ়ায় হামাসের কার্যকলাপের উপর থেকে কিছু নজর সরে যায় ইজ়রায়েল-এর সুরক্ষা তথা গুপ্তচর সংস্থাগুলির। শুধু তা-ই নয়, এই সময়ে সৌদি আরবের কাছ থেকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি পেতে ওয়াশিংটন এবং রিয়াধের সঙ্গে এক জটিল ত্রিপাক্ষিক আলোচনাতেও ব্যস্ত ছিল নেতানিয়াহু সরকার। এ-যাবৎ হামাসের আক্রমণ এসেছে মূলত দু’টি কারণে— গাজ়া এবং অন্যত্র জনসমর্থন আদায় করতে, এবং পশ্চিম এশিয়ায় নিজেদের গুরুত্বকে অব্যাহত রাখতে। যদিও সন্ত্রাস গোষ্ঠীটি বিলক্ষণ জানে যে, এ-হেন হামলা ইজ়রায়েলকে নতিস্বীকার করতে বাধ্য করবে না, তাদের অধিকৃত অঞ্চলের নীতিতেও কোনও পরিবর্তন আনবে না— কিন্তু আমেরিকার মধ্যস্থতায় ইজ়রায়েল এবং সৌদি আরবের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরির সম্ভাবনাকে ব্যাহত করাই ছিল এই আক্রমণের অন্যতম উদ্দেশ্য। উপরন্তু নেতানিয়াহু সরকারের আমলে গাজ়া-সহ ইজ়রায়েল অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে প্যালেস্তিনীয়দের লাগাতার সামরিক আক্রমণের উত্তরে বহু দিন ধরে পরিকল্পিত এমন হামলা।

বিরাট ক্ষতি হল প্যালেস্তিনীয়দেরও। ইজ়রায়েল এবং সৌদি আরবের মধ্যে শান্তি চুক্তির সূত্রে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে যে বিশেষ ছাড় পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছিল, সেই সুযোগ হাতছাড়া হল হামলার কারণে। নিশ্চিত ভাবেই সমুচিত জবাব দেবে ইজ়রায়েল, যাতে আরও বহু নিরীহ প্যালেস্তিনীয়ের প্রাণ যাবে। দুই দেশের নীতির গলদের ফলেই এখনও পর্যন্ত দুই রাষ্ট্র নীতি বলবৎ করা সম্ভব হয়নি। এর মাঝে হামাসের হামলা শান্তি প্রক্রিয়ার ন্যূনতম সম্ভাবনাটিকেও মুছে দিল। রক্তক্ষয়ী সংঘাত শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সমাধান হতে পারে না। আর হামাসের মতো গোষ্ঠী শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী-ই নয়। এ সঙ্কটের সমাধান তো দূরস্থান, বিপদের মাত্রা হ্রাসের আশাও রীতিমতো পরাহত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

israel palestine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE