Advertisement
E-Paper

উপেক্ষিত

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২১ ০৪:৫১
ম্যানহোলে পড়ে মৃত রঞ্জন সাহা।

ম্যানহোলে পড়ে মৃত রঞ্জন সাহা। ফাইল চিত্র।

ভালবাসার বিপরীতার্থক শব্দ ঘৃণা নহে, উপেক্ষা— লিখিয়াছিলেন এক বন্দিত সাহিত্যিক। কেবল মানুষের ক্ষেত্রে নহে, প্রশাসনের ক্ষেত্রেও তাহা প্রযোজ্য, বরং অনেক বেশি করিয়া। জনসমর্থনের ভিত্তিতে যাহার ক্ষমতালাভ, জনগণের অর্থে যাহার ব্যয় নির্বাহ, সেই শাসনব্যবস্থাই যদি জনজীবন রক্ষার কাজটি প্রতিনিয়ত উপেক্ষা করিয়া চলে, তাহা অপেক্ষা দুর্ভাগ্যের আর কী। দমদমে খোলা ম্যানহোলে পড়িয়া অটোচালক রঞ্জন সাহা মরিয়া গেলেন, নাকমুখ দিয়া কাদা-জল-আবর্জনা ঢুকিয়া বিষময় মৃত্যু। সেপ্টেম্বরের জলমগ্ন নিউ টাউনে পথ চলিতে জয়শ্রী রায়চৌধুরীর পা আটকাইয়া যায় খোলা নর্দমা বন্ধ করিবার কংক্রিটের দুইটি স্ল্যাবের মাঝখানে, দমকল, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মী, প্রতিবেশীদের দুই-তিন ঘণ্টার চেষ্টায় সেই আতঙ্ক ও নরকযন্ত্রণা হইতে মুক্তি পাইয়াছিলেন তিনি। ঢাকনাবিহীন ম্যানহোল, খোলা নর্দমার ঐতিহ্য কিন্তু শহরে বজায় থাকিয়াছে, রঞ্জনের মৃত্যু প্রমাণ।

মানুষ তলাইয়া যাইবার গহ্বর বলিয়াই উহার নাম ‘ম্যানহোল’ কি না, তাহা লইয়া বিদ্রুপ-বিলাপ অপেক্ষা যে অনুভবটি অধিক পুঞ্জিত হইতেছে, তাহা ক্রোধের। শহর জুড়িয়া উন্মুক্ত শত শত ম্যানহোল ও নর্দমা সাক্ষ্য দিবে, প্রশাসন কীরূপ নিষ্কর্মা। রঞ্জনের মৃত্যুর পরে জানা গিয়াছিল, যে বসতি অঞ্চলের ম্যানহোলে পড়িয়া এই ভয়ানক ঘটনা, সেখানকার বাসিন্দাদের একাংশ প্রায়ই ম্যানহোলের ঢাকনা উঠাইয়া সেখানেই শৌচাদি সারিয়া থাকেন। শহরাঞ্চলেও শৌচালয়ের অভাব, ইহা কি প্রশাসনের ব্যর্থতা নহে? বহু এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি করিয়া ছাঁট লোহার দোকানে বিক্রি করিয়া দেয় কিছু লোক। পুলিশ সম্ভাব্য অপরাধীদের ধরিতে পারে না বা বিক্রয়স্থলগুলির হদিস জানে না? রাতে কি প্রহরা থাকে না? আরও বড় কথা, রাতে অন্ধকারই বা থাকিবে কেন, আলোকস্তম্ভ বা বাতি নাই? আলোকবিরল স্থান বলিয়াই রঞ্জন খোলা ম্যানহোল দেখিতে না পাইয়া পড়িয়া গিয়াছিলেন, কিন্তু পুর-পথে রাতে আলোর ব্যবস্থা করা আকাশের চন্দ্র-নক্ষত্ররাজির নহে, প্রশাসনেরই কাজ।

এই সব অব্যবস্থা, নিষ্ক্রিয়তা বা দীর্ঘসূত্রতা অন্তিমে সেই এক বিন্দুতেই আসিয়া মিশে— উপেক্ষায়। এখন নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় সক্রিয়তার বান ডাকিয়াছে: অটোচালকের মৃত্যুতে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হইয়া মামলা রুজু করিয়াছে, ম্যানহোলের নিরাপত্তায় শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে পুর-ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যবস্থা করিতে বলিয়াছে পুরসভা। কিন্তু ভুলিলে চলিবে না, ফুটপাতে কেন ম্যানহোল খোলা থাকিবে, সেই গাফিলতির প্রশ্নে নাগরিক-মৃত্যুর অব্যবহিত পরে পরস্পর দায় ঠেলাঠেলির কুনাট্যও দেখা গিয়াছে। পুরসভা বলিয়াছে, দমদমের ঘটনায় নিকাশি নালাটির রক্ষণাবেক্ষণের ভার পূর্ত দফতরের, ম্যানহোলের দায়িত্বও। পূর্ত দফতর আবার কাঠগড়ায় তুলিয়াছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। নাগরিক জীবন কত দূর অসহায় ও মরিয়া হইলে ম্যানহোলের ঢাকনাও চুরি করিয়া বেচিতে হয় তাহা অন্য প্রশ্ন, তাহাতে প্রশাসনের গাফিলতি ঢাকা পড়ে না। নূতন ঢাকনা বসিবে, চুরি হইবে, খোলা ম্যানহোলে আবারও নাগরিক-মৃত্যু ঘটিবে, এই দুঃসহ ঘটনাবৃত্ত চলিতে পারে না। একুশ শতকের কোনও সভ্য শহরে বা সমাজে তো নহেই।

Dum Dum
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy