E-Paper

বনাম

কেন্দ্রে বিজেপি জমানায় সম্প্রতি অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি যে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে কমবেশি সরব হয়েছে, তাতে তামিলনাড়ু বরাবরই সবার আগে।

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৫ ০৫:৩১

তামিলনাড়ুতে গত সপ্তাহে মাত্র আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে ভাষা-দ্বৈরথ নিয়ে যা হল, তাকে রসিকতা বলা হবে, না কি ভাষা-রাজনীতির নতুন এক মোড়, ভেবে দেখার মতো। প্রথমে খবর ছড়িয়ে গেল যে, মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের বাড়িতে জরুরি সভা হচ্ছে, ডিএমকে সরকার খুব সম্ভবত রাজ্য জুড়ে হিন্দি ‘নিষিদ্ধ’ করতে বিল আনবে। বিলের ভাবনা সত্যি কি না, সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে সরকারপক্ষের এক নেতা আবার হ্যাঁ বা না কিছুই বললেন না, স্রেফ এটুকু হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া ছাড়া যে, রাজ্য সরকার সংবিধান-বিরোধী কিছু করবে না। জল্পনা আরও ওস্কালো বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি রাজ্য সভাপতির এই সমাজমাধ্যম-বার্তায়: অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যেখানে গুগল-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজ্যে এআই ডেটা সেন্টার গড়ছেন, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী সেখানে হিন্দি নিষিদ্ধ করার বিল ভাবছেন! এর পরেই খবর ছড়িয়ে পড়ে, স্ট্যালিন সরকার তামিলনাড়ু জুড়ে হোর্ডিং, বোর্ড ইত্যাদিতে হিন্দি ভাষা নিষিদ্ধ করবে, এমনকি কোপ পড়বে হিন্দি গান ও ছবিতেও।

দু’দিন না যেতেই ডিএমকে সরকারের ‘ফ্যাক্টচেক ইউনিট’ জানিয়েছে যে, এই সবই ভুয়ো খবর, হিন্দি নিষিদ্ধ করার কোনও বিল বিধানসভায় প্রস্তাবের কোনও ব্যাপার নেই। তা হলে জল্পনা-কল্পনার শুরুতেই ভুয়ো খবরের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হল না কেন? তামিলভূমে তামিল বনাম হিন্দি ভাষা-রাজনীতির দ্বৈরথ আজকের নয়, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত রাজ্যক্ষমতায় দল ও জমানা-নির্বিশেষে এই দ্বৈরথ কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের অন্যতম মুখ্য নির্ণায়ক। কেন্দ্রে বিজেপি জমানায় সম্প্রতি অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি যে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে কমবেশি সরব হয়েছে, তাতে তামিলনাড়ু বরাবরই সবার আগে। তামিল জাতিসত্তা তথা পরিচয়ের রাজনীতিতে ভাষার গুরুত্ব তাদের যেমন জানা, তেমনই প্রয়োগও: এ বছর মার্চে রাজ্য বাজেটের লোগো-তে তারা জাতীয় মুদ্রার প্রতীক পরিবর্তন করে তামিল অক্ষর ‘রু’ ব্যবহার করেছিল, তা নিয়েও বিজেপি কম হইচই করেনি। ডিএমকে সরকার তখন মুখের উপর বলেছিল, বিজেপি জাতীয়তার নামে আসলে যেখানে হিন্দি চাপিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর, তার বিরুদ্ধে এবং তামিল ভাষা-সংস্কৃতির প্রচার ও মর্যাদা বাড়াতেই তাদের এই প্রতীকী কাজ।

বিজেপিও সম্ভবত জানে যে, কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েন যতই থাক, জাতীয় প্রতীক পাল্টে দেওয়া বা জনপরিসরে হিন্দি ভাষা নিষিদ্ধ করার মতো কাজ ডিএমকে বা অন্য কোনও সরকার করবে, সে সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ, কার্যত অনুপস্থিত। কিন্তু রাজনীতির স্বাভাবিক নিয়মই এই, হাতের কাছে যখন যে ‘অস্ত্র’ মজুত তার মোক্ষম প্রয়োগ। সাম্প্রতিক ঘটনাটিতে একটি প্রস্তাবিত বিলের সামান্য জল্পনাই যে ভাবে পল্লবিত হয়ে মূলধারার রাজনৈতিক বিরোধিতার অস্ত্র হয়ে উঠল, তা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না— বিজেপির হিন্দি নিয়ে বাড়াবাড়ি আর অ-বিজেপি রাজ্যের হিন্দি-বিরোধিতার এই দ্বৈরথ আগামী দিনেও তামিলভূমে বড় ভূমিকা নেবে। পাশাপাশি এ-ও বোঝা জরুরি যে, ডিএমকে সরকারও এই ঘটনা থেকে ‘ফয়দা’ তোলার চেষ্টা করেছে— হিন্দি প্রতিরোধে বিধানসভায় বিল আনা হচ্ছে এমন জল্পনা-কল্পনা হাওয়ায় ভাসিয়েও ভাষিক-রাজনৈতিক সমর্থন নিজেদের দিকে টেনে আনা বিলক্ষণ সম্ভব। ভবিষ্যতে কী হয়, তা-ই দেখার।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Tamil Hindi Bill DMK BJP

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy