Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Students

অন্যায় দাবি

পশ্চিমবঙ্গে ছাত্র-বিক্ষোভের ধরনটি অত্যন্ত উদ্বেগের। দীর্ঘ দিনের ছাত্র-আন্দোলনের অভিজ্ঞতার পর এখন যেন ধরে নেওয়া হয় যে, কাঙ্ক্ষিত দাবিটি পূরণ হবে বিক্ষোভ, ভাঙচুর করলেই।

Picture of the students protesting for online examination.

অফলাইনের পরিবর্তে অনলাইন পরীক্ষার দাবিতে ছাত্র-বিশৃঙ্খলার সাক্ষী থেকেছে এ রাজ্য। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:৫২
Share: Save:

কলেজ ভাঙচুরের অভিযোগ স্নাতকোত্তর পড়ুয়াদের একাংশের বিরুদ্ধে। পড়ুয়াদের দাবি, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কঠিন, সুতরাং দেখে লিখতে দিতে হবে তাদের। স্বাভাবিক ভাবেই শিক্ষকরা রাজি হননি, সেখানেই গোলমালের সূত্রপাত। অবশ্য রাজ্যের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ-হেন দাবিদাওয়া অপরিচিত নয়। অতিমারি পর্বে কখনও পরীক্ষা না দিয়েই পাশ করিয়ে দেওয়া, কখনও নম্বর বৃদ্ধি, কখনও অফলাইনের পরিবর্তে অনলাইন পরীক্ষার দাবিতে ছাত্র-বিশৃঙ্খলার সাক্ষী থেকেছে এ রাজ্য। সব মিলিয়ে প্রতি বারই রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রের বেহাল দশা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।

অতিমারির সময়ে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসাবে যে অনলাইন শিক্ষা এবং কিছু ক্ষেত্রে পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল, সঙ্কট কেটে যাওয়ার পরও ছাত্রছাত্রীরা সেই ব্যবস্থা বজায় রাখার পক্ষপাতী। কারণটি বোঝা কঠিন নয়। অনলাইন পরীক্ষার ক্ষেত্রে যে ভাবে পরীক্ষা দেওয়ার ‘সুযোগ’ পাওয়া যায়, স্বাভাবিক ভাবেই অফলাইন পরীক্ষায় তা সম্ভব হয় না। এখানে একটি বিতর্ক উঠে আসতে পারে, প্রচলিত অফলাইন পরীক্ষার পদ্ধতিই শিক্ষার্থীর মূল্যায়নের শ্রেষ্ঠ মাপকাঠি কি না, সেই নিয়ে। কিন্তু সেই বিতর্কের পাত্রপাত্রী এবং ক্ষেত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন হওয়ার কথা। এই নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর চাপ দিতে পারে না— তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, অনেক সময়ই শিক্ষার্থীদের এই দাবির ভিত্তি কিন্তু উন্নততর মূল্যায়ন নয়। বরং দাবিটি ফাঁকিবাজির অধিকারের— যা মেনে নেওয়ার অর্থ উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যটিকেই অস্বীকার করা। মনে রাখতে হবে, অনলাইন পরীক্ষাব্যবস্থা একান্তই জরুরি ভিত্তিতে করা হয়েছিল। দীর্ঘমেয়াদে সেটা যে বজায় রাখা সম্ভব হবে না, সেটা শিক্ষাবিদরাও স্বীকার করে নিয়েছিলেন। সারা দুনিয়াতেই তখন এই অাপৎকালীন ব্যবস্থা গৃহীত হয়, এবং তার পর সেই ব্যবস্থা সরিয়েও নেওয়া হয়। কিন্তু ভারত ছাড়া খুব কম দেশে এমন অন্যায় জবরদস্তি করে চলেছে ছাত্রসমাজ।

ঘটনা হল, অনলাইন পরীক্ষাব্যবস্থা ও অনলাইন পড়াশোনা— দু’টি ভিন্ন বিষয়। অনলাইন পড়াশোনার সুবিধাগুলি অনস্বীকার্য। ডিজিটাল মাধ্যমে যে কোনও জায়গা থেকে বা পরিস্থিতিতে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। কোনও বিষয়ের উপরে তথ্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আপলোড করা থাকলে যে কেউ সেটির নাগাল পেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে অফলাইন শিক্ষার তুলনায় অনলাইন শিক্ষায় খরচও কম। তাই আগামী দিনে অফলাইন এবং অনলাইন— এই ‘হাইব্রিড মোড’-এ শিক্ষাদান করা হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপরে, হয়তো বৃহত্তর নীতিসংক্রান্ত আলাপ-আলোচনার উপরেও। কিন্তু ছাত্রছাত্রীর ভাঙচুর-অবরোধের মাধ্যমে তার মীমাংসা হতে পারে না। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে ছাত্র-বিক্ষোভের ধরনটি অত্যন্ত উদ্বেগের। দীর্ঘ দিনের ছাত্র-আন্দোলনের অভিজ্ঞতার পর এখন যেন ধরে নেওয়া হয় যে, কাঙ্ক্ষিত দাবিটি পূরণ হবে বিক্ষোভ, ভাঙচুর করলেই। অথচ, শিক্ষার্থীদের এ-হেন আচরণে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাসমাজকে এই সত্যের মুখোমুখি হতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Students Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE