Advertisement
০৪ মে ২০২৪
PM Narendra Modi

পরীক্ষায় স্কুল

সিবিএসই, তথা যে কোনও পর্ষদের কাজ কী, সে বিষয়ে বিধি এবং রীতি স্পষ্ট। পাঠক্রম, পঠন-পাঠনের নিয়মবিধি এবং পরীক্ষা, ফলপ্রকাশ-সহ স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থার নিয়মবিধি নির্ধারণ, স্কুলগুলির কাজের পর্যবেক্ষণ, প্রধানত এগুলিই যে কোনও স্কুল পর্যদের কাজ।

PM Narendra Modi.

— ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৪ ০৮:০২
Share: Save:

এ বছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ অনুষ্ঠানের জন্য ছাত্রছাত্রীদের নথিভুক্ত করতে যে কার্যত বাধ্য করা হয়েছিল স্কুলগুলোকে, তার প্রমাণ সামনে এসেছে। গত জানুয়ারি মাসে ওই অনুষ্ঠানের আগে ওড়িশায় সিবিএসই-র আঞ্চলিক দফতর বেশ কিছু স্কুল অধ্যক্ষকে চিঠি পাঠায়। সিবিএসই-র এক আঞ্চলিক অধিকর্তার স্বাক্ষর-সম্বলিত যে চিঠিটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তা কার্যত ভীতিপ্রদর্শন। বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের জন্য যথেষ্ট ছাত্রছাত্রী জোগাড় করতে না পারলে এই কেন্দ্রীয় বোর্ডের সঙ্গে স্কুলের নথিভুক্তির পুনর্নবীকরণে সমস্যা হতে পারে। এর পরে দেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের কাছে তীব্র নিন্দার বর্ষণ হওয়ার কথা সিবিএসই আধিকারিকদের উপরে। এ বিষয়ে তদন্ত এবং কঠোর শাস্তির দাবিও ওঠার কথা। কেবল কোনও একটি রাজ্যের পর্যদ আধিকারিক অতি-উৎসাহী হয়ে এমন কাজ করেছেন, তা না-ও হতে পারে। গত বছর ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ অনুষ্ঠানে যেখানে মাত্র নথিভুক্ত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল আটত্রিশ লক্ষ, এ বছর সেখানে ওই সংখ্যা ছড়িয়ে গিয়েছে দু’কোটি। এ বছরটি সাধারণ নির্বাচনের বছর, এবং দ্বাদশ শ্রেণির উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষার্থীরা অনেকেই আঠারো বছরের চৌকাঠ পেরিয়ে নতুন ভোটদাতা হবেন। সংবাদে প্রকাশ, প্রধানমন্ত্রীর ওই অনুষ্ঠানে নথিভুক্তির জন্য ছাত্রদের নাম এবং যোগাযোগের তথ্য দিতে হয়েছে। যার অর্থ, নয়া ভোটারদের এক দেশব্যাপী তথ্যভান্ডার এসেছে কেন্দ্রের হাতে। অর্থাৎ, দেশের স্কুল ব্যবস্থাকেও দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে দ্বিধা করছে না কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।

সিবিএসই, তথা যে কোনও পর্ষদের কাজ কী, সে বিষয়ে বিধি এবং রীতি স্পষ্ট। পাঠক্রম, পঠন-পাঠনের নিয়মবিধি এবং পরীক্ষা, ফলপ্রকাশ-সহ স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থার নিয়মবিধি নির্ধারণ, স্কুলগুলির কাজের পর্যবেক্ষণ, প্রধানত এগুলিই যে কোনও স্কুল পর্যদের কাজ। স্কুলের ভূমিকা কিন্তু অনেক বিচিত্র, বহুমাত্রিক। ছাত্র-ছাত্রীদের শরীর-মনের সার্বিক বিকাশের জন্য কী প্রয়োজন, তা স্থির করতে পারে স্কুল। পরীক্ষার আগে দুশ্চিন্তামুক্তির জন্য পরীক্ষার্থীদের বিশেষ পরামর্শ দরকার কি না, এবং সেই পরামর্শ দেওয়ার যোগ্য ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী কি না, সেটা স্থির করার অধিকার রয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষের, এবং অভিভাবকদের। সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ারও অধিকার নেই পর্ষদের, বাধ্য করা তো দূরের কথা।

প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিত থাকাকে স্কুলের নথিভুক্তির শর্ত করে তোলার চেষ্টা বেআইনি, নীতিবিরুদ্ধ এবং রুচিবিগর্হিত। অথচ, আজ সেটাকেই ‘স্বাভাবিক’ মনে হচ্ছে। কারণ, শিক্ষাব্যবস্থায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এত দিনে পরিচিত। স্কুলের পাঠক্রমে, পাঠ্য বইতে, গবেষণার অনুদানে রাজনৈতিক মতাদর্শ চাপানো হচ্ছে। কিন্তু স্কুলের উপর চাপ দিয়ে শিশুদের প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে আসতে বাধ্য করা সরাসরি শিশুর স্বাধিকার লঙ্ঘন। ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ অনুষ্ঠানটি কয়েক বছরে যে ভাবে সারা দেশে সম্প্রচারিত হয়েছে, তাতে স্পষ্ট যে এটি কিশোর-কিশোরীদের সহায়তার অছিলায় মোদীর বিরতিহীন প্রচার প্রকল্পের আরও একটি অংশ। নাবালকদের রাজনৈতিক প্রচারে শামিল করা, এবং স্কুল কর্তৃপক্ষকে এই নিন্দনীয় কাজের অংশীদার হতে বাধ্য করা, বিজেপি সরকারের বিকৃত চেহারাটিকে স্পষ্ট করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

PM Narendra Modi BJP Schools
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE