E-Paper

বিপজ্জনক

প্রশ্ন শেষ অবধি সাধ্বী প্রজ্ঞাকে নিয়ে নয়, তাঁর দল ও সরকারকে নিয়ে। তাঁর বিরুদ্ধে জারি থাকা আইনি প্রক্রিয়া, শাস্তির ভয় বা সকল সমালোচনাকে নস্যাৎ করে তাঁর নীতিবহির্ভূত, সভ্যতা-বিরুদ্ধ এবং আইনলঙ্ঘনকারী আগ্রাসী স্বভাবের কারণ নিহিত দলেরই প্রচ্ছন্ন অথচ জোরালো সমর্থনে।

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৫ ০৫:১১

দেড় দশকেরও বেশি টানাপড়েনের পর এ বছরেরই জুলাইয়ে মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলা থেকে নিষ্কৃতি পান প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর। কারণ, যে মোটরবাইকে বোমা রাখা ছিল, সেটি যে প্রজ্ঞারই, তার পক্ষে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ মেলেনি। নেত্রী বলেছিলেন, এই পাকেচক্রে তাঁর জীবনটাই শেষ হয়ে গিয়েছে, তাঁকে ঘোর নির্যাতন ও অপমান সহ্য করতে হয়েছে। সুহৃদদের তাঁকে স্মরণ করানো জরুরি ছিল, সন্দেহের বৃত্তে আসার মূলে তাঁর খরবাক্য ও অসংযত আচরণও কম দায়ী নয়। তিনি ঘৃণা ও হিংসার উস্কানিমূলক মন্তব্য করেই চলেছেন যা আদতে সন্ত্রাসেরই বীজবপক। অক্টোবরের শুরুতে ভোপালে এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তিনি হিন্দু মেয়েদের শাসন করার নয়া অনুশাসন জারি করেছেন। বাবা-মাকে বলেছেন, মেয়েরা অহিন্দুদের বাড়ি গেলে, অন্য ধর্মে বিয়ে করলে তাদের পা ভেঙে দিন। মূল্যবোধ না মানলে শাস্তি প্রাপ্য।

ধর্মনিরপেক্ষ দেশে, গণতান্ত্রিক সমাজের মধ্যে থেকে ব্যক্তির অধিকারের পরিপন্থী এমন কথা কেউ কী ভাবে বলেন, এই বিস্ময় অন্য কারও ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে, সাধ্বী প্রজ্ঞার ক্ষেত্রে এই প্রশ্ন তোলা চলে না। তিনি প্ররোচনামূলক কথাবার্তার জন্যই সুবিদিত। আগে, যখন তিনি মালেগাঁও-মামলায় জর্জরিত, সেই সময়েও, কর্নাটকে এক কট্টরপন্থী সংগঠনের মঞ্চ থেকে বলেছিলেন, ঘরে অস্ত্র রাখা উচিত। অন্তত আনাজ কাটার ছুরিতে শাণ দিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। যুক্তি, আত্মরক্ষার অধিকার সকলেরই আছে। একই মঞ্চ থেকে ভিন ধর্মে বিয়ে নিয়েও সরব হয়েছিলেন এবং পাপীদের শাস্তি দেওয়ার নিদান দিয়েছিলেন। অতএব, নারীদের প্রতি হিংসাকে তিনি অতিসাধারণ, উচিত এবং নৈমিত্তিক বিষয় বলে মনে করেন, তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি রূপে প্রচার করেন, সমাজে তার অনুশীলনও চান। সর্বতোভাবে দাঙ্গাবিক্ষোভের প্রতিই তাঁর উৎসাহ। পুলিশ এফআইআর দায়ের করলেও প্রজ্ঞা শেষ পর্যন্ত এই উক্তির জন্য কতখানি মুশকিলে পড়েছিলেন, তা স্পষ্ট হয়নি বলেই রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এ মুহূর্তে সাধ্বী প্রাক্তন সাংসদ হলেও ২০১৯-এ যখন তিনি অভিযুক্ত হিসাবে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে, তখন বিজেপি তাঁকে ভোপালে সাংসদ পদে টিকিট দিয়েছিল। অর্থাৎ, পাশে দাঁড়ানোর বার্তাই ছিল প্রকট।

সুতরাং প্রশ্ন শেষ অবধি সাধ্বী প্রজ্ঞাকে নিয়ে নয়, তাঁর দল ও সরকারকে নিয়ে। তাঁর বিরুদ্ধে জারি থাকা আইনি প্রক্রিয়া, শাস্তির ভয় বা সকল সমালোচনাকে নস্যাৎ করে তাঁর নীতিবহির্ভূত, সভ্যতা-বিরুদ্ধ এবং আইনলঙ্ঘনকারী আগ্রাসী স্বভাবের কারণ নিহিত দলেরই প্রচ্ছন্ন অথচ জোরালো সমর্থনে। হিন্দুত্ববাদী হিংসার স্রোত এখন আর ‘চোরা’ নয়, রীতিমতো প্রকট— তারই প্রমাণ যোগী ও সাধ্বীরা। ভিন ধর্মাবলম্বীদের চোখরাঙানোর বিষয়ে এই দেশে যাঁরা একেবারে সমান সমান। দলের আশ্বাস ও পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই ঔদ্ধত্য সম্ভব নয়। ‘সন্ত্রাসের মুখ’ বলে পরিচিত সাধ্বীকে নির্বাচনে টিকিট না দেওয়াই যথেষ্ট নয়, প্রকাশ্যে কড়া অবস্থান না দেখালে এই দ্বেষের রাজনীতির প্রতি শাসকের নীরব সম্মতিই প্রকাশ পায়। এই হিংসাত্মক মনোবৃত্তি সমাজের পক্ষে ধ্বংসাত্মক, এবং দেশ ও সভ্যতার পক্ষে ঘোর বিপদ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

BJP Sadhvi Pragya NDA

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy