E-Paper

হাতছাড়া

আয়নি ২০১২ সালে ভারতের ‘কানেক্ট সেন্ট্রাল এশিয়া’ নীতির সঙ্গে খাপ খায়, যা ছিল এই অঞ্চলের সঙ্গে অর্থনৈতিক, জ্বালানি এবং নিরাপত্তা সম্পর্ক আরও গভীর করার লক্ষ্যে একটি রূপরেখা।

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৫ ০৬:৪১

আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির সমীকরণে আজকাল ভারতের লাভের তুলনায় লোকসানের অঙ্কই বেশি। সেই লোকসানের তালিকায় এ বার যুক্ত হল তাজিকিস্তানের আয়নি বিমানঘাঁটি। সম্প্রতি মধ্য এশিয়ার রাষ্ট্রটি এই বিমানঘাঁটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করল, যার ফলে কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনায় ভারতের প্রায় দুই দশকের উপস্থিতির অবসান ঘটল। আয়নির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক শুরু হয় ২০০০ সালের গোড়ার দিকে, যখন বিশ্ব জুড়ে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের আবহ তুঙ্গে। ২০০২ সালে, নয়াদিল্লি এবং দুশানবে ঘাঁটিটির সংস্কার এবং যৌথ ভাবে পরিচালনার জন্য একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা ভারতের প্রথম এবং একমাত্র বিদেশি সামরিক স্থাপনা হয়ে ওঠে। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী আফগানিস্তানের ওয়াখান করিডরের নজরদারির মধ্যে এ ভাবেই ভারত একটি বিরল অনুকূল অবস্থান পেয়েছিল। সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সমন্বয়ের জন্য একটি আদর্শ কেন্দ্র তৈরি ছাড়াও এই অঞ্চলে পাকিস্তানের প্রভাবের বিরুদ্ধে শক্তিশালী করেছিল ভারতের অবস্থানকেও।

সামরিক পরিসরের বাইরে, আয়নি ২০১২ সালে ভারতের ‘কানেক্ট সেন্ট্রাল এশিয়া’ নীতির সঙ্গে খাপ খায়, যা ছিল এই অঞ্চলের সঙ্গে অর্থনৈতিক, জ্বালানি এবং নিরাপত্তা সম্পর্ক আরও গভীর করার লক্ষ্যে একটি রূপরেখা। আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহণ করিডর (আইএনএসটিসি) এবং ইরানে চাবাহার বন্দরের মতো প্রকল্পের মাধ্যমে, বিস্তৃত স্থল ও সামুদ্রিক সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলে মধ্য এশিয়ায় প্রবেশে পাকিস্তানের বাধা অতিক্রম করার চেষ্টা করেছিল ভারত। তবে এই পদক্ষেপ শেষ পর্যন্ত ইউরেশীয় ভূ-রাজনীতি দিয়ে প্রভাবিত হওয়ার পথটিও প্রশস্ত করে। ২০২১ সালের মধ্যে তাজিকিস্তান ভারতকে জানিয়ে দেয় যে, ২০২২ সালের পরে ইজারা পুনর্নবীকরণ হবে না। ২০২২-এ ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর, চিনের উপর মস্কোর নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়, যা ইউরেশীয় কূটনীতির কৌশলগত হিসাবকে নতুন করে রূপদান করে। বস্তুত, মস্কো এবং বেজিং তাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংহতিকে অগ্রাধিকার দিতে দুশানবেকে চাপ দেয় বলেই অনুমান। তাজিকিস্তানে ভারতের স্বাধীন ঘাঁটিকে কূটনৈতিক প্রতিবন্ধকতা হিসেবেই দেখে রাশিয়া। তাই ‘আঞ্চলিক পুনর্বিন্যাস’-এর আড়ালে নীরবে এটি অপসারণের আহ্বান জানায় তারা। অন্য দিকে, সংবেদনশীল পশ্চিম সীমান্তের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে ভারত-পরিচালিত বিমানঘাঁটি বেজিংয়ের ক্ষেত্রে একটি সুপ্ত নজরদারির ঝুঁকির সম্ভাবনা বৃদ্ধি করছিল। এমতাবস্থায়, আয়নিতে ভারতের প্রবেশাধিকার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত পূর্বনির্ধারিত ছিল বলেই মনে করছেন অনেকে।

বাস্তবিকই, আয়নি বিমানঘাঁটি ছিল দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে ভারতের বৃহত্তর কৌশলগত ভূমিকা পালনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতীক। তবে, ২০২১ সালে তালিবানের পুনরুত্থান এবং ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক গতিশীলতা ঘাঁটির গুরুত্ব হ্রাস করে। ইজারার পুনর্নবীকরণ না হওয়ায়, মধ্য এশিয়ায় সামরিক উপস্থিতি কার্যত শেষ হল ভারতের। সে ক্ষেত্রে এই অঞ্চলে ভারতের পরবর্তী পদক্ষেপগুলিই নির্ধারণ করবে যে, এই প্রত্যাহার একটি অস্থায়ী বিন্যাস না কি দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত শূন্যতা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Tajikistan air force

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy