Advertisement
০৯ মে ২০২৪
Liquid Waste

দূষণপ্রবাহ

২০২২ সালে এই রাজ্যের ১০৪টি খাল, নালাকে তাদের রিপোর্টে চিহ্নিত করেছিল কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। গঙ্গায় এই পরিমাণ দূষিত বর্জ্য মেশার জন্য সেগুলিই দায়ী।

waste.

কলকাতাতে প্রতি দিন ১৪০ কোটি লিটার তরল বর্জ্য উৎপাদিত হয়। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৩ ০৫:২৯
Share: Save:

কলকাতার ঘাট হবে বারাণসী। তাই মহানগরে ঘটা করে গঙ্গা আরতির সূচনা হয়েছে প্রশাসনিক উদ্যোগে। কিন্তু গঙ্গা নিয়ে এ-হেন আদিখ্যেতাও যে পূতিগন্ধময় চিত্রটি ঢাকতে পারে না, তা হল— প্রতি দিন ৮৮৭ কোটি লিটার তরল বর্জ্য গঙ্গায় গিয়ে মিশছে। ২০২২ সালে এই রাজ্যের ১০৪টি খাল, নালাকে তাদের রিপোর্টে চিহ্নিত করেছিল কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। গঙ্গায় এই পরিমাণ দূষিত বর্জ্য মেশার জন্য সেগুলিই দায়ী। শুধুমাত্র ১১টি খাল ও নালা থেকেই মেশে ৪২৫ কোটি লিটার তরল বর্জ্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ১১টি খাল, নালার দূষণপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে অথবা তাদের গতিপথ পাল্টে দিলে সামগ্রিক দূষণের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সেই পথে হেঁটেই অবশেষে প্রাথমিক ভাবে এই খাল, নালাগুলির দূষণ কমাতে পদক্ষেপ করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

ইতিবাচক পদক্ষেপ, সন্দেহ নেই। কিন্তু সমগ্র প্রকল্পটির দ্রুত ও যথাযথ রূপায়ণ বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। গত সেপ্টেম্বর মাসেই কঠিন ও তরল বর্জ্যের ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার জন্য জাতীয় পরিবেশ আদালত রাজ্যের উপর ৩৫০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ ধার্য করেছিল। অতঃপর তহবিল গড়া হয়েছে। কিন্তু কাজের গতি আদৌ বেড়েছে কি? ইতিপূর্বে হুগলির ত্রিবেণী থেকে হাওড়ার সাঁকরাইল পর্যন্ত সরস্বতী নদীর গতিপথে দখলদারি এবং সংলগ্ন পুর এলাকার অপরিশোধিত তরল বর্জ্য ক্রমাগত মিশে নদীর অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তোলার অভিযোগ উঠেছিল। জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলাও দায়ের হয়েছিল। সম্প্রতি সেই মামলাতেও রাজ্য নিকাশি বর্জ্য মেশা নিয়ে ভুল তথ্য দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে আদালত। ফলে সংশয় অমূলক নয়। কলকাতা পুরসভা প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র কলকাতাতেই প্রতি দিন ১৪০ কোটি লিটার তরল বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে পাঁচটি নিকাশি পরিশোধনাগারে একত্রে পরিশোধিত হয় ১৮ কোটি লিটারের কিছু কম পরিমাণ বর্জ্য। অন্য দিকে, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি অঞ্চল একাই পরিশোধন করে প্রতি দিন ৯১ কোটি লিটার বর্জ্য। অবশিষ্ট অপরিশোধিত বর্জ্য নিয়েই উদ্বেগ। এই পরিমাণ বর্জ্য নদীতে মিশলে তা যে দূষণ ছড়ায়, তার ফলে জনস্বাস্থ্যের সমূহ ক্ষতি ঘটে। অপরিশোধিত বর্জ্য জলের অক্সিজেনের মাত্রাকেও হ্রাস করে, যার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে মাছ-সহ বিভিন্ন জলজ প্রাণীর উপর।

কেন্দ্রীয় সরকারের ‘নমামি গঙ্গে’ এবং ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান’-এর মতো প্রকল্পগুলিতে তাই গঙ্গাদূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিশোধনাগারের মাধ্যমে গঙ্গা-তীরবর্তী শিল্পগুলির শিল্পজাত বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ, নিকাশি পরিশোধনাগারের আধুনিকীকরণের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার ফল কিছু ফলল কি? বিবিধ প্রকল্প, পরিকল্পনা সত্ত্বেও যত পরিমাণ তরল বর্জ্য প্রতি দিন গঙ্গায় মিশছে এই রাজ্যে, তা উদ্বেগজনক। সমস্যা অবশ্য শুধুমাত্র তরল বর্জ্যের ক্ষেত্রেই নয়, কঠিন বর্জ্যের ক্ষেত্রেও দৃশ্যমান। প্রতি দিন উৎপাদিত কঠিন বর্জ্যের এক বৃহৎ অংশ কোনও প্রক্রিয়া ছাড়াই আঁস্তাকুড়ে জমা হয়। এত দিনেও ধাপায় স্তূপীকৃত বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের কাজটি আশানুরূপ গতি পায়নি। এই উদাসীনতা অক্ষমণীয়। গঙ্গার দিকে দূষণপ্রবাহ রুখতে সর্বাগ্রে এই উদাসীনতা বর্জন করতে হবে। তরল বর্জ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার বদ্ধপরিকর— শুধুমাত্র এই মুখের কথায় চিঁড়ে ভিজবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Waste West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE