E-Paper

সবুজ শক্তি

সৌরবিদ্যুতের দিকে তাকালেই পথের জটিলতার একটা ধারণা তৈরি হয়। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উপকরণগুলি (সোলার সেল, মডিউল, পলিসিলিকন) প্রায় সবই আমদানি করতে হয় ভারতকে।

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩৩
An image of Bulb

—প্রতীকী চিত্র।

সবুজ বিদ্যুৎ, অর্থাৎ পরিবেশ-বান্ধব উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রাধান্য পেল কেন্দ্রীয় বাজেটে। জাতীয় গ্রিন হাইড্রোজেন মিশনের বরাদ্দ গত বছরের তুলনায় ছ’গুণ বাড়িয়ে করা হয়েছে ছ’শো কোটি টাকা। সৌরবিদ্যুতের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে দশ হাজার কোটি টাকা, যা গত বছরের বরাদ্দের দ্বিগুণেরও বেশি। ২০৭০ সাল কার্বন নিঃসরণমুক্ত ভারতের লক্ষ্য, তা ইতিমধ্যেই ঘোষিত হয়েছে। এবং ২০৩০ সালের মধ্যে পাঁচশো গিগাওয়াট পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যও নিয়েছে। বর্তমানে জীবাশ্ম ব্যতীত অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুৎ দু’শো মেগাওয়াটেরও কম। যথাসময়ে দূষণহীন, পুনর্ব্যবহারযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে পৌঁছনোর পথ ভারতের পক্ষে সহজ নয়। অতএব সবুজ বিদ্যুৎ খাতে কেন্দ্রের এই বরাদ্দ বৃদ্ধি ইতিবাচক ইঙ্গিতবাহী। সরকারের অন্য তাগিদ নির্বাচনের আগে আকর্ষণীয় ছাড়— বাড়ির ছাদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্পে যোগদান করলে গৃহস্থ তিনশো ইউনিট বিদ্যুৎ নিখরচায় পেতে পারে। এই প্রকল্পের অধীনে এক কোটি গৃহস্থ বাড়িকে আনা হবে, তা আগেই ঘোষণা হয়েছিল। পরিবেশের সুরক্ষা ও গৃহস্থের সাশ্রয়, এই দু’টি লক্ষ্যে একই সঙ্গে এগোনো আকর্ষণীয় প্রস্তাব, সন্দেহ নেই। ‘প্রধানমন্ত্রী সূর্যোদয় যোজনা’ নামাঙ্কিত এই প্রকল্পটি কত দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে, সে প্রশ্ন অবশ্য থেকেই যায়। কারণ, তার শর্তগুলি কী করে এবং কখন পূরণ হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

সৌরবিদ্যুতের দিকে তাকালেই পথের জটিলতার একটা ধারণা তৈরি হয়। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উপকরণগুলি (সোলার সেল, মডিউল, পলিসিলিকন) প্রায় সবই আমদানি করতে হয় ভারতকে। ফলে, সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন দ্রুত অনেকগুণ বাড়াতে চাইলে হয় বিপুল হারে আমদানির জন্য প্রচুর অর্থ বরাদ্দ করতে হবে, না হলে ভারতের নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। এর কোনটি হবে, কী ভাবে হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। অথচ, ভারত বছরে তিনশো দিন সূর্যালোক পায়, তাকে কাজে লাগালে আড়াই হাজার গিগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যেতে পারে। এতে এক দিকে তেল আমদানির বিপুল খরচ কমবে, একই সঙ্গে পরিবেশ দূষণ রোধ করে সুস্থায়ী উন্নয়ন নিশ্চিত করবে, ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার বজায় থাকবে। আন্তর্জাতিক নানা চুক্তিতে এখন কার্বন নিঃসরণের পরিমাপ একটি শর্ত হয়ে উঠেছে, যা ক্রমশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ছাপ ফেলবে। সেই তাগিদে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতি বছর পঞ্চাশ গিগাওয়াট পুনর্ব্যবহারযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়েছে, যার অধিকাংশই হবে সৌরবিদ্যুৎ।

সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে বিদ্যুৎ গ্রিড ব্যবস্থার সংস্কারও প্রয়োজন। সেগুলি প্রায় সব রাজ্যে দুর্বল, অপচয়-প্রবণ। গ্রিডের উন্নতিতে বিনিয়োগ না করে সৌরবিদ্যুৎ বহনে গ্রিডকে ব্যবহার করলে লাভ হবে সামান্যই। পাশাপাশি, সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকাঠামো দ্রুত বাড়াতে হলে গ্রামাঞ্চলে জমি প্রয়োজন। ভারতে জমি অধিগ্রহণ কত কঠিন, তা অজানা নয়। জমি সংক্রান্ত আইনের সংস্কার, আইনের প্রয়োগ প্রয়োজন— এমন নানা ক্ষেত্রে সমন্বয় দরকার। ভরসা এটুকুই যে, পরিবেশ সুরক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শক্তি উৎপাদনের নানা দিক এ বার উল্লিখিত হয়েছে বাজেটে। যেমন, কমপ্রেসড বায়োগ্যাস এবং কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাসের একটি মিশ্রণ ক্রমে পরিবহণ ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা হবে, শিল্পে ব্যবহারের জন্য বায়ো-পলিমার, বায়ো-প্লাস্টিকের উৎপাদনকে গুরুত্ব দেওয়া হবে, জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এমন সব লক্ষ্যই প্রয়োজনীয় এবং জরুরি। তবে, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বণ্টনের পরিকাঠামোর সংস্কার, ও নতুন ব্যবস্থা নির্মাণে বহুমাত্রিক, ধারাবাহিক সমন্বয় প্রয়োজন। কেবল অর্থের পরিমাণ দিয়ে সে বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছার পরিমাপ চলে না। দরকার সুষ্ঠু রাজনীতি, স্বচ্ছ প্রশাসন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

electricity Green Energy Eco-friendly Budget 2024 Solar electricity Solar Electricity Trade

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy