E-Paper

নেশামুক্তি

বিল পাশের অব্যবহিত পরেই বেশ কিছু জনপ্রিয় অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্ম ভারতে তাদের আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত গেমগুলি বন্ধের কথা ঘোষণা করেছে। লক্ষণীয়, এই ‘নিষিদ্ধ’ তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে বিনোদন এবং শিক্ষামূলক গেমগুলিকে।

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৫:১১

টাকা দিয়ে অনলাইন গেম খেলা যাবে না— এই মর্মে সম্প্রতি সংসদের উভয় কক্ষেই পাশ হয়ে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর-সহ আইনে পরিণত হয়েছে ‘দ্য প্রোমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অব অনলাইন গেমিং অ্যাক্ট, ২০২৫’। উদ্দেশ্য, অনলাইন গেমে টাকা দিয়ে বাজি ধরা বা জুয়া খেলাকে নিষিদ্ধ করা। অতঃপর কেউ টাকা দিয়ে অনলাইনে গেম খেলার ব্যবস্থা করলে বা আর্থিক লেনদেনে যুক্ত হলে তিন বছর পর্যন্ত জেল এবং এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার ব্যবস্থা করা হবে। এমনকি এর বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেও দু’বছর পর্যন্ত জেল ও ৫০ লক্ষ টাকার জরিমানা করা হবে। প্রয়োজনে আদালতের পরোয়ানা ছাড়াই তল্লাশি, গ্রেফতারির ক্ষমতাও দেওয়া হবে তদন্তকারী সংস্থাকে। বিল পাশের অব্যবহিত পরেই বেশ কিছু জনপ্রিয় অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্ম ভারতে তাদের আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত গেমগুলি বন্ধের কথা ঘোষণা করেছে। লক্ষণীয়, এই ‘নিষিদ্ধ’ তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে বিনোদন এবং শিক্ষামূলক গেমগুলিকে। বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে এক সুস্পষ্ট বিভাজন করে দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত গেম-এর প্রচার এবং প্রসারে সহযোগিতা করবে কেন্দ্রীয় সরকার।

মনে রাখতে হবে, অনলাইন গেম শুধুমাত্র নাগরিক বিনোদনের অঙ্গ নয়। বরং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির অর্থনীতিও ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত। ভারতের ক্ষেত্রে যেমন অনলাইন গেম শিল্পটি দু’লক্ষ কোটি টাকার। প্রতি বছর কেন্দ্রীয় সরকারকে কুড়ি হাজার কোটি টাকার অধিক কর দেয় এই শিল্প। গত পাঁচ বছরে এ দেশে অনলাইন গেমারের সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনই এই প্ল্যাটফর্ম যথেষ্ট পরিমাণ বিদেশি লগ্নিও আকর্ষণ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টিকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধকরণের বিরোধিতা করেছিল শিল্পমহল। বিরোধী রাজনীতি এবং বিশেষজ্ঞদের একাংশও নিষিদ্ধ করার পরিবর্তে আইনি পথে নিয়ন্ত্রণ করার পক্ষেই মত দিয়েছিলেন। যুক্তি ছিল, এর ফলে এই শিল্পে এক বিপুল সংখ্যক কর্মহীনতার পাশাপাশি আইনের নজর এড়িয়ে অবৈধ আর্থিক লেনদেনে যুক্ত হবেন ব্যবহারকারীরা। অন্ধকার জগতের নিয়ন্ত্রণ বাড়বে, কেন্দ্র তার প্রাপ্য বঞ্চিত হবে, কিন্তু সামাজিক অ-সুখটি সারবে না।

যুক্তিটি উপেক্ষণীয় নয়। কিন্তু রোগ যখন জটিল হয়, এবং সমাজের এক বিশাল অংশকে অতি দ্রুত আচ্ছন্ন করে ফেলতে সক্ষম হয়, তখন শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রণ আরোপ যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন, সমগ্র বিষয়টিকে এক সুস্পষ্ট আইনি পরিকাঠামোর মধ্যে এনে বিপজ্জনক অংশটির সম্পূর্ণ নিষিদ্ধকরণ এবং পরবর্তী সময়ে সে ক্ষেত্রে কঠোর নজরদারি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যেই এই অভ্যাসকে মানসিক অসুখের সঙ্গে তুলনা করেছে, এবং পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি পাঁচ জন গেমারের মধ্যে এক জন ভারতীয়। আশ্চর্য নয়, শিক্ষা এবং উপযুক্ত কর্মসংস্থানের অভাবে জর্জরিত এ দেশের যুব সম্প্রদায় এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনলাইন গেমের নেশা মাদকের মতো বিস্তার লাভ করেছে। নিজেকে সুরক্ষিত রাখার উপযোগী ডিজিটাল শিক্ষাও এঁদের নেই। ইতিমধ্যে অনেকেই কম সময়ে অর্থ উপার্জনের প্রলোভনে পা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। আত্মহননের ঘটনাও ঘটেছে। নাগরিকদের এই অংশটির সুরক্ষা নিশ্চিত করা, প্রয়োজনে অর্থনৈতিক লাভের ঊর্ধ্বে সামাজিক কল্যাণকে স্থাপন করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব বইকি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Economy New Bill

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy