Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Relationship Between the State Government and Governor

লজ্জা

এই লজ্জা কবে মুছবে, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কবে প্রকৃত অর্থে শিক্ষাক্ষেত্র হয়ে উঠবে— দলীয় রাজনীতির পেশি প্রদর্শনের আখড়া বা আত্মম্ভরিতার পরীক্ষাগার নয়, কে জানে!

CV Ananda Bose and Mamata Banerjee.

(বাঁ দিকে) রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস এবং (ডান দিকে) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৩ ০৫:১৫
Share: Save:

সমস্যার সমাধান খুঁজে পেতে দম্পতির জন্য শয়নকক্ষের আর প্রশাসনের জন্য আলোচনার টেবিলের বিকল্প নেই, বলেছিলেন ইতিহাসপ্রসিদ্ধ এক প্রশাসক-নেতা। লঘু চালের কথা বটে, তবে সরকারের ক্ষেত্রে যে কথাটা শতভাগ সত্যি তা নিয়ে সন্দেহ নেই। পশ্চিমবঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য নিয়োগ ঘিরে এই মুহূর্তে রাজ্য সরকার ও রাজ্যপালের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে, সেও কি যথার্থ পথে, যথাযথ আলোচনায় রক্ষা করা যেত না? উপাচার্য নিয়োগ ঘিরে যা হচ্ছে তাকে ছেলেখেলা বলাই সঙ্গত, সমগ্র ব্যাপারটিই হয়ে দাঁড়িয়েছে দু’পক্ষের অহং-এর লড়াই। কে ঠিক, কোন পক্ষ আইন মেনে পদক্ষেপ করছে, কে-ই বা ক্ষমতার জোরে নির্দেশ চাপিয়ে দিচ্ছেন— এই তর্ক ও তার নিরসন পরের কথা। গোড়ার কথাটি অত্যন্ত দুশ্চিন্তার: এই সব কিছুর প্রভাব পড়ছে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপরে, দৈনন্দিন পঠনপাঠন থেকে অর্থ বরাদ্দ, নিয়োগ-সহ নানা ক্ষেত্রে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তাবৎ সিদ্ধান্তের নিয়ন্তা উপাচার্য; সরকার ও রাজ্যপালের দ্বৈরথে সেই পদ ও পদাধিকারী ভুক্তভোগী হওয়ার মতো দুর্ভাগ্য দ্বিতীয়টি নেই।

জগদীপ ধনখড় রাজ্যপাল থাকাকালীনও উপাচার্য নিয়োগ ঘিরে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত চরমে উঠেছিল। এতটাই যে, রাজ্য সরকার মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য করে তোলার লক্ষ্যে বিলের খসড়া পর্যন্ত তৈরি করে। অভিযোগ ছিল, কেন্দ্র-রাজ্য দলীয় রাজনীতির বিরোধে রাজ্যপাল নাগাড়ে কেন্দ্রের পতাকা উড়িয়ে চলেছেন, তা করতে গিয়ে বাধা দিচ্ছেন উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়ায়। কিন্তু দোষ আছে সরকারেরও। রাজ্যের এক গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে সময় থাকতে থাকতে পরবর্তী স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের কথা না ভেবে, উপাচার্যদের মেয়াদ শেষের মুখে একটু একটু করে কার্যকাল বাড়িয়ে চলা, ‘অস্থায়ী’ উপাচার্যদের দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় চালানো কোনও সমাধান হতে পারে না। এই নিয়ে বর্তমান রাজ্যপালের সঙ্গে সরকারের মতান্তর তুঙ্গে উঠেছে— সরকারের সঙ্গে পরামর্শ না করে রাজ্যপাল নিজেই অস্থায়ী বা অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য নিয়োগ করছেন, শিক্ষামন্ত্রী সেই উপাচার্যদের ‘অনুরোধ’ করছেন নিয়োগপত্র গ্রহণ না করার, অনুরোধ না-মানা উপাচার্যদের বেতন ও ভাতা রাজ্য সরকার বন্ধ করে দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাক্ষেত্রের, বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাস্তবচিত্রটি আজ এমনই দুর্দশার।

উচ্চমানের বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষার কথা বলতেই যে রাজ্য একদা কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য ছিল, শিক্ষাদরদি ব্যক্তিত্ববান উপাচার্যদের নেতৃত্বে এবং প্রশাসনের সর্বৈব সহযোগিতায় একটি ভাল বিশ্ববিদ্যালয় কেমন করে চলে তার শিক্ষণীয় উদাহরণ ছিল, সেই পশ্চিমবঙ্গকে আজ দেখতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির দুরবস্থা। রাজ্য সরকারের তরফে কোনও গঠনমূলক আলোচনার চেষ্টা নেই, যুদ্ধং দেহি রাজ্যপালের মুখে কখনও শোনা যাচ্ছে ‘ছাত্র উপাচার্য’-এর কথা, কখনও উপাচার্যের আসনে বসানো হচ্ছে বিচারপতিকে। সমগ্র চিত্রটিই দুর্ভাগ্যের, এবং ততোধিক লজ্জার। এই লজ্জা পশ্চিমবঙ্গের উচ্চশিক্ষার, এবং উপাচার্য নামের ‘একদা’ বহুমানিত পদটির। এই লজ্জা কবে মুছবে, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কবে প্রকৃত অর্থে শিক্ষাক্ষেত্র হয়ে উঠবে— দলীয় রাজনীতির পেশি প্রদর্শনের আখড়া বা আত্মম্ভরিতার পরীক্ষাগার নয়, কে জানে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CV Ananda Bose Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE