E-Paper

অভাব

২০২৪-এর তথ্যমতে, কলকাতা পুলিশে ৩৭ হাজারের কিছু বেশি এবং রাজ্য পুলিশে ৭৯ হাজারের কিছু বেশি পুলিশকর্মী নিযুক্ত।

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৫ ০৫:০৯

নেই-রাজ্য ও নৈরাজ্যের মধ্যে সম্পর্কটি যে গলাগলির, একটি সরকারের ক্ষেত্রে তা বোঝার কিছু লক্ষণ আছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে একটি যেমন— যথেষ্ট পুলিশকর্মীর অভাব। শুনে মনে হতে পারে, কলকাতায় নানা নাগরিক দাবিদাওয়ার মুখে যে ভাবে পুলিশের লাঠি ও প্রহার নেমে আসছে, তাতে আরও বেশি পুলিশে চাকরি মানে তো নাগরিক-পীড়নেই প্রশ্রয়। পুলিশকে একদা শান্তিরক্ষক বলা হত কিন্তু সরকারের আজ্ঞাবহ রূপে তাদের কথা ও কাজ এখন অশান্তিবর্ধক, এই অপ্রিয় সত্য মনে রেখেও এ কথাটি বলার: যথেষ্ট পুলিশকর্মী থাকলে তবেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজটি ঠিকঠাক করা সম্ভব, এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো জনবহুল রাজ্যের ক্ষেত্রে এই প্রয়োজন নির্বিকল্প। অথচ ব্যুরো অব পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (বিপিআরডি)-এর ২০২২-এর তথ্য দেখিয়ে ২০২৩-এ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছিল, প্রতি লক্ষ নাগরিক-পিছু পুলিশকর্মীর সংখ্যায় পশ্চিমবঙ্গ দেশের পিছনের সারির রাজ্যগুলির একটি। ২০২৪-এর তথ্যমতে, কলকাতা পুলিশে ৩৭ হাজারের কিছু বেশি এবং রাজ্য পুলিশে ৭৯ হাজারের কিছু বেশি পুলিশকর্মী নিযুক্ত। রাজ্যের প্রায় সাড়ে দশ কোটি জনসংখ্যার নিরিখে অনুপাতের হিসাবটি কষলে চরম লজ্জায় পড়তে হবে।

এই লজ্জা কার? অন্তত রাজ্য সরকারের বলে মনে হচ্ছে না, কারণ তৃণমূল আমলে পুলিশকর্মীর একটি ‘বিকল্প’ এখন প্রায় প্রতিষ্ঠিত— সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়ার নিয়োগ। মুখ্যমন্ত্রী প্রায়ই যে রাজ্যের কোষাগারে টাকা না থাকা, রাজ্য সরকারি কর্মীদের কষ্টেসৃষ্টে মাইনে দিতে জোগানোর কথা জনসমক্ষে বলেন, সিভিক ভলান্টিয়ার সেই টানাটানির সংসারে অনন্য আবিষ্কার: তাতে নামমাত্র বা বিনা প্রশিক্ষণে প্রচুর লোকের নিয়োগ তথা কর্মসংস্থান হয়, পুলিশের চাপ কমে; সবচেয়ে বড় কথা, সরকারের অর্থসাশ্রয় হয়। এক সমাজকর্মীর আরটিআই-আবেদন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮-২০২৪ সময়কালে কলকাতা ও রাজ্য পুলিশ মিলিয়ে পুলিশকর্মী নিয়োগ হয়েছে মাত্র ৩৮ হাজারের কিছু বেশি; রাজ্যে সিভিক ভলান্টিয়ারের সংখ্যা সেখানে প্রায় ১ লক্ষ ২৪ হাজার!

স্পষ্টতই এ রাজ্যে ‘প্রকৃত’ পুলিশকর্মী নিয়োগে এক বিরাট ঘাটতি থেকে যাচ্ছে, বিশেষজ্ঞদের মতে যা রাজ্যের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলতে বাধ্য। তার কয়েকটি ভয়াবহ মাত্রার নমুনাও চোখের সামনে: আর জি কর কাণ্ডে অভিযুক্তের পরিচয় প্রাক্তন সিভিক ভলান্টিয়ার; সম্প্রতি এক সিভিক ভলান্টিয়ার কসবা থানার এক পুলিশকর্মীর উর্দি চুরি করে পুলিশ সেজে নাগরিকদের হেনস্থা করছিল। সিভিক ভলান্টিয়ার মাত্রেই আরোপিত ক্ষমতার অপব্যবহারকারী তা নয়, আসল কথাটা সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়েও নয়। বরং এই কথাটিই সত্য: প্রকৃত ও প্রশিক্ষিত পুলিশকর্মী নিয়োগে রাজ্য সরকারের অনিচ্ছা ও দীর্ঘসূত্রতার জেরে বিপর্যস্ত হচ্ছে নাগরিক জীবন ও প্রশাসনও। পুলিশকর্মীদের ‘ডিউটি’র চাপ বাড়ছে, প্রত্যাশারও, কিন্তু তা সামলাতে গেলে গোড়ার যে জিনিসটি দরকার, সেই কর্মিবলই নেই। মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনাসূত্রে কলকাতা হাই কোর্টও সম্প্রতি জোর দিয়ে বলেছে, প্রচুর পুলিশকর্মী নিয়োগের এ-ই হল উপযুক্ত সময়; বিশেষত জেলায় জেলায় পুলিশকর্মীর সংখ্যা অনেক কম। রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী তা শুনতে পেলেন কি?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

police Law and Order High Court Civic volunteer West Bengal Police

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy