E-Paper

রঙিন হুল্লোড়

সম্প্রতি বন দফতরের তরফে সোনাঝুরির হাটে দোল খেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রচারও শুরু হয়েছে।

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৫ ০৭:০৩

উৎসব মানে কি শুধুই ভাবনাহীন হুল্লোড়? কিছু বছর আগেও বাংলায় উৎসবের এমন চেহারা কল্পনাতেও আনা যেত না। এখন যায়। সে উৎসবের সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্ক নেই, মানুষেরও প্রাণের টান নেই। আছে শুধু এক শ্রেণির অন্তঃসারশূন্য কোলাহল। তাই এর হাত থেকে উৎসবের সুরটি, সর্বোপরি পরিবেশকে বাঁচিয়ে রাখতে বাকিদের এগিয়ে আসা জরুরি। যেমন, সম্প্রতি বন দফতরের তরফে সোনাঝুরির হাটে দোল খেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রচারও শুরু হয়েছে। বনাঞ্চলের মধ্যে এমন উৎসব পালনে পরিবেশের যে অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে, সেই আশঙ্কাকে মাথায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত বলিষ্ঠ, তদর্থে প্রশংসার্হ। পরিবেশের প্রশ্নে দোল, শান্তিনিকেতন এবং বসন্তকালের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অপ্রয়োজনীয় আবেগ ও যুক্তিহীন হুল্লোড়প্রিয়তাকে তা প্রশ্রয় দেয়নি।

এই সিদ্ধান্তের পিছনের কারণটি স্পষ্ট। শান্তিনিকেতনের সঙ্গে বসন্ত উৎসবের সম্পর্ক গভীর। দোল উৎসবকে সামনে রেখে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আগমন ঘটত রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত এই শহরে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিশ্বভারতীতে দোলের দিন বড় আকারে বসন্ত উৎসব আয়োজিত হয়নি। পরিবর্তে শান্তিনিকেতন প্রাঙ্গণে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, তাতে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। এ বছরও সেই সিদ্ধান্তই নিয়েছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বিশ্বভারতীর দ্বার বন্ধ থাকায় গত বছর পর্যটকদের এক বৃহৎ অংশ ভিড় জমিয়েছিলেন বোলপুরের অন্যত্র, বিশেষত সোনাঝুরির হাটে। সে অভিজ্ঞতা স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে সুখের হয়নি। পর্যটকদের মাঠ জুড়ে ছড়িয়ে আসা আবর্জনায় নাভিশ্বাস উঠেছিল পরিবেশের। ঠিক যেমনটি প্রতি বছর শীতের দিনে কলকাতা ময়দানের অবস্থা দাঁড়ায়। শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরির হাটের একদা পরিচিতি ছিল প্রকৃতির মাঝে স্থানীয় মানুষদের হাতের ছোঁয়ামাখা জিনিসপত্রের বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে। সেই মাটির সুঘ্রাণটি বহু দিনই উধাও। সপ্তাহান্তের মাঠ এখন রীতিমতো বাণিজ্যকেন্দ্র, প্রায় প্রতি দিনই অগণিত ক্রেতার পদস্পর্শে ধূলিধূসর। তদুপরি, দোল উৎসবে অতিরিক্ত জনসমাগম হলে পরিবেশের যে কী দশা হত, তা ভাবলে আতঙ্ক জাগে। আশা, সাম্প্রতিক নির্দেশ বাসিন্দাদের কিছু স্বস্তি জোগাবে। একই যুক্তিতে এই বছর দক্ষিণ কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর চত্বরে দোল খেলা, অনুষ্ঠান ও অতিরিক্ত জনসমাগম বন্ধের দাবিতে পরিবেশপ্রেমীরা যে পথে নেমেছেন, তাঁদের বার্তাটিও শোনা প্রয়োজন প্রশাসনের।

দোল রঙের উৎসব। পরিবেশের রঙে রং মিশিয়ে তার মূল চরিত্রটি অক্ষুণ্ণ রাখতে আপত্তি কোথায়? কেন পলাশ ছিঁড়ে, যত্রতত্র রঙের প্যাকেট ফেলে, উন্মুক্ত চত্বরে অনুষ্ঠানের নামে আবর্জনা ছড়িয়ে এই দিন উদ্‌যাপন করতে হবে? কেন উৎসবের নামে যথেচ্ছ পরিবেশ ধ্বংসকে রুখতে প্রতি বার আদালতকে নির্দেশ জারি করতে হবে? এ তো যে কোনও দেশের সভ্য নাগরিকের দায়িত্ব। নাগরিককে মনে রাখতে হবে উৎসব সকলের। জোর করে অনিচ্ছুকের গায়ে রং ঢেলে, অবলা জীবদের রং মাখিয়ে যথেষ্ট আনন্দ করা হয় না। উৎসবের রং খুঁজে নিতে হয় পরিপার্শ্ব থেকেই। সেটাই চিরস্থায়ী। যাঁরা এই সামান্য কথাটুকু মনে রাখতে পারেন না, তাঁদের মনে করানোর দায়িত্বটি প্রশাসনের। দুর্ভাগ্য, রাজনীতির রং খুঁজতে ব্যস্ত প্রশাসন নিজেও সে কথা মনে রাখেনি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Holi Holi Festivals

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy