Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Visva Bharati

মন্ত্রহারা

ত্রদের দাবিগুলি নিয়ে উপাচার্য কি তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন? হস্টেল না-পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা নিরসন বা সহায়তা দানের ব্যবস্থা কি করেছিলেন?

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২২ ০৬:০২
Share: Save:

শিক্ষকরা প্রশ্নপত্র হাতে বসে রইলেন, পরীক্ষার্থীদের আসন রইল শূন্য— এমন চিত্র এই রাজনীতি-উন্মত্ত বঙ্গেও বিরল। আজ তা দেখা যাচ্ছে গ্রাম-মফস্সলের কোনও কলেজ নয়, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতীতে। এ রাজ্য ছাত্র আন্দোলন কম দেখেনি, বৃহত্তর নাগরিক সমাজ অনেক ক্ষেত্রে ছাত্রদের দাবির ন্যায্যতাও স্বীকার করে আন্দোলন সমর্থন করেছে, এবং আন্দোলনরত ছাত্রদের দমন-পীড়নের চেষ্টার নিন্দা করেছে। অপর দিকে, ‘ছাত্র আন্দোলন’ কত সহজে হয়ে উঠতে পারে উন্মত্ত উচ্ছৃঙ্খলতা, তা-ও দেখেছেন রাজ্যবাসী। তখন দুই পক্ষের অহং-এর আস্ফালন বড় হয়ে উঠতে চায় ন্যায়-অন্যায়ের বিতর্কের চাইতে। ঘোষিত দাবিগুলি হয়ে ওঠে কেবল বাহ্য প্রদর্শনী, কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রদের মধ্যে শক্তির পরীক্ষাই মুখ্য হয়ে ওঠে। বিশ্বভারতীর ছাত্রদের প্রতিবাদের যথার্থতা বিচার করতে গেলে সেই প্রেক্ষিতটি মনে রাখতে হবে। হস্টেল বন্ধ থাকার জন্য বহু ছাত্রছাত্রী অসুবিধায় পড়েছেন, ছাত্রদের এই বক্তব্য ভুল নয়। কিন্তু তাঁরা প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতায় নিজেদের যে শক্তির পরিচয় দিলেন, তা কি আশ্রয়-সন্ধানরত ছাত্রছাত্রীদের সহায়তায় নিয়োজিত হতে পারত না? হস্টেল খোলার দাবিতে পরীক্ষা বয়কটের ডাক, পরীক্ষার দিন ভবনের গেট বন্ধ করে অবস্থান— এই কি আন্দোলনের পথ? শিক্ষক ও অন্যান্য পদস্থ কর্তাদের ঘেরাও তুলতে পুলিশ ডেকেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, কর্মসমিতির দুই সদস্য পদত্যাগ করেছেন ছাত্রদের ‘সহায়তা’ করতে তাঁদের অক্ষমতা জানিয়ে, এগুলি গভীর অস্বস্তির কারণ।

এই বছর অফলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের যে সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষ নিয়েছেন, তার ন্যায্যতা নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা প্রশ্ন তুলতেই পারেন। কিন্তু এ-ও ঠিক যে, কোভিড অতিমারি-উত্তর পরিস্থিতিতে সর্বত্র প্রথা-বহির্ভূত নানা পরীক্ষারীতি এ বছর গ্রহণ করা হচ্ছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা-সহ প্রতিটি বড় পরীক্ষার ক্ষেত্রেই নানা অসুবিধার অভিযোগ উঠেছে। তা সত্ত্বেও ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছেন। পরীক্ষা হল না কেবল বিশ্বভারতীতে। তবে কি আজ শান্তিনিকেতনে ‘সহবীর্যং করবাবহৈ’ মন্ত্র আর ধ্বনিত হয় না? শিক্ষক ও ছাত্রের সংযুক্ত শক্তিতে বিঘ্ন অতিক্রমের প্রত্যয় কি আজ নিশ্চিহ্ন?

এর উত্তর দিতে হবে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকেও। উপাচার্য অচলাবস্থার জন্য রাজনৈতিক দলগুলিকে দায়ী করেছেন। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূল আর সিপিএম ছাত্র-আন্দোলনে ইন্ধন জোগাচ্ছে। প্রশ্ন উঠবে, ছাত্রদের দাবিগুলি নিয়ে উপাচার্য কি তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন? হস্টেল না-পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা নিরসন বা সহায়তা দানের ব্যবস্থা কি করেছিলেন? এমন সংবাদ মেলেনি। বরং জানা গিয়েছে, পরীক্ষায় না বসলে ছাত্রছাত্রীদের ‘অকৃতকার্য’ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। অতীতেও এমন কঠোর উপায়ে অসন্তোষ দমনে অধিক আগ্রহ দেখা গিয়েছে উপাচার্যের। ছাত্রছাত্রীদের বহিষ্কার, শিক্ষকদের বরখাস্ত, বিবিধ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সন্দিগ্ধ, শঙ্কাপঙ্কিল পরিবেশ তৈরি করেছে। ঘাত-প্রতিঘাতের আবর্তে পঠনপাঠন অপ্রধান হয়ে পড়ে। রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে এক বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থার সূচনা করেছিলেন। বিশ্বভারতী আজ সেই ধারণাকে নিয়ত বিদ্রুপ করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Visva Bharati
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE