E-Paper

খেলা হল

মোহনবাগানের সমর্থক ইস্টবেঙ্গলের সমর্থককে তুলে নিলেন কাঁধে। বাংলার ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত রচিত হল।

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৪৬

Sourced by the ABP

শনিবারই জানা গিয়েছিল যে, খেলা হবে না। তার পরও রবিবার কলকাতা ময়দানের তিন প্রধানের সমর্থকরা নিজের নিজের দলের পতাকা হাতে পৌঁছলেন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। শতাব্দীপ্রাচীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভুলে তাঁরা একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে, পরস্পরের পতাকা হাতে আরজি কর-কাণ্ডের ন্যায়বিচার দাবি করলেন। মোহনবাগানের সমর্থক ইস্টবেঙ্গলের সমর্থককে তুলে নিলেন কাঁধে। বাংলার ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত রচিত হল। সেই ইতিহাসের শরিক হতে পারত রাজ্য প্রশাসনও— সংবিধান মেনে নাগরিকের প্রতিবাদের অধিকারকে স্বীকার করে নিয়ে। তার বদলে কলকাতা পুলিশ ডুরান্ড কাপ কর্তৃপক্ষকে জানাল যে, বড় ম্যাচ পরিচালনা করার মতো পুলিশের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে ম্যাচ বাতিল হল। তার পরও রবিবার সমর্থকরা যুবভারতীতে জমায়েতের সিদ্ধান্ত বজায় রাখায় শেষ পর্যন্ত যে পরিমাণ পুলিশ সেখানে মোতায়েন করা হল, তাতে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে— এর সিকি ভাগ পুলিশেই যেখানে বড় ম্যাচের আয়োজন হয়ে যায়, সেখানে ম্যাচ পরিচালনায় অক্ষমতা প্রকাশ করলেন কেন পুলিশ কর্তৃপক্ষ? শাসকের মনে ভয় যাতে তৈরি হয়, প্রতিবাদ কর্মসূচি সে জন্যই। কিন্তু, সে রাজনৈতিক ভয় যদি প্রশাসনের মধ্যেও চারিয়ে যায়, তবে সেই প্রশাসনের মেরুদণ্ড নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। পুলিশের দায় দেশের সংবিধানের প্রতি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রতি— রাজনৈতিক শাসকদের ভীতি দূর করার দায়িত্ব পুলিশের নয়। শাসকরা সে কাজ করতে বাধ্য করলে তা প্রতিরোধ করা পুলিশের কর্তব্য ছিল। না কি, শাসকদের স্বার্থরক্ষার অভ্যাসটি পুলিশের এমন মজ্জাগত হয়েছে যে, তার জন্য আর পৃথক নির্দেশেরও প্রয়োজন পড়ে না?

ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান খেলা বাঙালির ঐতিহ্যের অঙ্গ— সেই পরিসরটিকেই প্রতিবাদের জন্য বেছে নেওয়ার মধ্যে কল্পনাশক্তির পরিচয় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে একটি কথা মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন— যে তিনটি দলের সমর্থকরা রবিবার একজোট হয়ে প্রতিবাদ করলেন, সেই দলগুলি, অন্তত ঐতিহাসিক ভাবে, বিভিন্ন পরিচিতির ধারক। ইস্টবেঙ্গল পূর্ববঙ্গ থেকে আগত মানুষদের ক্লাব হিসাবে পরিচিত; মহমেডান স্পোর্টিংয়েরও জন্ম হয়েছিল ধর্মীয় পরিচয়ে মুসলমানদের ক্লাব হিসাবে। মোহনবাগানের পরিচিতিও মূলত পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের পছন্দের ক্লাব হিসাবে। এ কথা অনস্বীকার্য যে, এর কোনও পরিচিতিকেই একমাত্র সত্য বলে ধরে নেওয়ার কোনও কারণ নেই। কিন্তু এ কথাও সত্য যে, ক্লাবের সমর্থকদের সিংহভাগ এখনও এই পরিচিতিগুলির প্রতি নিষ্ঠাবান— এবং, এই পরিচিতি দলগুলির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি বিশেষ উপাদান। রবিবারের প্রতিবাদ প্রমাণ করল যে, বিভিন্ন বিরুদ্ধ পরিচিতি থেকেও মানুষ উত্তীর্ণ হতে পারে ভিন্নতর সম্মিলিত পরিচিতিতে। এই উত্তরণেই মনুষ্যত্বের জয়। তবে, এই প্রসঙ্গে একটি কথা মনে করিয়ে দেওয়া যায়। কলকাতার ফুটবল-গ্যালারিগুলি লিঙ্গসাম্যের প্রশ্নে উদাহরণ-সদৃশ নয়। অভিজ্ঞরা জানেন, প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যালারি থেকে পরস্পরের উদ্দেশে যে সুভাষিতাবলি ভেসে আসে, সেগুলির মধ্যে নারীবিদ্বেষ প্রকট। এক নারীর বিরুদ্ধে ঘটা অন্যায়ের প্রতিবাদে, শহরকে মেয়েদের জন্য নিরাপদতর করার দাবিতে সেই সমর্থকরা যখন এক সঙ্গে পথে নামতে পেরেছেন, তাঁরা কি নিজেদের ‘স্বাভাবিক’ আচরণের সেই অস্বাভাবিকতাকেও সংশোধন করে নিতে পারেন না?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

R G Kar Medical College and Hospital East Bengal Mohun Bagan Mohammedan SC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy