Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Supreme Court of India

হঠাৎ হাওয়া

এমন পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে যখন নাগরিকের বাক্‌স্বাধীনতার অধিকারটি দ্ব্যর্থহীন ভাবে তুলে ধরা হল, তা এক বড় স্বস্তির হাওয়া বইয়ে দিল।

supreme court

— ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৪ ১০:০৮
Share: Save:

রাজা, তোর কাপড় কোথায়, বলে যে ছেলেটি চেঁচিয়েছিল, তার ততঃপর কী গতি হয়েছিল, সে কথা বলে যাননি হান্স ক্রিস্টিয়ান অ্যান্ডারসন। ভারতে অবশ্য এমন রূঢ়সত্যভাষীদের কপালে কী আছে, গত কয়েক বছরে সূর্যালোকের মতো স্পষ্ট। সে সাংবাদিক হোন, লেখক হোন, সাধারণ নাগরিক হোন— বর্তমান সরকারের সমালোচক মানেই তাঁকে শাস্তিযোগ্য বলে মনে করা হয়, যেন সরকারের কাজের উদ্বাহু প্রশংসা করাই গোটা দেশের বাসিন্দাদের কাজ। এঁদের অনেককেই আবার রাষ্ট্রদ্রোহের ছাপ দিয়ে দেওয়া হয়, যেন সরকার ও রাষ্ট্র সমার্থক। আগে গৌরী লঙ্কেশদের ‘সরিয়ে’ দেওয়া হত সমাজভুক্ত সংগঠনের মাধ্যমে, এখন সরাসরি সরকারি হস্তক্ষেপে জেলে জায়গা হয় ভারাভারা রাও বা সিদ্দিক কাপ্পানদের। রাষ্ট্রদ্রোহের শাস্তি এই ভারতে খুবই কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে যখন নাগরিকের বাক্‌স্বাধীনতার অধিকারটি দ্ব্যর্থহীন ভাবে তুলে ধরা হল, তা এক বড় স্বস্তির হাওয়া বইয়ে দিল। যে নাগরিকরা সমাজ দেশময় নানা দুশ্চিন্তা ও দুষ্কার্যের চাপে মর্মবেদনায় এখন তাপিত হয়ে আছেন, তাঁদের কাছে এই হঠাৎ হাওয়ায় ভেসে আসা ধন চমকে দেওয়ার মতোই প্রাপ্তি।

মহারাষ্ট্রের কোল্হাপুর কলেজের এক অধ্যাপক আহমদ আজ়মের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল, কেননা তিনি জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদের দিন ৫ অগস্টকে দেশের জন্য এক কালো দিন বলে বর্ণনা করে, এবং তার সঙ্গে পাকিস্তানবাসীদের তাঁদের স্বাধীনতা দিবসের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা করেছিলেন। মামলা সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত এলে বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং বিচাপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চ এক মামলার রায়ে জানায়, ৩৭০ ধারা রদের মতো রাষ্ট্রের যে কোনও কাজের সমালোচনা করার অধিকার নাগরিকের বিলক্ষণ আছে, সব সমালোচনাই অপরাধ হতে পারে না: নতুবা গণতন্ত্রের বাঁচার আশা নেই। ভারতীয় সংবিধান উদ্ধৃত করে তাঁরা বলেছেন ১৯(১)(ক) ধারা সকলকে নিজের মত প্রকাশের অধিকার দিয়েছে।

এই প্রসঙ্গে একটি বিষয় স্পষ্ট করা প্রয়োজন। সংবিধানের এই ধারার পরেই যে ধারাটি আছে, সেই ১৯(২) ধারাটিতে বাক্‌স্বাধীনতার কিছু সীমাও নির্দেশিত। অনেক সময়ে এই ধারাটি দেখিয়ে বর্তমান ভারতে নাগরিকের মতনিষ্পেষণের চেষ্টা চলে। মনে রাখা দরকার, এই ধারা অনুযায়ী ‘সীমা’ খুব বিশেষ ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। পাবলিক অর্ডার বা আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার পক্ষে ক্ষতিকারক, দেশের সার্বভৌমতার পরিপন্থী, কিংবা বিদেশের সঙ্গে মৈত্রীপথে বাধাস্বরূপ কোনও কথা বললে তা সমস্যাজনক বলা যেতে পারে। ৩৭০ ধারা বিলোপের সমালোচনা বা পাকিস্তানের স্বাধীনতা-শুভেচ্ছাকে এই গোত্রে ফেলার চেষ্টা করা যায় না। বাস্তবিক, কোনও সরকার ৩৭০-পন্থী, কোনও সরকার ৩৭০-বিরোধী— কিন্তু সে সবই ভারতীয় রাষ্ট্রের নিজস্ব চলনবলনের হিসাব, কোনও ক্ষেত্রেই সার্বভৌমতার প্রশ্ন ওঠে না, আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের কথা তো ওঠেই না। সেই রকমই পাকিস্তানের প্রতি শুভেচ্ছা নিশ্চয়ই কোনও আন্তর্জাতিক সঙ্কট তৈরি করতে পারে না! সব মিলিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আর এক বার মনে করিয়ে দিল, ভারতীয় সরকার ও সমাজকে নতুন করে অনেকখানি সহিষ্ণুতা এবং নৈতিক বিবেচনা অভ্যাস করতে হবে। করতে হবেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Supreme Court of India freedom of speech India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE