Advertisement
E-Paper

অপরাধ নয়?

বৈবাহিক সম্পর্কে সম্মতিহীন যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণ বলা যায় কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেছে। শুধু ভারতেই নয়, বহু দেশেই প্রশ্নটি বারে বারে উঠেছে।

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২২ ০৪:৫২

বৈবাহিক সম্পর্কে স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন ধর্ষণ কি না, এবং তাকে অপরাধের পর্যায়ভুক্ত করা যাবে কি না, সেই প্রশ্নটি নতুন নয়। সম্প্রতি দিল্লি হাই কোর্টের এক ডিভিশন বেঞ্চকেও এই বিষয় সংক্রান্ত এক মামলায় বিভক্ত রায় দিতে দেখা গেল। রায় দানে মতপার্থক্যের কারণটি ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ নম্বর ধারার মধ্যে নিহিত। সেখানে ‘ধর্ষণ’-এর সংজ্ঞা হিসাবে বলা হয়েছে— যখন এক জন পুরুষ কোনও মহিলার সম্মতি ছাড়াই তাঁর সঙ্গে যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হন। কিন্তু এখানে একটি ব্যতিক্রমের কথাও বর্ণিত হয়েছে— ‘বৈবাহিক ব্যতিক্রম’। এই ব্যতিক্রম অনুযায়ী, স্ত্রীর বয়স যদি ১৫ বছরের অধিক হয়, তখন স্বামী তাঁর সঙ্গে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হলে তা ধর্ষণ হবে না, সেখানে স্ত্রীর সম্মতি থাক বা না থাক। এই ব্যতিক্রমী অংশটিকেই বিচারপতি রাজীব শকধের ‘অসাংবিধানিক’ বলে উল্লেখ করেছেন। অন্য দিকে, এর ঠিক বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গিটি তুলে ধরেছেন বিচারপতি হরি শঙ্কর।

স্ত্রীর সম্মতি ছাড়াই তাঁর সঙ্গে যৌনসম্পর্ক স্থাপনকে ‘ধর্ষণ’ না-বলার কারণটি পুরুষতান্ত্রিক— যা বলে যে, বিবাহের পর মেয়েরা স্বামীর সম্পত্তি। বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটিতে প্রবেশ করে তাঁরা মন, আত্মা এবং নিজের শরীরের উপর নিজস্ব অধিকারটিও হারান। ভারতীয় দণ্ডবিধি এই অবস্থানটিকে কার্যত মান্যতা দেওয়ায় অগণিত বধূ দিনের পর দিন শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতিত হয়েছেন, কিন্তু সুবিচার পাননি। অথচ, ভারতীয় সংবিধানে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পরিবার, গোষ্ঠীর ঊর্ধ্বে উঠে ব্যক্তিমানুষকে কিছু অনন্য মৌলিক অধিকার প্রদান করা হয়েছে, যার মধ্যে নিজ শরীরের উপর অধিকারটিও অন্তর্ভুক্ত। স্বাভাবিক যুক্তি বলে, সেই অধিকার কোনও ভাবে, কোনও মুহূর্তে, কারও দ্বারা লঙ্ঘিত হলে, তা অপরাধের মধ্যেই পড়ে। এখানে কোনও ব্যতিক্রম গ্রাহ্য হওয়ার কথা নয়।

তবুও, বৈবাহিক সম্পর্কে সম্মতিহীন যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণ বলা যায় কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেছে। শুধু ভারতেই নয়, বহু দেশেই প্রশ্নটি বারে বারে উঠেছে। কারণ, বিবাহ এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যা সমাজের ভিতটিকে ধরে রেখেছে। ২০১৭ সালে এক মামলায় কেন্দ্রীয় সরকার হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল, বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসাবে আইনে অন্তর্ভুক্ত করলে ‘বিবাহ’ নামক প্রতিষ্ঠানটি সমস্যার সম্মুখীন হবে। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও ভাবা প্রয়োজন যে, সময়ের সঙ্গে যে কোনও ধারণাতেই পরিবর্তন আবশ্যক হয়ে পড়ে। এই মুহূর্তে প্রশ্ন করা প্রয়োজন বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটির অন্তর্নিহিত যুক্তিকাঠামোকে। স্ত্রীর উপর স্বামীর যে ‘অধিকার’ বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটিকে ধরে রেখেছে, এবং বৈবাহিক ধর্ষণকে স্বীকৃতি দিলে যে অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়ে প্রতিষ্ঠানটি বিপন্ন হবে, তার নৈতিকতাকে কঠোর ভাবে প্রশ্ন করা বিধেয়। এবং, সেই প্রশ্ন করতে হবে ভারতীয় সংবিধানের আদর্শগত অবস্থানকে মাথায় রেখেই। ইতিহাস সাক্ষী যে, পরিবর্তনই একমাত্র ধ্রুব। সময়ের স্রোতে সবই পাল্টে যায়। বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটিও বহু স্তরে পাল্টেছে। ফলে, প্রতিষ্ঠানটিকে ভেঙে না ফেলেই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে ক্ষমতার উচ্চাবচতার চরিত্রটিও পাল্টানো যায়। সেই আলোচনার সূচনা হওয়া বিধেয় সামাজিক স্তরে। একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে অন্তরের মনুবাদকে বিসর্জন দেওয়াই বিধেয়।

Marital Rape Law India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy