Advertisement
E-Paper

অপরাধের নেশা

স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই এলাকায় বহু চোলাইয়ের ঠেক চলে। দিনের বেলায় প্রকাশ্যে বসে মদ্যপানের আসর। সন্ধ্যার পর মেয়েরা রাস্তায় বেরোতে ভয় পান।

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:০০
Representational image of Illegal liquor and Crime against Women.

নেশার ঠেকগুলির আশেপাশে মেয়েদের যৌন হেনস্থার ঘটনা হামেশাই ঘটে। প্রতীকী ছবি।

চোলাই মদ এবং সমাজবিরোধীদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কটি ইতিপূর্বে এ রাজ্যে বহু ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত। সুতরাং, সম্প্রতি উলুবেড়িয়ায় যে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটল, তাকে বিচ্ছিন্ন বা অপ্রত্যাশিত ঘটনা বলে মনে করার কোনও কারণ নেই। বরং ঘটনাটিকে চোলাইয়ের ঠেক এবং সমাজবিরোধী কাজকর্মের বাড়বাড়ন্তের দীর্ঘ ধারাবাহিকতায় এক নতুন সংযোজন বলা চলে। সেখানে দুই মত্ত যুবক কিশোরী কন্যার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করায় বাধা দেন মেয়েটির বাবা। এই ‘অপরাধ’-এ পিটিয়ে খুন করা হল তাঁকে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই এলাকায় বহু চোলাইয়ের ঠেক চলে। দিনের বেলায় প্রকাশ্যে বসে মদ্যপানের আসর। পরিস্থিতি এমনই দুর্বিষহ যে, সন্ধ্যার পর মেয়েরা রাস্তায় বেরোতে ভয় পান।

হাওড়ার বিভিন্ন অঞ্চলে চোলাই মদের ভাটির কথা অজানা নয়। অতি সম্প্রতি এই জেলারই নাজিরগঞ্জে কার্যত বাড়ির দোরগোড়ায় মদ বিক্রি ও মদের আসর বসানোর প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হতে হয়েছে এক ব্যবসায়ীকে। ২০২০ সালে এক কলেজছাত্রীর যৌন হেনস্থা রুখতে গিয়ে মারা গিয়েছিলেন তাঁর মা। কিছু কাল পূর্বে সংবাদে প্রকাশিত হয়েছিল, উলুবেড়িয়ার এখনও কিছু গ্রামে চোলাই মদ তৈরি কুটির শিল্পের পর্যায়ে রয়ে গিয়েছে। ঘরে ঘরে তা তৈরি হয়, পৌঁছে যায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। প্রশ্ন হল, প্রশাসন তবে কী করছে? প্রশাসন যে চোলাই রুখতে কোনও পদক্ষেপ করেনি, তা নয়। বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত পুলিশের অভিযান চলে, ধরপাকড় হয়। কিন্তু কিছু কাল পরেই পূর্বাবস্থা ফিরে আসে। ভাটি ভেঙে দিলে বাইরে থেকে চোলাই এনে বিক্রি করা হয়। উলুবেড়িয়ার যে অঞ্চলে খুনের ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে নিত্য দিন মদ খাওয়া এবং বিক্রি নিয়ে অশান্তি চলে বলে অভিযোগ। অথচ পুলিশের দাবি, সেখানে বছরভর অভিযান চালানো হয়। এ-ক্ষণে পুলিশের ভাবা প্রয়োজন, বছরভর অভিযান চালিয়েও যদি প্রকৃত সমস্যার সুরাহা না হয়, তবে সে অভিযানের উদাহরণ অপ্রয়োজনীয়। বরং, শুধুমাত্র অভিযানের ভরসায় নিশ্চিন্ত না থেকে বছরভর নজরদারি এবং উপদ্রুত অঞ্চলগুলিতে পুলিশ প্রহরা বৃদ্ধি করা জরুরি। চোলাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান এবং প্রচারকার্য চালানোর পরও যে এমন ঘটনা নিয়মিত ঘটছে, তা যথেষ্ট উদ্বেগের।

চোলাই মদ তৈরি এবং বিক্রির সঙ্গে মেয়েদের সামাজিক এবং আর্থিক নিরাপত্তার প্রশ্নটি ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত। নেশার ঠেকগুলির আশেপাশে মেয়েদের যৌন হেনস্থার ঘটনা হামেশাই ঘটে। পরিবারেও নেশাগ্রস্ত স্বামীর হাতে মেয়েদের নিয়মিত প্রহৃত হতে হয়। অভাবের সংসারে যৎসামান্য রোজগার চোলাইয়ের ঠেকে উড়িয়ে এলে আর্থিক সঙ্কট বাড়ে। এই সমস্যাগুলির হাত থেকে পরিত্রাণ পেতেই এক সময় বিভিন্ন অঞ্চলের মহিলারা উদ্যোগী হয়ে প্রমীলা বাহিনী গড়ে চোলাইয়ের ঠেক ভাঙার অভিযান শুরু করেছিলেন। তাঁদের নিরন্তর লড়াইয়ে বহু জায়গায় সাফল্যও এসেছে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে প্রশাসনিক সহায়তা মিললেও সর্বত্র তা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। মনে রাখতে হবে, চোলাই এবং তাকে ঘিরে ঘটে চলা অপরাধের বৃত্ত এক সামাজিক সমস্যা। সুতরাং, সমস্ত পক্ষকে একজোট হয়ে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে হবে। নয়তো সম্মান এবং প্রাণহানি— কোনওটাই আটকানো যাবে না।

Hooch Antisocials Crime Women
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy