E-Paper

সভ্যতার সংঘাত

এখনও অবধি হাতির হানা ঠেকাতে প্রচলিত পদ্ধতিগুলি হল— ড্রাম বাজানো, বাজি ফাটানো, হুলা পার্টি, দাহ্য পদার্থের সঙ্গে শুকনো লঙ্কা মিশিয়ে ব্যবহার করা, পালা করে শস্যখেত পাহারা প্রভৃতি।

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৩ ০৬:৫২
elephant.

দাঁতাল হাতির আক্রমণ। ফাইল চিত্র।

বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে মানুষের সংঘাতের ঘটনা এই দেশে নতুন নয়। প্রতিবেশী রাজ্যে দাঁতাল হাতির আক্রমণ এখন খবরে, তবে সঙ্গে সঙ্গে মনে রাখা জরুরি, এ রাজ্যেও পশ্চিমে এবং উত্তরে হামেশাই হাতি-মানুষে সংঘাতের ঘটনা ঘটে চলেছে। বন দফতর প্রদত্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধুমাত্র গত ছ’মাসেই অন্তত ২০টি প্রাণহানি এবং প্রচুর ফসলের ক্ষতি হয়েছে হাতির কারণে। সম্প্রতি জলপাইগুড়ি জেলাতেও এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর হাতির পায়ে পিষ্ট হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী রাজ্যবাসী। সুতরাং, এই সমস্যার এক চমকপ্রদ সমাধান বার করেছে পশ্চিমবঙ্গের বন দফতর— অন্য রাজ্য থেকে আসা হাতি, যারা ইতিমধ্যে এই রাজ্যের বাসিন্দা হয়ে গিয়েছে, তাদের নিজ ঘরে ফিরিয়ে দেওয়া। দফতরের দাবি, আগে ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশার বুনো হাতিগুলি একটি নির্দিষ্ট সময়ে এ রাজ্যে আসত এবং মার্চ-এপ্রিলে নিজেদের রাজ্যে ফিরে যেত। কিন্তু এ রাজ্যে পর্যাপ্ত খাদ্য এবং অধিক বনাঞ্চলের কারণে গত কয়েক বছর যাবৎ তারা নিজভূমে ফিরছে না। তাই ঘরের হাতিকে ঘরে ফেরানোর উদ্যোগ।

তবে কেবল সংঘাত কমানোর তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ করলেই চলবে না, সংঘাতের পিছনে মনুষ্যসমাজের ভূমিকাটি খতিয়ে দেখে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানও ভাবতে হবে। উত্তরবঙ্গের অনেক জায়গায় বনাঞ্চল চা বাগান, সেনা ছাউনি এবং মানুষের বাসস্থানে পরিণত হওয়ায় হাতিদের স্বাভাবিক চলাচলের পথ নষ্ট হয়েছে। হাতিদের গমনপথের উপর দিয়ে নির্মিত ব্রডগেজ রেললাইনও সমস্যা বৃদ্ধি করেছে। উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি-আলিপুরদুয়ার রেলপথে গত কয়েক বছরে ট্রেনের ধাক্কায় মারা গিয়েছে বহু হাতি। অন্য দিকে, দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ় এবং ওড়িশা থেকে আসা পরিযায়ী হাতির হানা বেশি হতে দেখা যায় ফসল তোলার সময়ে। যার অন্যতম কারণ পড়শি রাজ্যগুলিতে অবৈধ ভাবে বৃক্ষনিধন, ভূমিদখল, শিল্পায়ন এবং খননকার্যের ফলে হাতির বাসস্থান সঙ্কোচন। খাবার ও আশ্রয়ের খোঁজে পশুগুলি অচেনা ও দিশাহীন পথে যেতে বাধ্য হওয়ায় ঘটে অপ্রীতিকর ঘটনা। তবে যে বিষয়টি প্রায়ই উপেক্ষিত থেকে যায়, তা হল— স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে প্রাণীগুলির প্রতি এক নেতিবাচক মানসিকতা।

এখনও অবধি হাতির হানা ঠেকাতে প্রচলিত পদ্ধতিগুলি হল— ড্রাম বাজানো, বাজি ফাটানো, হুলা পার্টি, দাহ্য পদার্থের সঙ্গে শুকনো লঙ্কা মিশিয়ে ব্যবহার করা, পালা করে শস্যখেত পাহারা প্রভৃতি। কিন্তু অত্যধিক ব্যবহারে পদ্ধতিগুলি ক্রমশ অকার্যকর হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি খেতের চার পাশে বৈদ্যুতিক তারের ব্যবহার বা খেতে বিষ প্রয়োগের কারণে প্রাণ গিয়েছে অনেক হাতিরও। গত কয়েক বছর ধরে এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপ সতর্কীকরণ, ট্রিপ অ্যালার্ম কিংবা গ্রাম বা খেতের কাছে, রেললাইনের ধারে সেন্সর নির্ভর অ্যালার্ম-এর মতো পদ্ধতি ব্যবহৃত হলেও মানুষ-হাতির সংঘাত কিন্তু কমেনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংঘাত নিবারণের বদলে সংঘাত সংখ্যা কমানোর উপরে জোর দেওয়া হয়। তাই সমস্যা দূর হয় না। মনে রাখতে হবে, হাতি-মানুষ সংঘাতের মূল কারণটি তৈরি করেছে মানুষই। ফলে হাতির ‘অধিকার’ মেনে মানুষের কাজকর্ম চলাফেরা না পাল্টালে এই সমস্যার সমাধান নেই। কিন্তু মানুষকে সেই কাজে রাজি করাবে কে?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Elephant Attacks Human

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy